হাদিসে নববীর মাঝে লুকিয়ে আছে অমূল্য জ্ঞানভান্ডার। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে অনুপম উপদেশ ও জীবন চলার পথের অনন্য দিকনির্দেশনা। এমনই একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে হারেছ আশআরি (রা.) থেকে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ইয়াহ্ইয়া ইবনু যাকারিয়া (আ.)-কে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন তিনি সে অনুযায়ী আমল করেন এবং বনি ইসরাঈলকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেন। তিনি তদানুযায়ী আমল করতে বিলম্ব করছিলেন, তখন ঈসা (আ.) তাকে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আপনি সে অনুযায়ী আমল করেন এবং বনি ইসরাঈলকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেন। আপনি তাদেরকে নির্দেশ দিন অন্যথায় আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব।
তখন ইয়াহ্ইয়া (আ.) বললেন, আপনি যদি আমার পূর্বে নির্দেশ দেন তাহলে আমি আমাকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেয়ার অথবা আমাকে শাস্তি দেয়ার আশঙ্কা করছি। অতঃপর তিনি লোকদেরকে বায়তুল মাক্বদিসে সমবেত করলেন। মসজিদ ভরে গেলে তারা বারান্দায় বসল।
তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আমি সে অনুযায়ী আমল করি এবং তোমাদেরকে সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দেই।
তন্মধ্যে প্রথমটি হলো- তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপনকারীর উদাহরণ সে ব্যক্তির ন্যায়, যে তার সম্পদের খাঁটি সোনা ও রুপা দিয়ে একটি দাস ক্রয় করে তাকে বলল, এটা আমার ঘর আর এগুলো আমার কাজ। তুমি এ কাজগুলো করবে এবং এর প্রাপ্য আমাকে বুঝিয়ে দেবে। সে কাজ করতে থাকল এবং মালিক ব্যতীত অন্যকে এর সুফলাদি দিতে থাকল। তোমাদের কে খুশি হবে যে তার দাস এরূপ হোক? কারণ আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে রিজিক দেন। অতএব তোমরা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। ২. আল্লাহ তোমাদেরকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা সালাত আদায়কালে এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুখমণ্ডল বান্দার মুখমণ্ডলের দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন যতক্ষণ না বান্দা এদিক-সেদিক তাকায়।
৩. আমি তোমাদেরকে সিয়াম পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। সিয়াম পালনকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি দলের সঙ্গে অবস্থান করছে আর তার সঙ্গে রয়েছে সুগন্ধিযুক্ত একটি থলে। সবাই সেটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে অথবা সেটি সবাইকে তার প্রতি আকৃষ্ট করছে। আর সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ মিশক আম্বরের সুগন্ধি অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অতি পবিত্র।
৪. আমি তোমাদেরকে সদকা করার নির্দেশ দিচ্ছি। সদকাকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির ন্যায়, যাকে শত্রুরা পাকড়াও করে তার ঘাড়ের সঙ্গে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং তাকে হত্যার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার কম-বেশি সমস্ত সম্পদ তোমাদেরকে দিচ্ছি। অতঃপর সে মালের বিনিময়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল (অনুরূপ সদকাকারী সদকা করার মাধ্যমে নিজেকে বিপদমুক্ত করে)।
৫. আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দিচ্ছি। জিকিরকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির ন্যায়, যার শত্রুরা দ্রুততার সঙ্গে তার পিছু ধাওয়া করেছে অতঃপর সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে গমন করে নিজেকে তাদের থেকে রক্ষা করল। তদ্রূপ কোনো বান্দা আল্লাহর জিকর ব্যতীত নিজেকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না।
নবী করীম (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি, যা আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন— (১) জামাতবদ্ধ জীবনযাপন করা, (২) আমিরের নির্দেশ শ্রবণ করা, (৩) তাঁর আনুগত্য করা, (৪) প্রয়োজনে হিজরত করা ও (৫) আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যে ব্যক্তি জামাত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তার গর্দান থেকে ইসলামের গণ্ডি ছিন্ন হলো যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। যে ব্যক্তি মানুষকে জাহেলিয়াতের দাওয়াত দ্বারা আহ্বান জানাল, সে ব্যক্তি জাহান্নামিদের দলভুক্ত হলো। যদিও সে সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন মুসলিম। অতএব তোমরা আল্লাহর আহ্বান দ্বারা আহ্বান কর, যিনি তোমাদেরকে আল্লাহর বান্দা মুমিন-মুসলিম হিসেবে নামকরণ করেছেন।’ (তিরমিজি: ২৮৬৩)
অতএব আসুন, আমরা ইয়াহ্ইয়া বিন যাকারিয়া (আ.)-এর সুন্দর পাঁচটি উপদেশ এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর পাঁচটি উপদেশ আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি। এ উপদেশগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করলে আমরা পৃথিবীতে সফলতা অর্জন করতে পারব এবং পরকালে সুখময় জান্নাত লাভ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ