পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে আসল? এ প্রশ্নে দুই ধরনের মত হতে পারে এক. বিবর্তনবাদ: অর্থাৎ অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষের উৎপত্তি। দুই. এলিয়নবাদ: অর্থাৎ মানুষ এ পৃথিবীর প্রাণী নয়। তাকে অন্য কোনো স্থান থেকে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিবর্তনবাদ ভিত্তিহীন এবং অগ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে আমরা আলোচনা করব এলিয়নবাদ সম্পর্কে এবং পরবর্তীতে দেখব কোনটিকে আল-কোরআন স্বীকৃতি দিচ্ছে।
২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আমেরিকান পরিবেশবিদ ড. এল্লিস সিলভার ‘হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করেন যে, মানুষ এই পৃথিবীর এলিয়ন অর্থাৎ অন্য কোনো স্থান থেকে পৃথিবীতে আনা হয়েছে।
এল্লিস সিলভারের দাবি হচ্ছে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণী অর্থাৎ পশুপাখি হলো এই পৃথিবীর প্রাণী। কারণ এই পৃথিবীতে বসবাসের জন্য যা যা বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তা শুধু পশুপাখির মধ্যেই রয়েছে, মানুষের মধ্যে নয়। নিম্নে উদাহরণ সহ কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো:
সূর্যের আলো এবং তাপ: আমরা যে সোলার সিস্টেমে বসবাস করি তা পশুপাখির জন্য বসবাস উপযোগী। তিনি বলেছেন, সূর্যের আলো মানুষকে দিনের কিছু অংশে ভিটামিন-ডি দেয় বটে কিন্তু অতিরিক্ত সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি মানুষের শরীরে স্কিন ক্যান্সার তৈরি করে। কিন্তু সূর্যের আলোতে পশুপাখির মধ্যে স্কিন ক্যান্সার তৈরি হয় না। কারণ হলো পশুপাখির গায়ে পশম বিদ্যমান, যা তাদেরকে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং যে সকল পশুর গায়ে পশম নেই তাদের স্কিনটা কালো হয়। যেমন হাতি, ডলফিন, গন্ডার ইত্যাদি। আমরা জানি, যার শরীরে মেলাটিনের পরিমাণ বেশি থাকে তার স্কিন কালো হয় এবং তা শরীরকে ক্ষতিকারক সূর্যের আলোকরশ্মি থেকে রক্ষা করে।
আমরা সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আমাদের চোখে একেবারে সাদা দেখি এবং কিছুক্ষণ পর্যন্ত কিছুই দেখি না বললেই চলে। কিন্তু পশুপাখিদের এ সমস্যা হয় না। ফলাফল এ দাঁড়াচ্ছে যে, মানুষ এই গ্রহের প্রাণী নয়। যদি তাই হতো তাহলে সূর্যের আলো তাদের জন্য ক্ষতিকর হতো না। অপরদিকে পশুপাখি এই গ্রহের প্রাণী বলে সূর্যের আলো তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় (পৃ-১০)।
ঋতুভেদে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি: যখন ঋতু পরিবর্তন হয় তখন মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে পশুপাখির ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের এ ধরনের সমস্যাগুলো হয় না। কিছু কিছু পাখিকে দেখা যায় যে, যখনই ঋতু পরিবর্তন হয় তখন এরা এক স্থান থেকে হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করে এদের উপযোগী কোনো স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করে। আবার ঋতু পরিবর্তন হলে পূর্বের স্থানে ফিরে আসে। যা আমরা আমাদের বাংলাদেশেও দেখতে পাই যে, শীতকালে অতিথি পাখির আগমন। পশুপাখি ঋতুকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করে। দিনের দৈর্ঘ্য বা তাপমাত্রার পরিবর্তন পশুপাখিদের হরমোন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং তাদের ঋতু অনুযায়ী আচরণ করে। সে কারণে, প্রাণীরা সহজাতভাবে জানে যে কখন তাদের সঙ্গম করার, বাসা বাঁধার, দক্ষিণে উড়ে যাওয়ার বা শীতের জন্য খাবার মজুত করার সময়। অর্থাৎ পৃথিবীর এ ঋতুর পরিবর্তনে পশুপাখি নিজেদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে এবং তাদের সে জ্ঞান রয়েছে। ফলে এ ঋতু পরিবর্তন তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় (পৃ-১২)।
রোগবালাই: পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু পশুপাখিকে তেমন রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় না এবং হলেও তা খুবই কম। কারণ হচ্ছে এই গ্রহের পরিবেশটা তাদের জন্য মানানসই (পৃ-৩০)।
উপরে আমরা এল্লিস সিলভারের প্রদত্ত কয়েকটি তথ্য ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করলাম। এসব তথ্যের আলোকে তিনি মত প্রকাশ করেছেন, মানুষ এই পৃথিবীর প্রাণী নয় বরং মানুষকে অন্য কোনো গ্রহ থেকে আনা হয়েছে।
এখন আমরা দেখব আল-কোরআন এ সম্পর্কে কি বলে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা বললাম, হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং সেখান থেকে যা খুশি খাও। কিন্তু তোমরা এই বৃক্ষটির নিকটবর্তী হইও না। তাহলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা বাক্বারা: ৩৫)
আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর শয়তান তাদেরকে ওই বৃক্ষের কারণে পদস্খলিত করল। অতঃপর তারা যে সুখ-শান্তির মধ্যে ছিল সেখান থেকে সে তাদেরকে বের করে আনল। তখন আমরা বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে আবাসস্থল ও ভোগ-উপকরণ সমূহ নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।’ (সুরা বাক্বারা: ৩৬)
আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের ভুলের কারণে তাদেরকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ পৃথিবীতে জান্নাত থেকে মানুষের আগমন ঘটেছে। এল্লিস সিলভার দাবি করেছে অন্য কোনো স্থান থেকে মানুষের আগমন ঘটেছে এবং আল- কোরআন জানিয়েছে মানুষকে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
এক্ষণে আমরা দেখব এল্লিস সিলভারের বর্ণনা মতে, মানুষ যে স্থান থেকে এসেছে তার সঙ্গে জান্নাতের তুলনা কেমন হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সেদিন সুসজ্জিত আসনের ওপর ঠেস দিয়ে বসবে। সেখানে তারা অতি গরম বা অতি শীত কোনোটাই অনুভব করবে না।’ (সুরা ইনসান: ৭৬/১৩)। অর্থাৎ জান্নাতে কোনো ঋতু পরিবর্তন হয় না। জান্নাতে সর্বদা একই রকম আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই ঋতু পরিবর্তনের কারণে মানুষের যে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই হয় তা জান্নাতে হয় না।
আল্লাহ বলেন, ‘বাগিচার বৃক্ষছায়া তাদের ওপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফলমূল সমূহ তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে।’ (সুরা ইনসান: ১৪) অর্থাৎ পৃথিবীতে সূর্যের আলো এবং তাপের কারণ মানুষের যে ক্ষতি হয় তা জান্নাতে হবে না। সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব জান্নাতে থাকবে না।
বিজ্ঞানী এল্লিস সিলভার তার গবেষণার আলোকে দাবি করেছেন, এ পৃথিবীতে মানুষ অসুখী এবং বিষণ্ন কিন্তু পৃথিবীর পশুপাখির এই ধরনের অবস্থা নেই। কিন্তু মানুষ যে স্থান থেকে এসেছে সেখানে এরূপ অবস্থা নেই।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী দিয়ে জান্নাত তৈরি করা হয়েছে? তিনি (সা.) বললেন, সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রুপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাঁথা হয়েছে। এর গাঁথুনির উপকরণ (চুন-সুড়কি-সিমেন্ট) সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কংকরসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফরান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না।’ (তিরমিজি: ২৫২৬)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, ডারউইন বিবর্তনবাদের যে দাবি করেছিল তার কোনরূপ প্রমাণ ডারউইন এবং তার মতবাদের অনুসারীরা পেশ করতে পারেনি। এরপরও তারা এই মতবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে স্রেফ ইসলামকে ঠেকানোর জন্য। অপরদিকে ড. এল্লিস সিলভারের গবেষণায় এটা আরও দৃঢ় হয়েছে যে, মানুষের সৃষ্টি বিবর্তনবাদের মাধ্যমে হয়নি বরং মানুষকে অন্য স্থান থেকে পৃথিবীতে আনা হয়েছে। আর আমরা আল-কোরআনের আয়াত থেকে জানতে পেরেছি যে, মানুষকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রিয় পাঠক! গভীরভাবে চিন্তা করুন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা যত সূক্ষ্ম হচ্ছে তত আল-কোরআনের আয়াত এবং হাদিসসমূহ মানুষের কাছে প্রামাণিক হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মানুষের আগমন যে স্থান থেকে ঘটেছে বলে মত প্রকাশ করছেন সে স্থানের বিবরণের সঙ্গে আল-কোরআনের আয়াত এবং হাদিসে বর্ণিত জান্নাতের বিবরণের মিল পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের যেমন ক্ষমতা নেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার তেমনি ক্ষমতা নেই পৃথিবী থেকে জান্নাতে যাওয়ার। কেবল আল্লাহ তায়ালার সেই ক্ষমতা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এর ঘোষণাও কোরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তাদেরকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দাও, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। যখন তারা সেখানে কোনো ফল খাদ্য হিসেবে পাবে, তখন বলবে, এটা তো সেইরূপ, যা আমরা ইতোপূর্বে পেয়েছিলাম। এভাবে তাদেরকে দেয়া হবে দুনিয়ার সাদৃশ্যপূর্ণ খাদ্যসমূহ। এ ছাড়া তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্রা স্ত্রীগণ এবং সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল।’ (সুরা বাক্বারা: ২৫)
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ