ধৈর্য আদর্শ মানুষের উত্তম চারিত্রিক গুণ। ধৈর্যের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘সবর’। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, সহ্য করার ক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে জীবনের সব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর আদেশগুলো পালন করা। আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাই হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা।
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয় তখন সে সবর করে, আর সবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়।’ (মুসলিম : ২৯৯৯)
দুনিয়াতে সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনা সবার জীবনেই আসে। কিন্তু এ আনন্দ ও কষ্টের মাধ্যমেও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা ওই সব মুমিনের ভাগ্যেই জোটে, যারা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে গভীর ও দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তারা যদি দুঃখ-বেদনা, বিপদ ও দুর্দশায় আপতিত হয় তখন তারা আল্লাহর দরবারে দাসত্বের পূর্ণ শান ও মহিমা নিয়ে সবর করে। এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহরই ইচ্ছায় এই দুঃখ বেদনা, এই বিপদ ও দুর্দশা আমার ওপর এসেছে। আল্লাহই পারেন তা দূর করে দিতে।ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম। আর মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি যে সব অপছন্দনীয় বিষয়বলী ও দুঃখ দুর্দশা পৌঁছে তার ওপর দৃঢ় মনোবল প্রদর্শনই হচ্ছে ধৈর্যের মূলকথা। ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আলে ইমরান : ২০০)
ধৈর্য ধারণকারীর সফলতা সুনিশ্চিত। কারণ আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত। কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা বাকারা : ১৫৩)
কারও কারও মতে, ধৈর্য হচ্ছে মানুষের এমন একটি গুণ, যে কারণে সে অসুন্দর ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি মানুষের একটি আত্মিক শক্তি, যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখাতে পারে। ধৈর্যের মাধ্যমে মানুষ কষ্ট-ক্লেশ, ব্যথা-যন্ত্রণা ও আঘাত সহ্য করতে সক্ষম হয়। কতিপয় ইসলামি স্কলারের মতে, সবর বা ধৈর্য ধারণ হলো ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা। অস্থির না হওয়া, বালা-মুসিবতকে মোকাবিলা করা। আর বালা-মুসিবতকে এমনভাবে মোকাবিলা করা, যাতে এর ফলে ব্যক্তির অন্তর উদ্বেলিত না হয় এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে। পাশাপাশি নিজের জিহ্বাকে অভিযোগ-অনুযোগ করা থেকে বিরত রাখা এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অস্বাভাবিক কাজ থেকে দূরে রাখা।নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ