ঢাকা, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নবীজির উম্মত নয় যারা

প্রকাশনার সময়: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪

নবজাতির জন্য রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে, শেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে। আমরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রহমতের কত শতভাগ পেয়েছি, যেগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না। সে রহমতেরই একটি ভাগ হলো তাঁর বরকতে শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছি।

এমন রহমতের নবীর প্রতি দেহ-মনে, চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে ও বিশ্বাসে সর্বাত্মকভাবে সদাসর্বদা প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শন এবং তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ ঈমানের অন্যতম দাবি। এ দাবি বাদ দিয়ে নবীজি (সা.)-এর উম্মত হওয়া যায় না। তাই তো দেখা যায়, হাদিসের কিতাবাদিতে এমন অনেক কাজের কথা উল্লেখ আছে, যে কাজ সম্পাদনকারীকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মত নয় বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এমন কিছু কাজের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো-

ছোটদের ওপর যে দয়া করে না: মানবশিশু, মানব বাগানের ফুল। সুতরাং তাদের সঙ্গে মন্দ আচরণ ও রাগারাগি করা মানবফুল নষ্ট করার নামান্তর। তাই তো রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের ওপর দয়া করে না, আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না এবং ভালো কাজের আদেশ করে না, আর মন্দ কাজের নিষেধ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি: ১৯২১)

অন্যের মাল আত্মসাৎকারী: ইমরান বিন হোসাইন (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারও মাল ছিনতাই করে, সে আমার উম্মত নয়।’ (ইবনে মাজা: ৩৯৩৭) বোঝা গেল, অন্যের কষ্টার্জিত সম্পদ, তার অগোচরে ছিনতাই করা, চুরি করা, অত্যন্ত জঘন্য একটি গুনাহ। যে কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে উম্মতের লিস্ট থেকে বের করে দিয়েছেন।

স্ত্রীকে যে স্বামীর বিরুদ্ধে উসকে দেয়: স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর মধুর সম্পর্কের মাঝে যে ফাটল ধরানোর জন্য কিংবা স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার জন্য নানাভাবে কাজ করে কিংবা গোলাম ও মনিবের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার জন্য, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করে, তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে উসকে দেয় এবং মালিকের বিরুদ্ধে গোলামকে উসকে দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ২১৭৫)

বিলাপ করে চেহারায় আঘাতকারী: ইবনে মাসুদ সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে (ব্যক্তি শোকে) চেহারায় আঘাত করে এবং (জামার) পোশাক-আশাকের হাত-বুকের স্থান ছিঁড়ে ফেলে কিংবা এবং আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো ডাকাডাকি করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ১২৯৭)

বোঝা গেল, পৃথিবীর ইতিহাসে, এমন একটি সময় গিয়েছে, যখন মানুষ নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত ছিল। যখন ছিল না, সামান্য আলোর আভা ও আভাস। ছিল না আলোকিত কোনো মানুষের বসবাস। মানবতার ওই অন্তিমকালে সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার দয়া হলো, তখনই পৃথিবীবাসীর জন্য অনন্য নিয়ামত নবী মুহাম্মাদের আগমন হলো। তিনি মানুষদেরকে নানা কুসংস্কার ও কুপ্রথা থেকে খুব শক্তভাবে সতর্ক করলেন।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলনকারী: আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৬৮৭৪)

মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণাকারী: আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাদের (মুসলমানদের) সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ১৬৪)

নবীজির জীবনাদর্শ থেকে বিমুখ ব্যক্তি: ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নত (রীতিনীতি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ১৪০১)

অন্যের জিনিস নিজের বলে দাবিকারী: আবুজর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন জিনিসের দাবি করে, যা তার নয়; সে আমার দলভুক্ত নয় এবং সে যেন তার আবাসস্থল জাহান্নাম বানিয়ে নেয়।’ (মুসলিম: ২৩১৯)

সুর করে কোরআন পাঠ না কারী: আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুর করে কোরআন পড়ে না; সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৭৫২৭)

নারী-পুরুষের অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণকারী: মহান আল্লাহ নারী-পুরুষ দুটি জাতিকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, এটা আল্লাহ তায়ালার কুদরতের অনন্য বহিঃপ্রকাশ। এ কুদরতকে যারা অগ্রাহ্য করে নিজের প্রাপ্ত আকৃতিকে অন্য লিঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্যতা গ্রহণ করে, তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে পুরুষ মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, আর যে মহিলা পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৮৭৫)

সুতরাং শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মান আমাদের বজায় রাখতে হবে। রাসুলের (সা.) সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে দ্বীনের ব্যাপারে অবিচল ও সুদৃঢ় থাকতে হবে।

দ্বীনের ব্যাপারে ইস্তিকামাত তথা অবিচল ও সুদৃঢ় থাকা, দ্বীনি সফলতার চাবিকাঠি। দুনিয়ার যত ধরনের পথভ্রষ্টতা ও পাপাচার দেখা যায়, তা সবই দৃঢ়তা থেকে সরে যাওয়ার ফল। ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা থাকা আবশ্যক।

আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘আপনি দ্বীনের পথে দৃঢ়ভাবে সোজা চলতে থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন।’ (সুরা হুদ: ১১২)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা মধুপুর, টাঙ্গাইল।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ