ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

সাহাবিদের মধ্যে কে সবচেয়ে দানশীল?

প্রকাশনার সময়: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৩

তিনজন তাবেয়ী একটি বিষয়ে বিতর্ক শুরু করলেন। বিতর্কের বিষয়- জীবিত সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল কে? একজন বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.)। আরেকজন বললেন, কায়স ইবনে সা’দ (রা.)। তৃতীয়জন বললেন, ‘না, এ দুজনের কেউ না। সবচেয়ে দানশীল হলেন আরাবা আওসি (রা.)।’

তিনজনের বিতর্ক একসময় ঝগড়ায় রূপ নিল। আশপাশের মানুষজন জড়ো হলো। জানতে চাইল তারা কী নিয়ে ঝগড়া করছেন? তারা বললেন, জীবিত সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল কে এ নিয়ে তাদের বিতর্ক। লোকজন পরামর্শ দিল- ‘এক কাজ করুন। এভাবে ঝগড়া করলে তো সমাধান হবে না। আসুন, আমাদের কেউ তাদের পরীক্ষা নিই। গিয়ে দেখি তারা কেমন দানশীল।’

একজন গরিব মুসাফির সেজে আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.)-এর কাছে গেলেন। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ব্যবসায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) একটি ঘোড়ার ওপর ছিলেন। তাকে বলা হলো, ‘আমি একজন মুসাফির। অনেক অভাবে আছি। আমাকে কিছু দান করুন।’ আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) ঘোড়া থেকে নেমে বললেন, ‘এ ঘোড়াটি নিয়ে যান। ঘোড়ার হাওদার ওপর একটি ব্যাগ পাবেন। ব্যাগে একটি চাদর আছে।’

যুবক ঘোড়াটি নিয়ে চলে আসল। ব্যাগে একটি চাদর পেল, সেই রেশমি চাদরের দাম ছিল ৪ হাজার দিনার!

এবার একজন যুবক গেল কায়স ইবনে সা’দ (রা.)-এর বাড়ি। কায়স ইবনে সা’দ ঘুমাচ্ছিলেন। তার দাসী বের হলে যুবক তার অসহায়ত্বের কথা বলল।

দাসী ভাবল, এ সামান্য বিষয়ের জন্য মালিককে ঘুম থেকে তুলতে হবে না। সে একটি থলে দিয়ে বলল, ‘এই থলেতে ৭০০ দিনার আছে। এগুলো নিয়ে যান। আর উটশালা থেকে আপনার পছন্দমত একটি উট নিয়ে যান। আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় একজন ক্রীতদাস নিয়ে যেতে পারেন।’

সাহাবায়ে কেরামের যুগে এক দিনার দিয়ে একটি ভেড়া কেনা যেত। ইসলামের প্রথম যুগের বেশিরভাগ সাহাবির মোহরানা ৭০০ দিনার ছিল না।

যুবক চলে গেল। কায়স ইবনে সা’দ (রা.) ঘুম থেকে উঠে দাসীর কাছে মুসাফিরের ঘটনা শুনে আফসোস করে বললেন, ‘তুমি আমাকে ডাক দিলে না কেন? যা দিয়েছ, তাতে কী তার হবে?’

তবে, দাসী নিজ থেকে মুসাফিরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করায় কায়স ইবনে সা’দ (রা.)-এর ভালো লাগে। তিনি সেই দাসীকে মুক্ত করে দেন।

এবার যুবক গেল তৃতীয় সাহাবির কাছে। আরাবা আওসি (রা.) বৃদ্ধ। চোখে দেখেন না। দুজন দাসের দুই কাঁধে হাত রেখে মসজিদে যাচ্ছেন। এমন সময় মুসাফির সেজে যুবক তার দুর্দশার কথা বলল।

আরাবা আওসি (রা.) দাসদের কাঁধ থেকে নিজের হাত সরিয়ে বললেন, ‘হে সম্মানিত মুসাফির! আমি আমার সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছি। আমার কাছে এ দুজন দাস ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। আপনি এ দুজন দাসকে নিয়ে যান।’

এই বলে তিনি তার দুজন দাস দিয়ে দিলেন। হাতড়ে হাতড়ে মসজিদের দিকে যাওয়া শুরু করলেন। তিন যুবক একত্রিত হলেন। দানশীল সাহাবিদের দান দেখে তারা অবাক হলেন, মুগ্ধ হলেন। তারা ভেবে পাচ্ছে না কাকে সবচেয়ে দানশীল বলবেন। সবাই তো সর্বোচ্চ দান করেছেন।

অনেক তর্ক-বিতর্কের পর তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, জীবিত সাহাবিদের মধ্যে কে সবচেয়ে দানশীল তা এককভাবে নির্বাচন করা অসম্ভব।

তথ্যসূত্র: আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ১১/৩৫৬-৩৫৭; তারিখে দিমাশক লিইবনি আসাকিরন: ১৪/৪৫৪)

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ