ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

আদর্শের প্রতীক মহানবী (সা.)

প্রকাশনার সময়: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৬

মুহাম্মাদ (সা.) হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। জন্মের পর হতেই তার মাঝে বিরাজ করছিল সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, সর্বোত্তম মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশী ইত্যাকার মহত্তম গুণ। বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিল কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহমিকামুক্ত। অনুক্ষণ তিনি ছিলেন দায়শীল, শ্রদ্ধাশীল সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কলুষ নির্ভেজাল সোনা। তাই তো অতি অল্প বয়েসেই ‘আল-আমিন’ উপাধিতে বিভূষিত হন। অধিকন্তু পরনিন্দা, অশ্লীল ও অশিষ্ট বাক্য কখনোই তার পবিত্র মুখ থেকে নিঃসৃত হয়নি। এক কথায় তিনি হলেন, সব গুণের আধার। বিশ্ববাসী সবার নিমিত্ত নমুনা ও মহান আদর্শ।

রাসুল (সা.)-এর সততা

সততা উত্তম চরিত্রের পূর্বশর্ত, সততা উত্তম আদর্শ। সততার মাঝেই নিহিত আছে ইহকালীন সাফল্য ও পরকালের নাজাত। বলাবাহুল্য, জন্ম হতে মৃত্যু অবধি রাসুল (সা.) হলেন সততার মূর্ত প্রতীক। যার দরুন মক্কার কাফির-মুশরিক সবার সকাশে তিনি আস-সাদিক তথা সত্যবাদী নামে পরিচিত। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, মক্কার কাফের গোষ্ঠী ছিল তার ঘোরতর শত্রু। তাকে হত্যা করে ইসলামের বিলুপ্তির জন্য সদা অধীর আগ্রহে প্রহর গুনত। এতদসত্ত্বেও তাদের ধনসম্পদ গচ্ছিত রাখার সর্বাধিক বিশ্বস্ত বলে তাকেই জ্ঞান করত। সুতরাং তার সততার পারাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেই মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবিষ্ট হয়েছিল। তাই তার সততা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য।

রাসুল (সা.)-এর উদারতা

প্রিয়নবী (সা.)-এর অনুপম বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ গুণ হলো, উদারতা। ইসলাম আবির্ভাবের পর দুনিয়ার বুক থেকে এ গুণটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিধর্মীরা কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি। এমনকি প্রিয় নবীজির ওপর নৃশংস নির্যাতনও চালিয়েছে তারা। তৎসত্ত্বেও সব সময় তিনি তাদের প্রতি ছিলেন উদার, ছিলেন মহৎপ্রাণ। একবার উহুদ প্রান্তরে কাফের বাহিনীর তরবারির আঘাতে হুজুর (সা.)-এর পবিত্র দেহ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। বর্শার ফলা শিরস্ত্রাণ ভেদ করে মাথায় আঘাত হেনেছিল। দাঁত মুবারক শহিদ হয়েছিল। কিন্তু সেই করুণ মুহূর্তেও তিনি ঔদার্য ও ক্ষমার আদর্শ ত্যাগ করেননি। বরং কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এই বলে দোয়া করলেন, ‘হে রাব্বুল আলামিন! ওদের ক্ষমা করে দাও। এরা তো অবুঝ।’

রাসুল (সা.)-এর সহিষ্ণুতা

মহানবী (সা.)-এর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অবস্থা এমন ছিল যে, সব সাহাবায়ে কেরামদের ধৈর্যও একত্রে তার সমকক্ষ হবে না। এর একটি নমুনা আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, ‘একবার এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দিল। সাহাবিরা এ কাণ্ড দেখে রাগে রোষে তেড়ে এলেন। রাসুল (সা.) তখন তাদের থামিয়ে বললেন, ‘তাকে তোমরা ছেড়ে দাও। যেখানে সে পেশাব করেছে, তাতে পানি ঢেলে দাও। স্মরণ রেখ, তোমাদের আসানি সৃষ্টিকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। দুর্বিষহ বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারী হিসেবে নয়।’ (বোখারি, কিতাবুল অজু)।

রাসুল (সা.)-এর বদান্যতা

বদান্যতা-দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিফলন মহানবী (সা.)-এর মাঝেই ঘটেছিল। প্রিয়নবী (সা.) নিতান্তই দরিদ্র্য ও অসহায়ের ন্যায় দিনাতিপাত করতেন। তথাপি পৃথিবীর কোনো রাজা-বাদশাহের দান দক্ষিণা তার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি। নবীজি (সা.)-এর কাছে একবার নব্বই হাজার দিরহাম আসলে তিনি একটি মাদুরের ওপর উপবেশ করে সেখান থেকে সমুদয় দিরহাম বণ্টন করে দিলেন। বণ্টন শেষ হওয়ার পরক্ষণেই এক ভিখারি এসে হাজির। নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমার কাছে এখন কিছুই নেই। তাই আমার নাম বলে কারো কাছ থেকে কিছু নিয়ে নাও। পরে আমি তা পরিশোধ করে দেব।’ (খাসায়েলে নববী)।

ইয়াতিম-অসহায়দের প্রতি দয়া

রাসুল (সা.) ইয়াতিম ও অসহায়দের প্রতি অপরিসীম দয়া-অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করতেন। বহু অনাথের মুখে তিনি মধুর হাসি ফুটিয়েছেন। একবার ঈদগাহে যাওয়ার পথে ইয়াতিম এক বাচ্চাকে কাঁদতে দেখে প্রিয় নবীজি তাকে আদর দিয়ে দুঃখ-দুর্দশার কথা জিজ্ঞেস করলেন। সব শুনে রাসুল (সা.) তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন। গোসল করিয়ে সুন্দর কাপড় পরিয়ে ঈদগাহে নিয়ে গেলেন। অনন্তর তাকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি যদি তোমার বাবা হই, আয়শা যদি তোমার মা হয় আর ফাতেমা যদি তোমার বোন হয়, তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট?’ ছেলেটি সমস্বরে জবাব দিল, হ্যাঁ, অবশ্যই। এবার তার রসনায় আনন্দের হাসি বিকশিত হলো।

অমুসলিমদের প্রতি সদাচার

রাসুল (সা.) মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যেরূপ সদাচারণের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতেন, তদ্রুপ অমুসলিম বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও করতেন এবং সর্বদা তাদের প্রতি সৎ মনোভাব প্রকাশ করতেন। একবার এক ইহুদি আল্লাহর হাবিবকে মারতে এসে তার মেহমান বনে গেল। রাতে রাসুল (সা.) যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু শয়ন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে ইহুদি লোকটি বিছানায় পায়খানা করে চলে গেল। সকালে হুজুর (সা.) তার কোনো সন্ধান পেলেন না। রাসুল (সা.)-এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে গেল। আফসোস আর আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘হায়! আমি বুঝি তার যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতে পারিনি’।

এমনিভাবে একবার এক বেদুঈন এসে প্রিয়নবী (সা.)-এর চাদর ধরে এতো জোরে টনতে লাগল যে, গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হলো এবং জোর গলায় বলতে লাগল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমাকে কিছু দাও’। রাসুল (সা.) তখন তার দিকে ফিরে হেসে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (বোখারি, মুসলিম)।

জীবজন্তুর প্রতি সদাচার

প্রিয়নবী (সা.) শুধু মানুষের প্রতিই সদাচারণ করেছেন, এমন নয়। বরং তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্ট অন্যান্য প্রাণী ও জীবজন্তুর প্রতিও অত্যন্ত ন্যায়সংগত সদাচারণ প্রদর্শন করতেন। একবার এক সফরে দুজন সাহাবি একটি পাখির বাসা থেকে দুটি পাখির ছানা নিয়ে এলেন। মা পাখিটি তার বাচ্চার সঙ্গে সঙ্গে করুণ সুরে মুক্তির আবেদন জানাতে লাগল। প্রিয় নবীজি এ অবস্থা দেখে বললেন, ‘এ পাখি ধরে কেন এই মা পাখিটাকে অধীর করে তুলেছ? বাচ্চা দুটি ছেড়ে দাও। উভয়ে বাচ্চা দুটি ছেড়ে দিল। (সিরাতুন্নবী: ৬/২৪১)।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ