ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বান্দার অবাধ্যতা আল্লাহর আহ্বান

প্রকাশনার সময়: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৪৮

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব বানিয়েছেন। যুগে যুগে মহামানব তথা নবী-রাসুল ও আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন যেন মানবজাতি আল্লাহ তায়ালার হেদায়েতপ্রাপ্ত ও অনুগামী হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ (তথা আপনি হবেন মানুষকে সঠিক পথের দিশারি। লোকদেরকে সঠিক পথের আহ্বান ও নিষিদ্ধ পথ থেকে প্রতিহতাকারী)। (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)

তেমনিভাবে প্রত্যেক জাতির জন্য দেয়া হয়েছে নবী-রাসুলের সঙ্গে হেদায়েতের বার্তা স্বরূপ আসমানি কিতাব বা সহিফা। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি মানবতার মহান মুক্তির দূত, সর্বকালের মহামানব, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কোরআন।

আল-কোরআন এই উম্মতের জন্য হেদায়েত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জু (কোরআনকে) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

এ আয়াতের তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয় এ পথ বিপদ সংকুলন। তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। আর সে ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা! এদিকে আসো, পথ এদিকে। মূলত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে সে মরিয়া। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতির সঙ্গে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রজ্জু হলো তার প্রেরিত কিতাব তথা আল-কোরআন।’ (তাফসিরে তাবারি: ৫/৬৪৫)

অতএব যারা এই কোরআনকে জীবন বিধান হিসেবে আঁকড়ে ধরবে এবং বুকে ধারণ করবে তারাই হবে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম। তারাই মুক্ত হবে সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে। আর যারা কোরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জীবন হবে মহাসংকটময়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে মহাসংকটময় জীবন।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)

প্রখ্যাত মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং কোরআনের বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবে, তাকে মুক্ত রাখা হবে সর্বপ্রকার ভ্রষ্টতা থেকে। রেহাই পাবে কিয়ামতের বিভীষিকাময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে। আল্লাহর বাণী, ‘যে আমার দেখানো পথের অনুসারী হবে, সে হবে না কখনও বিপথগামী ও দুঃখগ্রস্ত।’

তবুও আমরা তো মানুষ!

আমরা মানুষ। তাই হয়ে যায় নানা সময় নানান ধরনের গুনাহ ও আল্লাহর অবাধ্যতা। যেমন— আমাদের কাছে এখন গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র পরিণত হয়েছে অভিজাত শিল্পে। বাদ্যযন্ত্র ও গান গাওয়া ছিল মূলত তৎকালীন কাফির মুশরিকদের দ্বীন প্রচার বাধাগ্রস্তের অন্যতম মাধ্যম। যা আজ আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও ইসলাম পরিপন্থি কাজ।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এক শ্রেণির লোক এমন থাকবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্তু পরিধান, মদপান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে।’ (বুখারি: ৪৯৪) এ হাদিসে বলা হয়েছে— বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হারাম। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আজ আমাদের বাস্তব চিত্র কি সম্পূর্ণ আল্লাহ হুকুমবিরোধী নয়? বিবাহ অনুষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক সংবর্ধনা বা বিদায় প্রোগ্রাম, খেলাধুলা ইত্যাদি প্রত্যেকটা জায়গায় হয়ে থেকে বাদ্যযন্ত্র ও গান বাজনার মতো আল্লাহর অবাধ্যতা।

আজ আমরা মদকে বানিয়েছি কোমল পানীয়। জুয়াকে বানিয়েছি সাধারণ খেলাধুলা। অবাধে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে বানিয়েছি প্রগতি। নগ্নতাকে বানিয়েছি ব্যক্তি স্বাধীনতা। জেনাকে বানিয়েছি শ্রেণিগত সম্পর্ক মাত্র। ঘুষকে বানিয়েছি হাদিয়া। সৎ কাজের আদেশ করাকে বানিয়েছি কট্টর পন্থা। অসৎ কাজে বাধা প্রধানকারীকে বানিয়েছি অবহেলার মতো জঘন্যতম অপরাধী।

সময় কাটানোর মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছি মোবাইল। যার মাধ্যমে ঘটে অশ্লীলতা ও মা-বাবার অবাধ্যতার মতো জঘন্যতম কাজ। অনুসরণ করছি বিধর্মীদের নানা ধরনের স্টাইল। তাদের অনুসরণে চুল কাটা ও কালার করা, তাদের মতো গেঞ্জি বানানো, হাফ প্যান্ট পরে সতর উন্মুক্ত করা এবং তাদের অনুসরণে সেলিব্রেশন ইত্যাদির মতো জঘন্যতম কাজ।

বড় দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়- আজ দ্বীনি কনফারেন্স-মাহফিলগুলোতে বাধা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছি বিধর্মীদের উৎসবগুলোতে। তবে মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তারই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ভুল বা শয়তানের প্ররোচনায় লিপ্ত হওয়া বান্দাদেরকে নৈরাশ্য ও হতাশতা থেকে ফেরানোর জন্য অসংখ্যবার বিভিন্নভাবে আহ্বান করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দা! তোমরা যারা নিজেদের ওপর (পাপ করে) অবিচার করে ফেলেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না (তোমরা যদি কুফর-শিরক ও পাপাচার পথ পরিহার করে শরিয়ত মোতাবেক চলো, তবে তোমাদের জন্য ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত)। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তোমরা (ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে) তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হয়ে যাও, এবং তাঁর আনুগত্যে আত্মসমর্পণ করো। তোমার ওপর শাস্তি আসার আগেই।’ (সুরা জুমার: ৫৩-৫৬)

সর্বোপরি কথা হলো, আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত মহান প্রভুর আদেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং তার প্রিয় বান্দা ও রাসুল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শে অবিচল থাকা। তথাপিও কখনও শয়তান ও নফসের প্ররোচনায় পড়ে গুনাহ ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হলেও সঙ্গে সঙ্গে তওবার মাধ্যমে রবের দিকে ফিরে আসা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানার তৌফিক দান করুন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ