ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মসজিদে ব্যক্তির স্থান নির্ধারিত নয়

প্রকাশনার সময়: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২:২৩

মহান আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতিতে সৃষ্টি করে, তাদের উপর অনেক ইবাদত ফরজ করেছেন, ফরজ ইবাদতের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। আর এই ইবাদত (বিশেষত ফরজ নামাজ) আদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো- পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বরকতপূর্ণ স্থান মসজিদ।

মসজিদ আল্লাহতায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় স্থান। যেখানে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে রাত-দিনের চক্রাকারে কমপক্ষে পাঁচবার সমবেত হয়ে থাকে। মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের নানাবিধ ফায়দা থেকে অন্যতম ফায়দা হলো, ধনী-গরিব, ছোট-বড়, উঁচু-নিচু, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, নিজেদের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক হয়ে, এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার মাধ্যমে, সাম্য-সমতা, ভদ্রতা, ভ্রাতৃত্বতা ইত্যাদির শিক্ষা লাভ করতে পারে।

মসজিদ নির্মাণ ও ফজিলত : রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে মসজিদ নির্মাণ করেছেন, কেয়ামত অবধি আগত উম্মতকে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন, আম্মাজান আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ কর এবং তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধির মাধ্যমে সুবাসিত করে রাখ।’ (ইবনে মাজা : ৭৫৮)

মসজিদ নির্মাণের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’ (ইবনে মাজা : ৭৩৭)

মসজিদে গমনকারীর সম্মান : মসজিদে গমনকারী ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালা নিজেই সম্মান দিয়ে থাকেন, এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে অজু করে মসজিদে আসে, সে আল্লাহতায়ালার জিয়ারতকারী। আর যার জিয়ারত করা হয়, তার ওপর ওয়াজিব হলো, জিয়ারতকারীকে যথাযথ সম্মান করা।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ১৬৪৬৫)

মসজিদে গমনকারী আল্লাহর মেহমান : যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর মসজিদে আগমন করে, সে আল্লাহতায়ালার মেহমান হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহতায়াালা প্রত্যেকবার যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন, চাই সে সকালে বা বিকালে আসোক।’ (বুখারী : ৬৬)

পাপরাশী ক্ষমা হয়ে যায় : নামাজের জন্য মসজিদে যাতায়াতের বরকতে ওই ব্যক্তির পাপরাশী ক্ষমা হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আবু সাঈদ খুদরী (রা.) সুত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিসের কথা বলে দেব না? যা দ্বারা আল্লাহতায়ালা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেন এবং নেকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন, তারা বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি কষ্টের সময় পূর্ণরূপে অজু করে, মসজিদে বেশি বেশি কদম রাখল এবং এক নামাজ থেকে আরেক নামাজ পর্যন্ত মসজিদে বসে অপেক্ষা করল আল্লাহতায়ালা তার অপরাধ সে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজা : ৭৭৬)

ঈমানের আলামত: মসজিদে নিয়মিত নামাজের জন্য যাতায়াত করা ব্যক্তির ঈমানের আলামত বহন করে। এ ব্যাপারে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন কোন ব্যক্তিকে মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত করতে দেখ, তার ঈমানের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান কর।’ (ইবনে মাজা : ৮০২)

এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ তারা করে, যারা আল্লাহতায়ালার প্রতি এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে।’ (সূরা তাওবা : ১৮)

প্রথম কাতারে নামাজ : আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ যদি জানত, আজানে ও প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের কি ফজিলত রয়েছে? এ দুটো জিনিস যদি লটারি ছাড়া পাওয়া সম্ভব না হত, তাহলে তারা অবশ্যই লটারি করত।’ (বুখারী : ৬১৫)

ইমামের পেছনে কারা দাঁড়াবে: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার পেছনের কাতারে তারা দাঁড়াবে যারা জ্ঞানী বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজা : ৯৬৭) বোঝা গেল, ইমামের পেছনের কাতারে তারাই দাঁড়াবে, যাদের নামাজের মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে, যদি কোন কারণে ইমামের নামাজে ভুল হয়, তাহলে তারা যেন পেছন থেকে লোকমা দিতে পারে।

নামাজির জন্য জায়গা নির্ধারণ: ফজিলত অর্জনের জন্য মসজিদে গিয়ে আগে আগে প্রথম কাতারে বসার চেষ্টা করা উচিত সবার। কিন্তু প্রথম কাতারে বসতে অথবা মসজিদে সুবিধাজনক জায়গায় বসতে কোনও ব্যক্তি জন্য জায়গা নির্ধারণ করা উচিত হবে না। এ ব্যাপারে ফেকাহবিদ আলেমগণ বলেন, মসজিদে শুধুমাত্র ইমামের স্থান নির্ধারিত। এছাড়া মুয়াজ্জিন বা অন্য কারও স্থান নির্ধারিত নয়। মুয়াজ্জিন যেকোনও কাতারে দাঁড়িয়ে ইকামত দিতে পারবে। তাই মুয়াজ্জিন, মসজিদের কমিটির কোন সদস্য বা এলাকার কোনও প্রভাবশালী মুসল্লির জন্য সব সময় জায়নামাজ বিছিয়ে মসজিদের কাতারে জায়গা দখল করে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

আলেমরা আরো বলেন, যিনি সবার আগে মসজিদে আসবেন, তিনিই প্রথম কাতারে ইমামের পেছনে বসতে পারবেন। এক্ষেত্রে এলাকার গণ্যমান্য, ধনী-গরিব কোনও পার্থক্য নেই। তাই কোনো ব্যক্তির যদি মসজিদে এসে প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তাদের উচিত আগে আগে মসজিদে চলে আসা।

একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক লোক সবার ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে আসছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘বসো! তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে।’ (আবু দাউদ : ১১১৮)। ঘাড়ের ওপর দিয়ে আসার কারণে মানুষের অন্তরে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। এ কারণেই রাসুল (সা.) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ