পবিত্র কোরআন মাজিদে এবং হাদিস শরিফে যে মসজিদসমূহের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, মসজিদে কুবা তার অন্যতম। ইসলামের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ হলো মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন নববি, জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা। এরপর হলো মসজিদে কুবা। নবুয়্যতের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম এ মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদে কুবা নির্মাণের ইতিহাস
ইসলামি ইতিহাসের প্রথম মসজিদ হলো মসজিদে কুবা। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণ কাজে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা মতে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি তিনি নিজ হাতে স্থাপন করেন।
কুবা নামকরণের কারণ ও অবস্থান
কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সেই কূপ থেকে মানুষ পানি নিত। আস্তে আস্তে বিখ্যাত কূপ কুবাকে কেন্দ্র করে একটি জনপদ গড়ে ওঠে। সেই জনপদের নামও হয়ে যায় কুবা। কুবা গ্রাম। কুবা মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। মসজিদুন নববি থেকে কুবার দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। এটি মক্কা থেকে উত্তরে। মক্কা থেকে দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার।
কোরআনের বর্ণনায় মসজিদে কুবা
পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর স্থাপিত হয়েছে, সেটাই তোমার দাঁড়ানোর জন্য (নামাজ আদায়ের জন্য) বেশি উপযুক্ত। তাতে এমন লোক আছে, যারা পাক-পবিত্রতাকে বেশি পছন্দ করেন। আল্লাহ তায়ালা পাক-পবিত্র লোকদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮) তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ কোনটি, সেটা নিয়ে তাফসিরে দুইটা মত রয়েছে। ইবনে কাসির মসজিদে কুবার কথা বলেছেন। তবে কোনো কোনো মুফাসসির মসজিদুন নববি বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য দুইটা মসজিদই তাকওয়ার ওপরে প্রতিষ্ঠিত, উল্লিখিত মর্যাদায় অভিষিক্ত। আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ তায়ালা কুবাবাসীর পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবাবাসীদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমরা কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করো? তারা উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা নামাজের জন্য অজু করি, জানাবাত থেকে গোসল করি, পায়খানার পরে পানি দিয়ে পরিস্কার করি।’ (ইবনু মাজাহ: ৩৫৫)
হাদিসে মসজিদে কুবার ফজিলত
হাদিস শরিফে মসজিদে কুবায় নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তাহে একদিন এ মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন বলেও বর্ণিত আছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে অথবা আরোহণ করে আসতেন। তারপর সেখানে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯৩) মসজিদে কুবায় নামাজ পড়লে ওমরার মতো নেকি হবে বলেও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। উসাইদ ইবনে খুদাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদে কুবার নামাজ ওমরাহ’র সমতুল্য।’ (তিরমিজি: ২২৪)
মসজিদে কুবার বর্তমান অবস্থা
মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। এখানে একসঙ্গে পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের চারটি উঁচু মিনার রয়েছে। ছাদে একটি বড় গম্বুজ ও পাঁচটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে নারী-পুরুষের নামাজের জায়গা ভিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশপথ, অজুখানা, ওয়াশরুমও ভিন্ন। মসজিদের মোট সাতটি প্রধান প্রবেশপথ রয়েছে।
এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত কোরআন মাজিদের আয়াত ও হাদিসসমূহ মসজিদের বাইরে সুন্দর কারুকার্য করে লিখে রাখা হয়েছে। যা পথিকদের নজর কাড়ে। প্রতিদিন বহু মানুষ নবী জীবনের স্মৃতি বিজড়িত মসজিদে কুবা দেখতে যায়।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ