ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রাণের নবীকে জানতে পড়তে হবে সিরাত

প্রকাশনার সময়: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩

আল্লাহ তায়ালা আমাদের অগণিত নেয়ামত দান করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম নেয়ামত হচ্ছে— তিনি আমাদের এমন একজন নবীর উম্মত করে পাঠিয়েছেন, যে নবীর মর্যাদা শুধু পৃথিবীর সব মানুষের ওপর নয় বরং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবকাফেলা নবীদের ওপর। তিনি নবীদের মধ্যেও সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু আফসোস! একজন শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হয়েও আমরা এমন অথর্ব, অযোগ্য, নালায়েক ও নাখান্দা যে আমাদের দেখে যদি কেউ রাসুল (সা.)কে চেনার চেষ্টা করে তাহলে সে ব্যক্তি বিভ্রান্ত হবে, সংশয়ে পড়ে যাবে। কারণ আমাদের নবীর (সা.) আদর্শ ও চরিত্রমাধুরি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি।

যে নবীর (সা.) আদর্শ আমাদের প্রতিটি সেকেন্ডে/মিনিটে, প্রতিটি পদে পদে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। সেই অনুসরণ ও অনুকরণ বাদ দিয়ে আমরা তাঁর নামে কিছু আবেগ কপচে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। এটা নিয়েই আমরা আত্মতুষ্টি অনুভব করছি আর ভাবছি তাঁর সুপারিশ পাব, তাঁর পবিত্র হাতে হাউসে কাউছারের পানি পান করব। অথচ বাস্তব জীবনে আমরা তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ থেকে অনেক দূরে। বরং আমরা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে অনুসরণ করে যেখানে যাকে সুবিধা হয় তার!

কিন্তু হাদিসে তিনি (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের আগে হাউসের কাছে গিয়ে হাজির হব। আর (তখন) তোমাদের কিছু লোককে আমার সামনে ওঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদের আলাদা করে নেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কী নতুন কাজ করেছে তা তো তুমি জানো না।’ (বুখারি: ৬৫৭৬) বোঝা গেল, নবীর ভালোবাসার শুধু দাবি করলেই হবে না, তাঁর আদর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। না হয় ওখানে গিয়ে আটকে পড়ে যাব আমরা।

রাসুল (সা.)-এর জীবনী আমাদের মাঝে প্রতিদিন আলোচিত হওয়ার কথা, পঠিত হওয়ার কথা, তাঁকে অনুসরণ করার কথা। কিন্তু আমরা তাঁর জীবনকে, তাঁর আলোচনাকে কিছু গৎবাধা নিয়মের সঙ্গে বেঁধে ফেলেছি। যেমন করে মানুষ জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীর মাধ্যমে ক্ষণকালীন বা খণ্ডিত ভালোবাসা প্রকাশ করে, তেমনি রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর অনুসরণকে একশ্রেণির মানুষ কিছু নির্দিষ্ট দিন/তারিখ/ক্ষণ এবং কিছু উৎসব ও পার্বনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।

নবী (সা.)-এর জীবনের ঘটনাবহুল ও আলোচিত মাস হলো রবিউল আউয়াল মাস। এ মাসে তাঁকে নিয়ে আলোচনা করায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা ওইখানে যখন তাঁর জন্মদিনকে প্রচলিত উৎসব বা আনন্দে রূপ দেয়া হয়। তাঁর ভালোবাসার প্রদর্শনী করা হয় বিজাতীয় তরিকায়। যার সঙ্গে রাসুল (সা.) আমাদের পরিচিত করাননি। যা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) পালন করেননি। বরং নবীজি (সা.) এসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন।

আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে প্রায় ৭৫ বছর ধরে ১২ রবিউল আউয়ালকে উদযাপন করা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে। এর অর্থ নবীর জন্মের ঈদ, জন্মের আনন্দ নয়। আনন্দ হলে শব্দটা হবে সুরুর বা ফারহা। যেটা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘ফাবিযালিকা ফালইয়াফরাহু’, আমি তোমাদের ইসলাম ও কোরআন বা শেষনবী দিয়েছি, ফলে তা নিয়ে আনন্দিত হও। এ আয়াতে ব্যবহূত ‘ইয়াফরাহু’ শব্দ থেকে নিয়ে ‘ফারহাতুন্নবী’ বা নবী জন্মের আনন্দ— এভাবেও বলে না, তারা বলে ঈদে মিলাদুন্নবী।

ঈদ মানে ঘুরে ঘুরে আসা, অর্থাৎ যা প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে, বারবার যেটার আবর্তন হয় তাকে ঈদ বলা হয়। মুসলিমানদের ঈদ দুইটা ঈদ-উল ফিতর আর ঈদ-উল আজহা। আর তারা মিলাদুন্নবীর সঙ্গে এ পরিভাষাটি ব্যবহার করে নাম দিয়েছে ঈদে মিলাদুন্নবী। এর চেয়ে জঘন্য ব্যাপার, তারা নবীজির দেয়া দুই ঈদের চেয়েও নিজেদের বানানো ঈদে মিলাদুন্নবীকে বলে সেরা ঈদ! নাউজুবিল্লাহ!

আমাদের এ উপমহাদেশে যতটা না রাসুল (সা.)-এর জীবনী আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি মিলাদ পড়া হয়। অথচ তাঁর হক ছিল তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ কর।’ (সুরা আহযাব: ৫৬)

কিন্তু আমাদের দ্বারা তাঁর প্রতি সালাম ও সালাতের থেকে বেশি মিলাদের গীত আর মিলাদের নাত পড়া হয়েছে। তাঁকে সর্বক্ষেত্রে অনুসরণের চেয়ে তাঁকে কেন্দ্র করে বানোয়াট কিছু মাসআলা নিয়ে বিরামহীন বিতর্ক-ঝগড়া হয়েছে। অথচ আমাদেরকে দেয়া আল্লাহর নির্দেশনা ছিল অন্য কিছু। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহযাব: ২১) আরো বলেছেন, ‘রাসুল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা আল-হাশর: ৭) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর।’ (সুরা মুহাম্মাদ: ৩৩) ‘বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)

তো আল্লাহ এ আয়াতগুলোতে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন— ক. নবী (সা.) আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। খ. তিনি যা করতে বলেন তা করতে হবে আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। গ. সর্বক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য করতে, তাকে অনুসরণ করতে হবে। এখানে কোথাও মিলাদ আছে? না, নেই। কিন্তু তাদের দলিল শুরুর দিকে উল্লেখিত সুরা আহযাবের ওই ৫৬ নম্বর আয়াত, যেখানে সালাম ও সালাত পেশ করতে বলেছেন।

আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সা.) এর সাহাবি আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমরা আপনাকে অভিবাদনে বলি, ‘আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ’ কিন্তু সালাত পড়ব কেমনে? তখন রাসুল (সা.) বললেন, এভাবে পাঠ কর, আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিঁও ওয়াআ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আ’লা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। তাহলে এ আয়াতে মিলাদ নেই। আছে সালাম ও সালাত।

আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে অনুসরণ, অনুকরণ করতে আর তাঁর প্রতি সালাম-সালাত পেশ করতে বললেন। আর একদল কী করছে? যা বেয়াদবির পর্যায়ে, বিশাল আকারের কেক কেটে বলছে— ‘হ্যাপি বার্থডে ইউ ইয়া রাসুলুল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ। আবার বিজাতীয় অনুসরণে লাখো কণ্ঠে গানের মতো করে লাখো কণ্ঠে দরুদ পড়ছে! ঢাবিতে দেখলাম, নবীজির জন্মদিনের আকিকার জন্য গরু কিনে এনেছে! ফাজলামির তো সীমা থাকা উচিত।

আমি প্রশ্ন করি— যেহেতু রাসুল (সা.)কে ভালোবাসা, অনুসরণ ও অনুকরণ করা ইবাদত। এখন রাসুল (সা.)-এর জন্মদিন যে আপনারা পালন করছেন তা কি ইবাদত নাকি আদত (সাধারণ অভ্যাস বা কাজ) হিসেবে করছেন? যদি সাধারণ কাজ মনে করে করেন তাহলে প্রশ্ন— এর বিরোধিতা করলে আপনারা আমাদেরকে নবীর দুশমন বলেন কেন? আর যদি বলেন ইবাদত, তাহলে বলব, কোরআন বা হাদিস থেকে রেফারেন্স পেশ করুন। কারণ কোরআন-হাদিসের দলিল ছাড়া ইবাদত হয় না, তা হয় বিদআত। দেখুন সারা জীবনের অধিকাংশ খুতবায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, তা বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

তারা বলে, আমাদের এ মিলাদ বা নবীর (সা.) জন্মদিন পালন যদি বিদআত হয়, তাহলে তোমাদের বিমানে চড়াও বিদআত। ভেবে দেখেন তাদের মুর্খতা কোন পর্যায়ের! আরে রাসুল (সা.) বলেছেন, ইবাদতের মধ্যে নব উদ্ভাবিত কাজগুলো বিদআত। সাধারণ বৈষয়িক কাজকর্মে বিদআতের কিছু তো নেই।

রাসুল (সা.)-এর পুরো জীবনই আমাদের জন্য অনুকরণীয় অথচ তাঁর জীবনের ছোট ছোট কিছু ঘটনার একেক জন একেকটা, যার যেটা ভালো লাগে সে সেটা আঁকড়ে ধরে আছে। যার ফলে মুসলিম জাতি আজ শতধাবিভক্ত। আজ যদি আমরা তাঁর পুরো জীবন, যেটাকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘উত্তম আদর্শ’, তার অনুসরণ করতাম, যদি আমরা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতাম, তাহলে আমাদের জীবনও হতো সাহাবিদের মতো আলোকিত হিরন্ময়।

কিন্তু আমরা এমন নালায়েক, মুসলমান হয়েও অনেকেই মানবতার ফেরিওয়ালা বলতে গিয়ে নেলসেন ম্যান্ডেলার উদাহরণ আনেন। কিন্তু তার মুখে রাসুল (সা.)-এর কথা আসে না। আমি আফ্রিকার ওই ভদ্রলোককে হেয় করছি না। তিনি আসলেই মানবসেবায় অনেক কিছু করেছেন। সাম্প্রতিক যুগে কালো আর সাদার বৈষম্য দূর করেছেন। অথচ সাড়ে ১৪০০ বছর আগেই রাসুল (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘আজ থেকে অনারবের ওপর আরবের, সাদার ওপর কালোর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব শুধু তাক্বওয়ায়।

রাসুল (সা.) কে দুধ পান করিয়েছেন উম্মে আয়মান। তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ, ছিলেন একজন দাসী। রাসুল (সা.) তার সঙ্গে একজন সম্ভ্রান্ত সাহাবির বিয়ে দিয়েছেন। যায়েদ বিন হারেসা (রা.)-এর সঙ্গে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। বর্ণপ্রথা, বংশীয় দম্ভসহ বিভিন্ন বৈষম্য দূরীকরণে রাসুল (সা.) পৃথিবীকে যা দিয়েছেন তার নজির আর দ্বিতীয় কেউ কোনো দিন দিতে পারেনি, পারবেও না।

নেতা হিসেবে রাসুল (সা.) ছিলেন অসাধারণ। তার মধ্যে কোনো অহংকার, অহমিকা, আভিজাত্য ছিল না। নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। কোনো একদিন রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে বসে আছেন। হঠাৎ মদিনার বাহির থেকে একদল ইহুদি মদিনার রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। তো তারা দেখল কিছু জটলা হয়ে বসে আছে, তারা সেখানে গিয়ে সেখানে রাজা-প্রজা কোনো পার্থক্য করতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সা.) কে? এমন সাধারণভাবেই চলতেন রাসুল (সা.)। যদিও তিনি রাষ্ট্রনায়ক, নবী। আর বর্তমানে পৃথিবীর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সপ্তাহ খানেক আগে থেকে সিরিয়াল দিয়েও দেখা করা যায় না অনেক সময়।

একদা বাসায় খাবার না থাকায় আবু বকর (রা.) বাহিরে বের হয়েছেন খাবারের সন্ধানে। পথিমধ্যে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে দেখা। আবু বকর (রা.) বললেন, হে ওমর কই যাও? ওমর (রা.) বললেন, আবু বকর আমার বাসায় খাবার নাই তাই খাবারের খোঁজে বের হয়েছি, এই দেখ ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বেঁধে রেখেছি। আবু বকর (রা.) পেট থেকে বের করলেন একটা পাথর, ওমর (রা.) পেট দেখালেন দুইটা। এরই মধ্যে রাসুল (সা.) তাদের মধ্যে হাজির। বললেন, তোমরা কী করছ? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের বাসায় খাবার না থাকায় খাবারের খোঁজে বের হয়েছি। রাসুল (সা.) বললেন, আমারও একই অবস্থা। এই দেখ পেটে পাথর বেঁধেছি। রাসুল (সা.)-এর পেটে তিনটা পাথর। এমনই ছিলেন মদিনা রাষ্ট্রের নেতা মুহাম্মাদ (সা.)। রাষ্ট্রনায়ক হয়েও কত সাদাসিধে জীবন ছিল তাঁর।

অপরদিকে, আমাদের নেতারা চরম অর্থালোভী, দুর্নীতিপরায়ণ। যত পারো দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ো। দেশের মানুষ খেয়ে থাক, আর না থাক কি আসে যায়। তারপরও এসব নেতার নামে জিকির করে কিছু বেকুব মুসলিম। নিজের বিশ্বনবী ও বিশ্বনেতা রাসুলুল্লাহর (সা.) নাম অত নেয় না।

আরবে সে সময়ের উচ্চমানের বাহন ছিল উট এবং ঘোড়া আর নিম্নমানের বাহন ছিল গাধা, যাতে সম্ভ্রান্ত লোকেরা চড়ত না। কিন্তু রাসুল (সা.) গাধার পিঠে চড়েই যাতায়াত করতেন। যদিও তিনি সাইয়্যেদুল মুরসালিন, দোজাহনের বাদশা। এটা ছিল তাঁর বিনয়।

পৃথিবীর নেতাদের এমন কারো জীবনী এমন নয় যে তাকে সব ক্ষেত্রে অনুসরণ করার মতো। কারণ প্রত্যেকের জীবনেই কালো অধ্যায় আছে। শুধু নেতা নয়, আমাদের জীবনেরও কালো অধ্যায়টা মানুষের সামনে আসলে ঘৃণায় মানুষ দূরে সরে যাবে। কিন্তু রাসুল (সা.) এমন নেতা, এমন রাষ্ট্রনায়ক, এমন ইমাম যার জীবনের প্রত্যেকটা অধ্যায়ই অনুসরণযোগ্য। কারণ, মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের প্রতিটা অধ্যায়েই ছড়িয়ে আছে সুবাসিত পুষ্পের ছোঁয়া, যা শুধুই আলোকিত করে মানুষের জীবন।

আফসোস! এ নালায়েক জাতি পড়ে আছে নবী মাটির না নূরের তৈরি? তিনি গায়েব জানেন কি-না? মিলাদ-কিয়াম আছে কি নাই সেই কুতর্ক নিয়ে? অথচ মুসলিম উম্মাহ জানে না রাসুল (সা.) শিশুর সঙ্গে আচরণে কেমন ছিলেন? বৃদ্ধদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতেন? স্ত্রীদের সঙ্গে ব্যবহারে কেমন ছিলেন? প্রতিবেশীদের সঙ্গে কী আচরণ করতেন? শত্রুদের সঙ্গে আচরণে কেমন ছিলেন? মনিব হিসেবে চাকরের সঙ্গে কেমন আচরণ করতেন?

জাতি জানে না নেতা, সেনাপতি, ভাই, বন্ধু, রাষ্ট্রনায়ক, স্বামী হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.) কেমন ছিলেন? হায়! আমাদের এ জীবনের চিত্র যদি সাহাবিরা দেখতেন তাহলে তারা আমাদের মুনাফিক বলে সম্বোধন করতেন। কারণ তারা নবী (সা.)কে এমনভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করতেন যাতে আল্লাহ খুশি আয়াত নাজিল করলেন, ‘আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।’ (সুরা মুজাদালাহ: ২২)

তাই আমাদের জীবনকে সুখী, সুন্দর ও আলোকিত করতে অর্থাৎ দুনিয়াতে শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি পেতে হলে রাসুল (সা.)কে অনুসরণ-অনুকরণের কোনো বিকল্প নেই। তার আদর্শ জীবনে বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে জানাটা খুবই দরকার। সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই প্রত্যেকের উচিত রাসুল (সা.) এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বারবার পাঠ করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ টঙ্গীর আন-নূর জামে মসজিদে প্রদত্ত জুমার খুতবার

অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ