ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলামে মজুদদারির বিধান

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৪৫

আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। কোরআনে এরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করা হয়েছে আর সুদকে করা হয়েছে হারাম।’ (সুরা বাকারা: ২৭৫) ব্যবসায়ীদের সুসংবাদ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি: ১২০৯)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ব্যবসায়ী প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৭১৯৬)

প্রকৃত সৎ ব্যবসায়ীকে আল্লাহ যেমন পছন্দ করেন, অসৎ ব্যবসায়ীকে ঠিক তেমন অপছন্দও করেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি দল রয়েছে, যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সব সময় ওৎ পেতে থাকে। সেজন্য সবচাইতে কার্যকরি অসৎ পন্থা হলো ‘মজুদদারি’। আরবিতে যাকে বলা হয় ‘ইহতেকার’। হাদিস বিশেষজ্ঞ আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, ‘জনগণের প্রয়োজন সত্ত্বেও মূল্য বৃদ্ধির অপেক্ষায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা থেকে বিরত থাকাকে মজুদদারি বলে’।

ইসলামে মজুদদারির ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। খাদ্যশস্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। হানাফি মাযহাব অনুসারে তা মাকরুহে তাহরিমি, আর অন্য মাযহাব অনুসারে সম্পূর্ণ হারাম। হাদিসে মহানবী (সা.) মজুদদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে (মজুতদারি করে), তবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্যতা চাপিয়ে দেন।’ (আবু দাউদ: ৫৫; ইবনে মাজাহ: ২২৩৮)

এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে আল্লাহ তার ওপর দারিদ্র্য ও মহামারি চাপিয়ে দেবেন। কেননা কোনো ব্যক্তি অন্যজনকে কষ্ট দিয়ে কখনো নিজে ভালো থাকতে পারে না। তার হাত ও মুখ দ্বারা যদি অন্য কেউ কষ্ট পায় তাহলে একদিন সেও এর শাস্তি ভোগ করবে। তাছাড়া মজুদদারি ও খাদ্য সংকট তারাই তৈরি করে যারা দুর্নীতিবাজ ও অসৎ লোক। সৎ ব্যক্তি কখনো তা করতে পারে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিস শরিফে এরশাদ করেছেন, ‘শুধুমাত্র দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি খাদ্যশস্য মজুদ করে রাখে।’ (সহিহ ইবনে মাজাহ: ২১৫৪)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না।’ মজুদদার ও অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এদের পাপী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পণ্যদ্রব্য মজুদ করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (মিশকাত)

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে সম্পদশালী হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। এ সম্পদে তার কোনো বরকত হবে না। বরং দুনিয়াতেই এ সম্পদ তার জন্য অভিশাপ হবে। অন্যদিকে, যে ব্যক্তি সৎভাবে ব্যবসা করে, তাতে কোনো রকম জুলুম করে না, আল্লাহ তার ব্যবসায় বরকত দান করেন। অল্প লাভ হলেও তাতে তার প্রয়োজন মিটে যায় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত অনেক নেয়ামত তাকে দান করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ২১৫৩)

উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে ব্যবসায়ীগণ যদি নিজেদেরকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করেন এবং সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যান, তাহলে আশা করা যায় সমাজের স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। জনমনে স্বস্তি চলে আসবে। ব্যবসায়ীদের একটু ত্যাগ ও প্রচেষ্টার কারণে যদি সমাজে শান্তি আসে, তাহলে অবশ্যই কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের প্রতিদান দেবেন।

তাই আসুন, আমরা সবাই নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করি এবং ব্যবসার সব সেক্টরে মজুদদারিকে না করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন!

লেখক: শিক্ষক, জামিয়া মাহমুদিয়া অলিনগর শিকদারবাগ মাদ্রাসা, আশুলিয়া, ঢাকা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ