মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি

প্রকাশনার সময়: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— ‘তোমাদের মাঝে সে সবচেয়ে ভালো, যে তার পরিবারের জন্য ভালো। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবার চেয়ে ভালো।’ (জামে তিরমিজি: ৩৮৯৫; সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪২)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন— ‘সবচেয়ে কামিল মুমিন সে, যার স্বভাব ও আচরণ সবচেয়ে ভালো। আর তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ সে, যে তার স্ত্রীর জন্য শ্রেষ্ঠ।’ (জামে তিরমিজি: ১১৬২)

ব্যাখ্যা: এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কারো ভালো-মন্দের একটি মাপকাঠি হলো স্ত্রীর সঙ্গে তার আচরণ। আল্লাহ তায়ালা বৈবাহিক সম্পর্ককে মিয়াঁ-বিবি উভয়ের জন্য শান্তি ও পবিত্রতার মাধ্যম বানিয়েছেন এবং এ মধুর সম্পর্ককে তাঁর বিশেষ নিয়ামতসমূহের মধ্যে গণ্য করেছেন। মিয়াঁ-বিবি উভয়ে যদি একে অপরের হকের বিষয়ে খেয়াল রাখে, তাহলে এ সম্পর্কই পুরো পরিবেশকে জান্নাতি পরিবেশে পরিণত করে। পক্ষান্তরে খোদানাখাস্তা এ সম্পর্কে যদি চির ধরে তাহলে পুরো পরিবেশ বিষিয়ে ওঠে এবং জীবনটাই একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কেবল পার্থিব সুখ-শান্তিই বিদায় নেয় না, ধীরে ধীরে তা দ্বীন ও ইমান, দুনিয়া ও আখিরাত সব কিছুই বরবাদ করে ছাড়ে। আর এ কারণেই শয়তান স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারলে যত পুলকিত হয়, অন্য কিছুতেই ততটা হয় না।

সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে আছে— ইবলিস পানির ওপর তার আসন পাতে। তারপর মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তার চেলাদের এদিক ওদিক প্রেরণ করে। যে যত বিপথগামী করতে পারে, সে তার তত নৈকট্য অর্জন করে।

তো ইবলিস যখন তার পেয়াদাদের কার্যবিবরণী শোনে তখন এক চেলা বলে— আজ আমি অমুকের মাধ্যমে এ গুনাহ সংঘটিত করেছি। ইবলিস বলে, নাহ, কিছুই করতে পারিসনি। আরেক চেলা বলে, আমি অমুকের পিছে লেগেই ছিলাম। তাকে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আর স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে এমনভাবে ক্ষেপিয়ে তুলি যে, অবশেষে এদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে এসেছি। ইবলিস এ শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে। বলে, শাবাশ! কাজের কাজ তুমিই যা করেছ। (সহিহ মুসলিম: ২৮১৩)

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে শয়তানের এত আনন্দ কেন? কারণ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিচ্ছেদ শুধু তাদের দুয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। উভয়ের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার সম্পর্ককেই তা প্রভাবিত করে। যার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।

বৈবাহিক সম্পর্কের এ গুরুত্বের নিরিখে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের যে হেদায়েত দিয়েছেন, তা যথাযথ মেনে চললে পারিবারিক অশান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে সিরাত ও সুন্নাহর এক গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত হলো— পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সুন্দর ও কোমল ব্যবহার। ঘরের ভিতর আইনের শাসন চলে না। এখানে প্রীতি ও ভালোবাসা এবং আখলাক ও ব্যক্তিত্বের প্রভাবই কার্যকর হয়। যারা নিজের ঘরে সামান্য সামান্য বিষয়ে চটে যান, হুমকি ধমকি ও রুক্ষতার দ্বারা দাম্পত্যের চাকা সচল রাখতে চান, তারা আসলে বিকারগ্রস্ত।

সুন্দর ব্যবহার পাওয়া স্ত্রীর সবচেয়ে বড় হক এবং ইমানের দাবি।রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত নির্দেশনা যদিও মৌলিকভাবে পুরুষের উদ্দেশ্যে এবং ঘরে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলাও মৌলিকভাবে তারই দায়িত্ব, তথাপি মুসলিম রমণীগণও এখান থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করতে পারেন; করা উচিতও বটে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ইমানের পূর্ণতায় তিনিই অগ্রগামী, যিনি অন্যের চেয়ে ভালো ব্যবহার উপহার দিতে পারেন। ভালো আখলাকের একটি দিক হচ্ছে, নিজের অধিকার তলবের চেয়ে অপরের হক আদায়ে বেশি সচেষ্ট থাকা। কোনো বিষয়ে একজন রেগে গেলে অপরজনও ফুঁসে ওঠবে না। ধৈর্য ও কোমলতার সঙ্গে আপস-মীমাংসা করবে।

আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব শা’রানী (রহ.) বলেন, এক লোক তার শায়খের কাছে বিবির মুখরা স্বভাবের অভিযোগ করলে তিনি বললেন, স্ত্রীর দেয়া যন্ত্রণা যে সইতে পারে না, সে স্ত্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে কীভাবে! তো দাম্পত্য জীবনে সুন্দর আখলাক যত কার্যকর থাকবে জীবনযাপনও তত সুখের হবে। মিয়াঁ-বিবির যিনিই হুসনে আখলাকে ভূষিত হবেন তিনিই সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। বস্তুত ভালো ব্যবহারই ওই উপায়, যা দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় করতে পারে।

উর্দু থেকে ভাষান্তর: মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ