মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

সন্তান লালন-পালনের প্রতিদান

প্রকাশনার সময়: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি তুল্য।’ অন্য বর্ণনায় ‘শিশুদের জান্নাতের ফুল’ বলা হয়েছে। (মুসলিম: ৬৪৬২) শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। মানব সভ্যতার রক্ষাকবচ। তাই শিশুদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের লালন-পালন করতে হয়। আল্লাহপাক প্রত্যেক পিতামাতাকে সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন এবং এ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিদান ঘোষণা করেছেন। স্বীয় দায়িত্ব পালনে নারী-পুরুষ সবাইকেই সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়।

সন্তানের মাধ্যমে পরীক্ষা

সন্তানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের পরীক্ষা করেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো! তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহাপুরস্কার রয়েছে আল্লাহর কাছেই।’ (সুরা আনফাল: ২৮)

সন্তান দ্বারা পরীক্ষার ধরন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কন্যা সন্তানের কারণে পিতা-মাতাকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য এর প্রতিদানও অনেক। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে এসে কিছু চাইল। আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই সে পেল না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। মহিলা তার দুই মেয়েকে খেজুরটি ভাগ করে দিল। তারপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী কারিম (সা.) এলেন। আমি তাকে ঘটনাটি জানালাম। তখন তিনি বললেন, ‘যাকে এসব কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়। এরপর সে তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে। এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় (প্রতিবন্ধক) স্বরূপ হবে।’ (বুখারি: ৫৫৬৯; মুসলিম: ৬৪৫৪)

সন্তান পালনের প্রতিদান

সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে উভয়ের লালন-পালনের জন্য পিতা-মাতা আদিষ্ট। সাধারণত পুরুষরা জীবিকার তাগিদে বাইরে অবস্থান করায় এ দায়িত্ব নারীদের ওপর পড়ে। আল্লাহপাক নারীদের সন্তান পালনের বিশেষ যোগ্যতা দিয়েছেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা তার দু’টি সন্তান সঙ্গে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলো। সে একটা সন্তানকে কোলে ও অপরটিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ অবস্থা দেখে বললেন, ‘এরা গর্ভধারিণী, সন্তান জন্মদানকারিণী ও সোহাগিণী। এরা যদি স্বামীকে কষ্ট না দেয়, তবে তাদের মধ্যে যারা সালাত আদায়কারিণী তারা জান্নাতে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ: ২০১৩)

কন্যা সন্তান পালনের প্রতিদান

ইসলামপূর্ব আরবে নারীদের কোনো সম্মান ছিল না। কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া পিতার পক্ষে লাঞ্ছনাকর গণ্য হতো। জন্ম নেয়া মাত্র তাকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার জঘন্য ঘটনা ঘটত। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান (জন্মগ্রহণ)-এর সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে), হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। জেনে রেখ, তারা যে সিদ্ধান্ত স্থির করে তা অতি মন্দ!’ (সুরা নাহল: ৫৮-৫৯)

ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ ও লালন-পালনের জন্য সুসংবাদ দিয়েছে। কন্যা সন্তানের দ্বারা পিতা-মাতার জান্নাতের পথ সুগম হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটো মেয়ে সন্তান লালন-পালন করবে সে আর আমি এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব।’ এরপর তিনি দুটো আঙুল ইশারা করে দেখালেন। (তিরমিজি: ১৯১৪)

কন্যা ও বোনদের উদ্দেশ্যে খরচ করাও গুরুত্বপূর্ণ সওয়াবের কাজ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি মেয়ে থাকে কিংবা তিনটি বোন থাকে অথবা দু’টি মেয়ে বা দু’টি বোন থাকে সে যদি তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহার করে এবং তাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত।’ (তিরমিজি: ১৯১৬) কন্যা সন্তানদের লালন-পালনের মতো এমন সওয়াব ছেলে সন্তানের বেলায় বলা হয়নি।

এতিম সন্তান পালনের প্রতিদান

এতিম সন্তানের লালন-পালনের জন্য সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হয়। এতিমের অভিভাবক যদি মুত্তাকি ও এতিমের মালের রক্ষণাবেক্ষণে স্বচ্ছ হয় তাহলে সে জান্নাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে অবস্থানের সুযোগ পাবে।

সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব।’ এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলদ্বয় মিলিয়ে ইশারা করে দেখান। (বুখারি: ৫৫৭৯)

এতিম সন্তানের দুঃখ কষ্টের শেষ থাকে না। প্রতি পদে পদে তারা পিতা-মাতার স্নেহের শূন্যতা অনুভব করে। এজন্য তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে তাদের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে আদর করা এবং খাওয়ানো আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে এনে স্বীয় খাদ্য ও পানীয়তে শরিক করে। আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন; যদি না সে এমন কোনো গুনাহ করে যা ক্ষমার অযোগ্য।’ (তিরমিজি: ১৯১৭)

লেখক: খতিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ