মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশনার সময়: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯

দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ ও জাতির উন্নতি-অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। এমন কোনো সেক্টর নেই যা দুর্নীতির হিংস্র থাবায় আক্রান্ত হয়নি। এক কথায় বলতে গেলে দুর্নীতি দেশ ও সমাজকে অক্টোপাসের ন্যায় আঁকড়ে ধরে আছে। যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো— ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার বিশ্বের সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যা জাতির জন্য ছিল চরম অবমাননাকর। পরবর্তীতে দুর্নীতির সূচকে অন্যান্য দেশ এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ এক নম্বরে না থাকলেও দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট আগের মতোই আছে। ফলে বাস্তবতা হলো দুর্নীতি আগের চেয়েও বহুগুণ বেড়ে গেছে।

দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার

একক কোনো কারণে দুর্নীতি হয় না। দুর্নীতির বহুবিদ কারণ রয়েছে এবং এর প্রতিকারেরও বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যেমন—

১. জবাবদিহিতার অনুভূতির অভাব

ঘুষ ও দুর্নীতির প্রধান ও মুখ্য কারণ হলো জবাবদিহিতার অনুভূতি। জবাবদিহিতা দু’প্রকার: (১) ইহকালীন জবাবদিহিতা ও (২) পরকালীন জবাবদিহিতা।

ইহকালীন জবাবদিহিতা বলতে জনগণ বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিতা বোঝায়। ছলে-বলে-কৌশলে মানুষ অনেক সময় এ জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা পায় বলেই ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিটি সেক্টরেই সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কৌশলে ইহকালীন জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা পেলেও পরকালীন তথা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা থেকে কোনোভাবেই রক্ষা পাওয়া যাবে না। মূলত ইহকালীন অসৎ কর্মকাণ্ডের বিষয়েই পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। এ অনুভূতি কারো মাঝে জাগ্রত থাকলে সে কখনো ঘুষ লেনদেন ও অন্যান্য দুর্নীতি করতে পারে না। মহান আল্লাহ পরকালীন জবাবদিহিতার বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।’ (সুরা বুরূজ: ১২)

মানুষ তার দুর্নীতিকে দুনিয়ার মানুষের কাছ থেকে লুকাতে পারলেও আল্লাহর কাছে কিছুতেই লুকাতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি জানেন তোমাদের চোখের চুরি ও অন্তরের লুকানো বিষয়সমূহ।’ (সুরা মুমিন: ১৯) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল: ৭-৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবেন। একজন পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের দায়িত্বশীল, সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর কৃতদাস আপন মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পাদনে জিজ্ঞাসিত হবে’। (বুখারি: ২৫৫৮; মুসলিম: ১৮২৯)

হাশরের মাঠে আদম সন্তান আল্লাহ তায়ালার পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এক পাও সামনে এগোতে পারবে না। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো— ‘সে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে যে, সে কিভাবে তা অর্জন করেছে এবং কোন পথে তা ব্যয় করেছে’। (তিরমিজি: ২৪১৭)

২. হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করা

ঘুষ ও দুর্নীতির আরেকটি অন্যতম কারণ হলো— হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (বায়হাক্বি: ১১৫৯)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন। যে দীর্ঘ সফর করছে। যার চুল উশকোখুশকো, কাপড় ধূলিমলিন। সে আকাশ পানে দু’হাত প্রসারিত করে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং হারাম দ্বারা দেহ গঠিত।

কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে’? (মুসলিম: ১০১৫) উল্লেখিত হাদিস মেনে চললে ঘুষ ও দুর্নীতি বিদূরিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

৩. ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া

কোনো অপরাধ করা সত্ত্বেও যদি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে অপরাধীরা সে অপরাধ করতে আরো বেশি উৎসাহিত হয়। একই কারণে প্রতিটি সেক্টরে আজ ঘুষ ও দুর্নীতি বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়লেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিকার। কেননা অনেকাংশে তারা নিজেরাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৭ সালের টিআইবির রিপোর্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ঘুষ ও দুর্নীতি অনেকাংশেই হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

৪. দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা

দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ঘুষ ও দুর্নীতির হ্রাস-বৃদ্ধি। দলমত নির্বিশেষে সর্বক্ষেত্রে ঘুষ ও দুর্নীতি দমনে যদি দুর্নীতি দমন কমিশন আন্তরিক হতো, তাহলে দুর্নীতি দেশ থেকে বিদায় নিত। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো প্রতিটি সরকারের আমলেই দেখা যায় দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ক্ষমতাসীন অবস্থায় যে এমপি, মন্ত্রী, নেতা, আমলা দুর্নীতির জম হিসেবে পরিচিত হন, তিনিই ক্ষমতাহীন হওয়ার পর শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত হন এবং তার নামে ডজন ডজন মামলা হয়।

৫. রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি

সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় অল্প সময়ের মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি। কারণ হাজারো দুর্নীতি করেও পার পাওয়া যায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। আবার অনেকেই দুর্নীতি না করেও দুর্নীতিতে ফেঁসে যায় রাজনৈতিক কারণে। একেই বলে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’। ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাইলে রাজনীতিবিদদের দ্বারাই সেটা সম্ভব। সুতরাং ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিকারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই।

৬. সামাজিক প্রতিরোধ

ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ না থাকায় তারা এ ধরনের অপকর্ম করতে প্ররোচিত হয়। আগের দিনে ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। তাদেরকে সমাজের কোনো সম্মানজনক আসনে অধিষ্ঠিত করা হতো না, তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করা হতো না। বর্তমান দৃশ্যপট পুরোটাই উল্টো। বর্তমান সমাজে এদেরকে ঘৃণা করা তো দূরের কথা, সমাজের প্রতিটি সম্মানজনক আসনে ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজদের সমাসীন করা হয় তাদের অঢেল অবৈধ টাকা থেকে অনুদান পাওয়ার আশায়। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়, মেয়ের পিতারা তাদেরকেই জামাই হিসেবে গ্রহণ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। এতে তারা আরো দুর্নীতি করতে প্ররোচিত হয়। সুতরাং ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করতে চাইলে এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এতে যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে ততটুকু প্রয়োগ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অসৎ কাজ (অন্যায়-দুর্নীতি) সংঘটিত হতে দেখলে, সে যেন উহা হাত দ্বারা তথা শক্তি প্রয়োগে প্রতিহত করে। এতে সক্ষম না হলে সে যেন কথার মাধ্যমে প্রতিবাদ করে। তাতেও সক্ষম না হলে সে যেন আন্তরিকভাবে ঘৃণা করে। আর এটাই হলো সবচেয়ে দুর্বল ইমানের পরিচায়ক’। (মুসলিম: ৪৯)

৭. গণসচেতনতা তৈরি

ঘুষ ও দুর্নীতি সম্পর্কে জনগণ সচেতন না থাকায় তা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চাইলে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়াজ মাহফিল, জুমার খুতবা ইত্যাদির মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া ঘুষ ও দুর্নীতিবিরোধী পোস্টার, লিফলেট ও স্টিকারের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী জনমত সৃষ্টি করা যেতে পারে।

৮. নিরপেক্ষ অডিট ব্যবস্থা

অফিস-আদালত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ও নিরপেক্ষ অডিট ব্যবস্থা না থাকায় ঘুষ ও দুর্নীতি বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে বিএসটিআই ও ওষুধ প্রশাসনের মতো মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার কারণে খাদ্যে, পণ্যে ও ওষুধে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও দ্রব্য বিক্রিসহ নানা ধরনের দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো যারা অডিট করতে আসেন তারা অধিকাংশই ঘুষের বিনিময়ে দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেন এবং মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোও ঘুষের বিনিময়ে নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য, পণ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়ে থাকে। আর একেই বলে দুর্নীতির ওপর দুর্নীতি। এমনও দেখা যায় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদন না নিয়েই অনেক কোম্পানি খাদ্য, পণ্য, ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে থাকে। কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘুষের বিনিময়ে এক্ষেত্রেও নীরব ভূমিকা পালন করে। সুতরাং ঘুষ ও দুর্নীতির প্রতিকার করতে হলে সৎ, যোগ্য ও তাক্বওয়াশীল লোকদেরকে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. দুর্নীতিই দুর্নীতি ডেকে আনে

যেসব চাকরিজীবী মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়, তারা চাকরিতে প্রবেশ করেই ধান্ধায় থাকে কিভাবে প্রদত্ত টাকা ফেরত পাওয়া যায়। তাই তারা ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা না করে ঘুষ ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তার দেয়া ঘুষের সমপরিমাণ টাকা ফেরত পাওয়ার পরেও তা থেকে ফিরে আসতে পারে না অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে। কেউ কেউ এসব অপকর্ম থেকে ফিরে আসতে চাইলেও ফিরে আসতে পারে না ঘুষখোর দুর্নীতিপরায়ণ সহকর্মীদের কারণে। ঘুষ-দুর্নীতি থেকে ফিরে আসতে চাইলে সহকর্মীরা তাকে ভয় দেখায় তার বিগত অপকর্মগুলো ফাঁস করে দেয়ার। আর এভাবেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ঘুষ ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং চাকরি গ্রহণকালে ঘুষ ও দুর্নীতি দূর করা গেলে ঘুষ ও দুর্নীতি অনেকটাই হ্রাস পাবে।

১০. সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ

দুর্নীতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দান। অথচ প্রশাসনকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোককে নিয়োগ করা। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন, ‘অতঃপর মেয়ে দু’টির একজন বলল, হে পিতা! একে কর্মচারী নিযুক্ত করুন! নিশ্চয়ই আপনার কর্মসহায়ক হিসেবে সেই-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ (সুরা ক্বাছাছ: ২৬)

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথার্থ হকদারগণের নিকটে পৌঁছে দাও।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

ঘুষ ও দুর্নীতি দেশ ও জাতির জন্য চরম অভিশাপ। দেশের সুনাম-সুখ্যাতি ও মর্যাদা ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে বিপন্ন ও ভূলুণ্ঠিত। সুতরাং সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ঘুষ ও দুর্নীতি একেবারে মূলোৎপাটন হবে না কিছুতেই যতক্ষণ না সরকার, প্রশাসন ও সমাজের দায়িত্বশীলরা দ্বীনদার, পরহেজগার, তাক্বওয়া সম্পন্ন না হবেন। কারণ একমাত্র আল্লাহর ভয় ও পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতিই পারে ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে সমাজকে রেহাই দিতে। যার বাস্তব উদাহরণ হলো রাসুলুুল্লাহ (সা.) ও খেলাফায়ে রাশেদার সময়কার ইসলামি রাষ্ট্র। সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মারামারি-হানাহানিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আইয়ামে জাহিলিয়াতের গাঢ় অন্ধকার অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বিদূরিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ, নিরাপদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল চির শান্তিময় ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে তাক্বওয়া অবলম্বন করার কারণে। তাই নতুন অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসন ও সমাজের সবাইকে সত্যিকার তাক্বওয়াশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ