ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সব বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষের কর্ম

প্রকাশনার সময়: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫৯

দেশে হঠাৎ মানব সৃষ্ট বন্যায় লাখ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জেলার মানুষ ও গবাদি পশুদের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগের দৃশ্য এখন আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টিধারা বন্ধ করে দিন। বিপন্ন মানুষদের উদ্ধারের পথকে সুগম করে দিন।

কেন এ বন্যা

আমরা জানি, বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়। তো বন্যার আগে পাশের দেশের আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে সতর্কতামূলক বার্তা আদান-প্রদান হয়। যাতে মানুষ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু আমরা দেখছি ভিন্ন কিছু। হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ তাদের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করেছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা আর-রুম: ৪১) মানুষের কৃতকর্মের ফল দুই ধরনের— প্রথমটি দৃশ্যমান এবং দ্বিতীয়টি হলো অদৃশ্য। সব মানুষ যখন আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে। সবাই যখন সততা ও ইনসাফের ভিত্তিতে জীবন যাপন করে। একে অপরের উপকারের সংস্কৃতি যখন মানুষ ধারণ করে। তখন আল্লাহ তায়ালা জমিনবাসীর জন্য আসমান ও জমিনের বরকতের ভান্ডার অবারিত করে দেন।

আর যখন এর উল্টোটা করে— একে অপরের প্রতি জুলুমে লিপ্ত হয়, অন্যের হক নষ্ট করে, জাকাত দিতে অস্বীকার করে। উপকারের পরিবর্তে অপকার করে। ভালোর পরিবর্তে ক্ষতি করে। সর্বোপরি কোরআন ও সুন্নাহর আইনকে উপেক্ষা করে। তখন আল্লাহ তায়ালা মানুষের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত দেন, যাতে মানুষ সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তাদের বড় শাস্তির পরিবর্তে ছোট শাস্তি আস্বাদন করাই, যাতে তারা (সঠিক পথে) ফিরে আসে।’ (সুরা আস-সাজদা: ২১)

পিতামাতা তাদের সন্তানকে সতর্ক করার জন্য বলেন— এমন কাজ করো না, উমুক জায়গায় যেও না। সন্তান যখন অবাধ্য হয়, তখন বলেন— যা করিস কর, যা আমার কিছু যায় আসে না। মাতাপিতার চাইতেও আল্লাহ ৯৯ ভাগ বেশি ভালোবাসেন তাঁর বান্দাকে। তাই আল্লাহ তায়ালা দয়া করে ছোট ছোট বিপদ দেন। ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকে ফেরাতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ছোট ছোট বিপদ দিয়ে শিক্ষা দেন।

এ বন্যা আমাদের হাতের কামাই

প্রাকৃতিক যে কোনো ধরনের বিপর্যয় (অতি বৃষ্টি, খরা, বন্যা) মানুষের জীবনে আসে তাদের পাপের কারণে। এভাবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ধাক্কা দিয়ে তাঁর দিকে আসার সুযোগ করে দেন। করোনার প্রকোপের দুই বছর আমরা তা দেখেছি মানুষ গৃহবন্দি জীবনযাপন করেছে। তখন মানুষ কিছুটা আল্লাহর দিকে আসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু করোনা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে।

এখন যে আকস্মিক বন্যা চলছে, আমরা যেন এর অবর্ণনীয় ব্যথা-বিড়ম্বনা দেখে শিক্ষা নিই। আর আমাদের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের ভাইয়েরা যেন উপলব্ধি করেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমরা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি। কতটা ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছি। অথচ ফিলিস্তিনের ভাইয়েরা বছরের পর বছর এত সংকটময় অবস্থার মধ্যে থেকেও আল্লাহর ওপর থেকে আস্থা হারাননি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের ছোট বিপদ দিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। ইসলামের একটি বেসিক থিউরি হলো— ব্যক্তিগত বা জাতীয় কোনো বিপদ এলেই একজন মুমিন প্রথমেই ভাববে— এটা আমার/আমাদের পাপের কারণেই হয়েছে। ‘কোনো বিপদ আসে না গুনাহ ছাড়া আর কোনো বিপদ কাটে না তওবা ছাড়া।’

সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি সম্পদ রক্ষা করার ব্যবস্থা করা আরো বেশি জরুরি। তা না হলে অর্জিত সম্পদ লুটপাট-চুরি বা যে কোনোভাবে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটা কঠিন। দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর পরেও আমরা তেমন যুগান্তকারী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। দেশে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আজ নতুন নয়। দেশ স্বাধীনের পর বিগত দিনে অনেকে দেশের ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কেউ এ দুর্যোগ মোকাবিলায় বা প্রতিরোধে তেমন আশা জাগানিয়া ও ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যাতে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। পারবে কী করে? যে এসেছে সেই তো নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছে।

নোয়াখালীর রসিক বক্তা ভাই আফসারী সেদিন বন্যাকবলিত এলাকায় সকাল থেকে সারাটা দিন গাড়ি নিয়ে ঘুরেও যেতে না পেরে কান্নাজড়ানো গলায় বলছিলেন, ‘আমাদের দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রবেশে কেন শুধু একটি রাস্তা থাকবে? বিকল্প কোনো রাস্তা কেন করা হলো না স্বাধীনতার এত বছর পরেও!’ কারণ যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা কেউই জনগণের জন্য সিরিয়াসলি কাজ করেনি। যারাই ক্ষমতায় এসেছে বা গিয়েছে সবাই নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিল।

জনগণের সত্যিকার সেবক আলেমরাই

তাদের ক্ষমতায়নের পদ্ধতিটা ছিল মানবরচিত। তাদের সবার রূপই আমরা দেখেছি। তারা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। আমাদের আর দেখার বাকি আছে একটা। দেশ স্বাধীনের পর কখনো জঙ্গি, কখনো রাজাকার, কখনো মৌলবাদী ট্যাগ দিয়ে যাদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে- সেই ইসলাম পন্থিদের দেখার সময় এখন। আজ যখন বন্যাকবলিত হয়ে দেশের লাখ লাখ মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে, শুরু থেকে আলেমদেরই ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের সেবায়। কোথায় গেল রাজনৈতিক দলের লোকগুলো? তারা তো তাদের দল গোছাতেই ব্যস্ত। অথচ শায়খ আহমাদুল্লাহ, ডা. শফিকুর রহমান, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি ফয়জুল করিম সাহেবরা ঘুম হারাম করে জনগণের জন্য কাজ করছেন। তাদের এজেন্ডা ভোটের নয়। ভোট দিলেও কি না দিলেও কি, কোনো আপত্তি নেই। কারণ তাদের কাজগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্য। তারা জনগণের সেবামূলক কাজকে ইবাদত মনে করেন। সুতরাং অর্ধশতাব্দী পার হওয়ার পর এখন সময় এসেছে কোরআনটাকে দেখার। কোরআন অনুযায়ী দেশ চললে দেশের অবস্থা কেমন হয় সেটা একটু দেশবাসী পরখ করে দেখুক।

দেশের এ দুর্দিন আমাদের হাতের কামাই। পার্শ্ববর্তী দেশের ৫৭টি বাঁধের বিপরীতে আমাদের তেমন কোনো পদক্ষেপই নেই। এত ভালো সম্পর্ক তাদের সঙ্গে মুহূর্তেই সব শেষ? এই তাদের ভালোবাসার নমুনা? দু’দেশের আবহাওয়াবিদদের মধ্যে কথা হয়েছে বৃষ্টি হতে পারে টানা কয়েকদিন। কিন্তু তারা আগামবার্তা না দিয়েই বাঁধ খুলে দিয়ে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করল।

দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি গ্রুপ সক্রিয় ভূমিকায় লিপ্ত। নানা সময় নানারূপে আবির্ভূত হচ্ছে। নতুন সরকার গঠনের সপ্তাহখানেক না যেতেই সবাই যার যার দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে হাজির। এত তাড়া কিসের? তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দিন। কেমন যেন সবাই ব্যস্ত!

জাতীয় সংহতির কোনো বিকল্প নেই

আসলে এ জাতিকে শেখানো হয়নি— আমরা সবাই এক, জাতে বাঙালি। শুধু নিজে বাঁচলে বাপের নাম এটাই জনগণ দেখে এসেছে বছরের পর বছর। কারণ আমাদের মধ্যে ইসলাম নেই। একমাত্র ইসলামই শেখায় নিজে না, আমার অন্য ভাই বাঁচলে আমি বাঁচব। এজন্য বড় একটি ইসলামি দলের আমীরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আপনাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে আসি নাই। ভাই হিসেবে আপনার বাসায় হাদিয়া নিয়ে এসেছি।’

ত্রাণ দিয়ে কোনোদিন বাংলাদেশের মানুষ এমন কথা শোনেনি বা বলেনি। কারণ তাদেরটা মানবরচিত আর এটা কোরআন থেকে নেয়া। ইসলাম যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে তখন ইসলামের সৌন্দর্য দেখে অমুসলিমরা বলেছে, এসো এসো আমাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে নাও। আমাদেরকে উদ্ধার করো। ইন্ডিয়াতে মুহাম্মদ বিন কাসিম আসার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে সেখানে কয়েক লাখ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে। কিন্তু কুফফার শক্তি, তাগুতি শক্তি এটা সহ্য করতে পারে না।

বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ঈমানের দাবি

আমাদের হাতের আরো একটি কামাই হচ্ছে— আমরা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। আমরা শুধু শিখেছি নিজে বাঁচো, অন্যের চিন্তার দরকার নেই। এটাই আমাদের ব্যর্থতা। অপরদিকে ইসলাম কী বলে দেখুন, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে যার হাত ও জবান থেকে অন্যান্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি)

আবু শুরাইহ খুজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়।’ জানতে চাওয়া হলো, ‘কে ইয়া রাসুলুল্লাহ!?’ তিনি বললেন, ‘যার অনিষ্ট ও উৎপীড়ন থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারি: ৬০১৬)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সে তো মুমিন নয়, যে নিজে তৃপ্তিভরে আহার করে, আর তার প্রতিবেশী থাকে অনাহারে, অর্ধাহারে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ১১২)

আবু যর (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আবু যর! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশি কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।’ (মুসলিম)

এটাই ইসলামের সৌন্দর্য, এটাই ইসলামের শিক্ষা। যা বাংলাদেশের মানুষ এখনো পর্যন্ত দেখতে পারেনি। এখন সময় এসেছে এটা মানুষকে দেখানো, শোনানোর এবং তাদের সামনে উপস্থাপন করার।

নদীকে বাঁচালে আমরা বাঁচব

কয়েক বছরে মানুষের জীবন উন্নত হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ দালানকোঠা তৈরি করছে। করুক এটা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। তাই বলে আপনি কোনো মানুষের সম্পত্তিতে বাড়িঘর তুলতে পারেন না। অথচ সব সরকারের আমলেই সরকারের দলীয় লোকেরা সরকারি খাস জমি, নদী-নালা জবর দখল করে তাদের আবাসভূমিতে পরিণত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বৃষ্টি দিচ্ছে এ বৃষ্টির পানিগুলো জমা থাকবে আর খরা মৌসুমে আমরা ফসলের জন্য সেচ কাজে ব্যবহার করব এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু আজ আমাদের নদীগুলো সরু হয়ে গেছে। নদী তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। একেকটা নদী সরু খালে পরিণত হয়েছে। যার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কোথায় ছিল ক্ষমতাসীনরা, কোথায় ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। নদীকে যথাযথভাবে ড্রেজিং না করিয়ে নদী ভরাট করলে চর পড়ে যায়। প্রতি বছরই তো নদী ড্রেজিং করার জন্য বাজেট হয়। সেই বাজেটের টাকার কাজ না করে সব টাকা নিজেদের উদরপূর্তি করে। তারা হারামকে হালাল মনে করেছে, বেঠিককে ঠিক বলেছে, মানুষের হক নষ্ট করেছে, মানুষকে তাদের চোখে পরীক্ষিত লোকদের বেছে নিতে দেয়নি। এভাবে সব জায়গায় অসৎ লোকে ছেয়ে গেছে।

বিভিন্নভাবে নদী দখলের ফলে, নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদী তার স্বাভাবিক গতিপথে বাধা প্রাপ্তির কারণে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা হয়ে যায়। আমরা নদীর জায়গায় ঘর করছি আর নদীর পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করছে। এটা আমাদের দু’হাতের কামাই।

আবার পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে আমাদের শহরের ড্রেনগুলো দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় কষ্ট ভোগ করতে হয় অসংখ্য মানুষকে। কোনো সরকার এসে পলিথিন নিষিদ্ধ করে আবার পরের জন এসে পলিথিন কোম্পানির লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে মুনাফা লাভের আশায় নিষিদ্ধ পলিথিন চালু করে দেয়। তাহলে এ জলাবদ্ধতাও আমাদের হাতের কামাই।

সম্মিলিতভাবে রুখতে হবে দুর্নীতি

তাই এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারলেই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাতে পারতাম, তাহলে কে ইসলামের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কে বোরখা পরা, দাড়ি-টুপির কারণে জঙ্গি ট্যাগ দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারা কোরআন শিক্ষাকে কটাক্ষ করেছে, কারা মেয়েদের হিজাব খুলে দিয়েছে তা বের করতে পারতাম। কারা ইসলামের প্রকৃত শত্রু তা বের করতে পারতাম। পারব আমরাও, সময় বেশি দূরে নয়, ইনশাআল্লাহ অচিরেই আসবে সে সময়। সেই প্রেক্ষাপট আমাদের দ্বারপ্রান্তে।

আজ ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে ডেকে আনা হয়েছে। এমনও হতো পারত যে আমরা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দেখেছি, এবার আমরা কোরআনের শাসন দেখব। জমিন আল্লাহর, আইন চলবে আল্লাহর, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আমরা করেছি অস্বাভাবিকটা। আসলে আমাদের কাছে ভালো লাগে মানুষেরটা। কারণ আমরা পড়ি না, জানি না, বুঝি না। যার কারণে আমাদের ভিতর হক-বাতিল চেনার চেতনাও জাগ্রত হয় না। তাই আমাদের পড়তে হবে, জানতে হবে, আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে। চিন্তাকে সংশোধন করতে হবে, যে কোরআন ছাড়া প্রকৃত শান্তি সম্ভব নয়।

হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে কিভাবে তা জনগণের সামনে আজ পরিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, হ্যাঁ এটাই আমলনামা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘এটা কেমন গ্রন্থ! ওটা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে।’ (সুরা কাহাফ: ৪৯)

তাদের আমলনামা যদি বের করা হয় তাহলে এমনটিই দেখা যাবে। আর কোরআন যদি আসে তাহলে আমলনামা কেমন হয় তা নিজের দেশের উদাহরণ আমরা দিতে পারছি না। কিন্তু আফগানিস্তানের দিকে খেয়াল করেন, জিহাদের মধ্য দিয়ে বিজয়ের কয়েক বছর অতিবাহিত হয়েছে মাত্র। আল্লাহ তায়ালা তাদের পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাচ্ছেন। ওটা ছিল জিহাদের মাধ্যমে বিজয়। আর বাংলাদেশে আল্লাহ আমাদের দেখালেন বিপ্লবের মাধ্যমে বিজয়।

ফিরতে হবে কোরআনের কাছে

এখন আমাদের কর্তব্য কোরআনের দিকে প্রত্যাবর্তন করা, কোরআন দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে শুধু হুজুরদের ওপর দায়িত্ব দিয়েন না। আপনাকেও সক্রিয় হতে হবে, দায়িত্ব আপনাকেও নিতে হবে, কথা বলতে হবে। কথা বললে যে কাজ হয় তা তো আমরা দেখেছি। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন পড়তে বাধা দেয়া হয়েছিল, আয়োজকদের হুমকি দেয়া হয়েছিল। সেখানে আজ সেই শিক্ষককে তার ছাত্ররা কোরআন তিলাওয়াত শুনিয়ে বিদায় দিয়েছে। তারা তিলাওয়াত করছে— ‘আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম (বিচারক) নন?’ (সুরা তীন: ৮) আয়াতের জ্বলন্ত তাফসির স্বচক্ষে জাতি দেখল আজ। আল্লাহু আকবার!

যারা আগস্টের আগে মারা গেছে তারা দেখতে পারে নাই, কিন্তু আল্লাহ আমাদের দেখিয়েছেন। সুতরাং ভুল পথ ছেড়ে ভালো হয়ে যান। সব কুকর্ম ছেড়ে কোরআনের পথে ফিরে আসুন। এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আলেমসমাজ সব সময় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু তাদের অবদানকে সব সময় ছোট করা হয়েছে। তাদেরকে সবখানেই উপেক্ষা করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ)

ভালোবাসা কর্মের মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হয়। কাউকে পূজনীয়ের স্থানে নিয়ে সম্মানিত করা যায় না তাও আমরা দেখেছি। আমরা যখন দোয়া করি তখন বলি, আল্লাহ আমাদের দেশের জন্য যারা ভালো করেছে তাদের তুমি নাজাত দিয়ো। এ দোয়ার মধ্যে ওইসব মহান নেতারাও শামিল থাকে। কিন্তু আজ এক নেতাকে পূজনীয় বানাতে গিয়ে কী হলো। ক্ষমতা হারানোর পর তার মূর্তি মানুষ ভাঙছে।

শত্রুকে চিনতে হবে

এজন্য ভাইয়েরা আমাদের বোঝার সময় হয়েছে। আমাদের শেখার সময় হয়েছে। কে আমাদের শত্রু আর কে বন্ধু। আমাদের শত্রু তারা যারা আল্লাহর শত্রু। আজ আমাদের পানি চাপিয়ে প্রমাণ করেছে কারা আমাদের শত্রু। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওহে বিশ্বাসীগণ! মুশরিকরা হলো অপবিত্র।’ (সুরা তওবা: ২৮)

তাই আমাদের উচিত পার্শ্ববর্তী দেশের মুশরিকদের পণ্য বয়কট করা। যারা আমাদের পানি দিয়ে মারতে চাচ্ছে। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ‘ভারত আমাদের শত্রু এ কথাটা যে প্রজন্ম বুঝতে পারবে তারাই এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।’

শেষ কথা

প্রিয় ভাই, তাই কোরআনের কাছে আসতে হবে। কোরআনের আলো বক্ষে ধারণ করতে হবে। তাওহীদি চেতনায় জাগ্রত হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে হবে। সমবেতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাদের Gen-Z। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সচেতন হতে হবে।

শেষ কথা, আল্লাহ আমাদের যে স্বাধীনতা দিয়েছে তার যদি কদর করতে পারি তাহলে আল্লাহ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আর যদি কদর করতে না পারি তাহলে আমাদের ওপর অশুভ শক্তি এসে গেড়ে বসতে পারে। বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে আমরা যেভাবে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ঠিক সেভাবে আমাদের সচেতনতার সঙ্গে জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

২৩ আগস্ট টঙ্গীর আন-নূর জামে মসজিদে

কৃত জুমাপূর্ব আলোচনা থেকে

অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ