ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পদ ও ক্ষমতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা

প্রকাশনার সময়: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৮

আল্লাহতায়ালা আমাদের হায়াত-মউত সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য। এই দুনিয়া হলো পরীক্ষার জায়গা। দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালা মানুষকে যত ধরনের পরীক্ষায় ফেলেন, তার মধ্যে দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যে ব্যাপারে আমরা প্রায়ই ধোঁকায় পড়ে যাই। সেই পরীক্ষা দুটির প্রথমটি হচ্ছে সম্পদের পরীক্ষা আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে পদ বা ক্ষমতার পরীক্ষা।

আল্লাহতায়ালা যখন কোনো মানুষকে এই দুটির কোনো একটি বা উভয়টিই দেন তখন সেই মানুষকে মনে করতে হবে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য পরীক্ষা। তাকে স্মরণ রাখতে হবে এগুলো অর্জনে আমার কোনো ক্রেডিট নেই। শুধু আমার প্রচেষ্টায় আমি এগুলো অর্জন করিনি। এগুলো আল্লাহতায়ালা আমাকে পরীক্ষার জন্যই মূলত দিয়েছেন। তাকে অনুভব করতে হবে এগুলোকে যদি আল্লাহতায়ালার আনুগত্যে ব্যয় না করতে পারি অথবা অব্যবহার করি তাহলে এ ধন-সম্পদ, পদ-পদবি আমার জন্য জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। আল্লাহতায়ালা কোরআনের বিভিন্ন সূরায় সম্পদ ও সম্মানের ফিতনার ভয়াবহতা এবং তা থেকে বাঁচার পথ বলে দিয়েছেন।

সম্পদের কথাই যদি আগে বলি তাহলে আসুন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সা.) কী বলেছেন দেখে আসি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানসন্ততি প্রকৃতপক্ষে (ফিতনা) পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র।’ (সূরা আনফাল: ২৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্যই ফিতনা বা পরীক্ষার বস্তু থাকে, আমার উম্মতের ফিতনা হলো অর্থ-সম্পদ।’ (তিরমিজি)

সুতরাং আমরা দেখছি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.) দ্ব্যর্থহীনভাবে আমাদের এ দুই ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু মানুষের স্বভাব হলো সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। অন্যের পরিণতি দেখার পরও সেই ভুলে নিজে করে!

আল্লাহতায়ালা সূরা কাসাসের ৭৬ থেকে ৮৪ নং আয়াত পর্যন্ত কারুনের বৃত্তান্ত তুলে ধরে আমাদেরকে সম্পদ ও ক্ষমতার ফিতনা থেকে হুঁশিয়ার করেছেন। কারুন ছিল মুসা (আ.)-এর বংশের লোক। সে ছিল তৎকালের সবচেয়ে বড় সম্পদশালী ব্যক্তি। বর্তমান সময়ের সালমান এফ রহমান, এস আলমদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি ধন-সম্পদের মালিক। অহংকারের কারণে আল্লাহ তাকে তার সম্পদসহ ভূমিতে ধসিয়ে ধ্বংস করেছেন।

আল-কোরআনে প্রায় ১৪৫০ বছর আগে বর্ণিত ঘটনাটি আজ আমাদের বর্তমান সময়ের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। বর্তমান দুনিয়ায় মানুষের লোভের কেন্দ্রবিন্দু হলো সম্পদ আর ক্ষমতার লিপ্সা। এই সম্পদ আর ক্ষমতার লোভই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখছি, শেখ হাসিনার পতনের পর একেরপর এক অপরাধীকে হেলমেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। তারা অপরাধে লিপ্ত হয়েছে মূলত সম্পদ আর ক্ষমতার লোভে। যা তাদের জীবনকে আজ দুর্বিষহ করে তুলেছে।

কা’ব বিন মালেক আনছারী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশি ধ্বংসকর নয়, যত না বেশি মাল ও মদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য ধ্বংসকর।’ (তিরমিজি)।

ক্ষমতা বা পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা করা। তা দেখা যায় শুধু ইসলামপন্থিদের মধ্যে যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে। তারা কখনো পদের জন্য লালায়িত নয়। বেশি দূরে নয় সমসাময়িক উদাহরণ দেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার জন্য ইসলামপন্থিদের নামের তালিকা দিতে বলা হলে সবাই নিজের নাম না দিয়ে অন্যের নাম দিয়েছেন। সবাই মিলে শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এ দুজনের নাম দিয়েছেন। আবার সমন্বয়করা শায়খ আহমাদুল্লাহকে সিলেক্ট করলে শায়খ আহমাদুল্লাহ আ ফ ম খালিদ হোসেনকে নিতে বলেন। এটাই হওয়ার কথা। এই গুণটা সবার মধ্যেই আনতে হবে। না আনলে আপনার রাজনীতি রাজার নীতি নয়, নিজের পেটনীতিতে পরিণত হবে। তাই যারা ক্ষমতা চায় না তাদেরই ক্ষমতায় বসানো উচিত। যারা কাজ করতে চায় শুধু আল্লাহর জন্য জনগণের স্বার্থে।

অথচ আজকাল মানুষ ক্ষমতায় আসতে মরিয়া শুধু নিজের পেটের ধান্ধায়। মানুষের সেবার জন্য মানুষ আর নেতৃত্বে আসে না। সালমান এফ রহমানদের মতো দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতায় এসে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে। হেন কোনো দুর্নীতি নেই, যার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। তারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স করতে মরিয়া হয়ে পড়েছিল। এমনটি করলে শেষে যে কী পরিণতি হয় তা তো আমরা এখন সরাসরি দেখছি। ধাপে ধাপে লাঞ্ছিত হওয়ার দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এমন দুর্নীতিবাজরা যখন কোনো সরকারের উপদেষ্টা হন, তার দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় কী! অথচ তার এক বেক্সিমকো থেকে যে অর্থ আসে তাই তো এই সালমানের জন্য যথেষ্ট ছিল। কাউকে কষ্ট দেওয়া বা অপমান করার জন্য নয়, নিজেদের শিক্ষার জন্য বলছি। আমার নিজের জন্য বলছি। পদের জন্য যেন আমরা লালায়িত না হই। আমরা এমন কর্মকাণ্ড থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দুটি উপত্যকাও যদি দেওয়া হয়, সে তৃতীয়টির আকাঙ্ক্ষা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)।

সালমান এফ রহমান ব্যাংক থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়ে আর ফেরত দেননি। ত্রিশ হাজার কোটি টাকা মাত্র! ভাবা যায়! অথচ একজন সাহাবি (রা.)-এর জানাজায় উপস্থিত হয়ে রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তার কি কোনো ঋণ আছে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) ইমামতি না করে পেছনে সড়ে গেলেন। ঋণ কত হবে? বড়জোর কয়েকশ দেরহাম হতে পারে। আর এদের ঋণ হাজার হাজার কোটি টাকা! আজ প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, এস আলম গ্রুপ শত হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ খেলাপি। শুধু ইসলামি ব্যাংক থেকেই নিয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা!

ভাই আজ এই সম্পদ আর ক্ষমতার লোভ আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। এগুলো তাদের অপমান করার জন্য নয়, আমাদের শিক্ষার জন্য বলছি। আমরাও যার যার কর্মক্ষেত্রে সম্পদ আর পদের লোভে দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছি। পদের লোভ এমন যে আপনাকে পদ থেকে সরিয়ে দিলেই রাগ করেন। স্কুল-কলেজ কি মাদরাসা-মসজিদ, পদ থেকে সরিয়ে দিলেই ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। অন্যকে সেবার সুযোগ দিতে চায় না।

আমরা শুধু অন্যকে গালি দেই। উদ্দেশ্য ব্যক্তি নয়, ব্যক্তির চরিত্রই আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ধ্বংস হলো প্রবৃত্তির অনুসরণ আর মানুষের প্রশংসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে।’ (আল হাদিস)।

নেতার প্রশংসা করেনি, তাই পদ দেয় না। নেতার সমালোচনা করেছে, তাই চাকরিচ্যুত করেছে। আজ যখন জুলুমবাজরা বিভিন্নভাবে বেইজ্জতি হচ্ছে। অনেকেই বলছেন আপনারও তো জুলুম করছেন। না, আল্লাহ দেখাচ্ছেন জুলুমকারীর শাস্তি দুনিয়াতেও আছে। বিচারের দিনে শাস্তি তো আছেই, দুনিয়াতেও আছে তাদের জন্য লাঞ্ছনা।

দেখুন, হাদিসের ভাষ্যমতে, কিছু পাপের শাস্তি আখেরাতের আগে দুনিয়াতেই দেওয়া হয়। তার মধ্যে রয়েছে— ১. পিতা-মাতার সঙ্গে বেয়াদবি করা। ২. আলেমদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা। ৩. আল্লাহর দ্বীন নিয়ে বিদ্রূপ করা এবং ৪. অন্যের প্রতি জুলুম করা ইত্যাদি।

বিশ্বাস করুন— আল্লাহর কছম করে বলছি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিস আর উপদেষ্টা সালামান সাহেবকে দড়ি বাঁধা ও হাতকড়া পরা অবস্থায় দেখে চোখে পানি চলে আসছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(রাসুল,) আপনি বলুন, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সুরা আলে ইমরান: ২৬)।

সবশেষ নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিপক্ষকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের এ আয়াত শুনিয়েছিলেন। তিনি যদি আয়াতের মর্ম হূদয়ে ধারণ করে সে অনুযায়ী চলতেন তাহলে আজ তার এ অবস্থা হতো না। বিগত ১২/১৩ বছর ধরে আমরা দেখেছি, যেই গঠন সমালোচনা করেছে তাকেই গুম করে দেওয়া হয়েছে। কেউ হক কথা বলেছে, তার মতের বিপরীতে গিয়েছ, তাকেও গুম-খুনের শিকার হতে হয়েছে।

আজ আস্তে আস্তে সব কিছু বের হচ্ছে। আয়নাঘরে নিরপরাধ মানুষকে রেখে কী অমানুষিক নিতনই না করা হয়েছে। ব্যারিস্টার আরমান, ব্রিগেডিয়ার আমান আযমীসহ কত মানুষকে কতভাবে নিতন করা হয়েছে। তাদেরকে সুর্যের আলো দেখতে দেওয়া হয়নি। আজানের সময় উচ্চ আওয়াজে গান ছেড়ে দিত, যাতে আজান শুনতে না পায়। আযমী সাহেব দশ বছর পর গুম থেকে ফিরে এসে দেখেন, তার সব শেষ। বাবা-মা মারা গেছেন। স্ত্রীও দশ বছর অপেক্ষার পর অন্যত্র বিয়ে বসেছেন। এখন তিনি একা।

এসব দেখার পরও যারা তাদের সাফাই গান তাদের বলব, যাদের ওপর এমন জুলুম চলেছে তাদের ইতিহাস পড়ুন। ভাই আপনাদের বলছি, ঈমান নবায়ন করুন। জুলুমের সহযোগী হবেন না। মনে রাখবেন, জালিমের সঙ্গে আল্লাহতায়ালা তাদের সহযোগীদেরও শাস্তি দেন। দরিয়ায় শুধু ফেরাউন ডোবেনি, তার সহযোগীরাও ডুবে মরেছে।

এদিকে আইনমন্ত্রীকে দেখুন— আজ আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি! সালমান এফ রহমানের লাখো লাখো কোটি টাকা কোনো কাজেই আসছে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোনো কাজে আসবে না।’ (সূরা আশ-শুয়ার : ৮৮)। আরেক জায়গায় আল্লাহ এদের বাক্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো কাজেই এলো না। আমার ক্ষমতাও বিনষ্ট হয়েছে।’

অর্থাৎ, যেমন আমার মাল আমার কোনো উপকারে এল না, অনুরূপ উচ্চপদ, মদা, আধিপত্য ও রাজত্বও আমার কোনো কাজে দিল না। আজ আমি একাই এখানে সাজা ভুগতে বাধ্য। এ যেন আখেরাতের আয়াতের তাফসির দুনিয়াতেই আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

অতএব, সাবধান ধন-সম্পদ আপনার জন্য যেন ধ্বংসের কারণ না হয়। ইসলাম ধন-সম্পদে উপার্জনে নিষেধ করে না। আপনার যতটুকু প্রয়োজন হালাল পন্থায় ইনকাম করেন। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত করতে গিয়ে হারামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না। দুর্নীতিবাজদের কাতারে শামিল হবেন না। ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আসে। তাতে আপনি হিজবুল্লাহ হবেন, নাকি হিজবুজ শয়তান হবেন একটু ভাবুন।

আপনি অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করেন। স্ত্রী-সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। মসজিদের ইমাম, মুসল্লিদের সঙ্গে সপ্তাহে একদিন আপনার সাক্ষাৎ হয়। দুনিয়ায় শুধু কি অর্থ উপার্জনের জন্য এসেছেন? আপনার এ অভিশপ্ত জীবন সংশোধন করুন। ইবাদতের জন্য, স্ত্রী-সন্তানের জন্য সময় বের করুন।

সেদিন এক আরব শায়খ বলছিলেন— ‘কারো থাকার মতো একটা ঘরবাড়ি আছে আর পরিবারের ভরণ-পোষণের জোগান আছে এরপর তার আর দুনিয়ার পিছনে ছুটার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’ প্রয়োজন পূরণ হয়েছে এখন, আপনি আখেরাতের পেছনে সময় দিন। ভাই দুনিয়ার পেছনে ছুটতে গিয়ে আখেরাতকে বরবাদ করবেন না।

বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা কোনো ব্যক্তিকে অপমান করা জন্য নয়, আমাদের শিক্ষার জন্য বলছি। আসুন আমরা শিক্ষা নেই অন্যদের দেখে। সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে অন্যকে দেখে শিক্ষা নেয়, অন্যের জন্য শিক্ষার উপকরণ হন না।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি ভয় করি না যে তোমরা দারিদ্র্যের কারণে ঈমানহারা হবে, বরং আমি ভয় করি দুনিয়ার জাঁকজমকে তোমরা আচ্ছন্ন হবে। তোমরা এমনভাবে দুনিয়ার প্রাচুর্যের জন্য প্রতিযোগিতা করবে যেন পূর্ববর্তী উম্মতেরা করতো। প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে তোমরাও ধ্বংস হবে যেমন পূর্ববর্তীরাও ধ্বংস হয়েছিল।’ (আল হাদিস)।

আফসোস আজ আমরা সেটাই দেখছি! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। যে ধন-সম্পদ জমা করে আর বারবার গণনা করে।’ (সূরা হুমাজাহ : ১-২)।

ডা. কামরুল যিনি বিনা পয়সায় হাজারেরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি টাকা গুনি না। কারণ আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, যে টাকা বারবার করে গুনে রাখে তার ধ্বংস।’ এমন হোন ভাই, হ্যাঁ, আপনি গুনবেন। তবে তা বছরে একবার, জাকাত আদায়ের জন্য। বলবেন, আমি তো অ্যাভারেজ করে যাকাত দেই। আপনার অ্যাভারেজ লাগবে না। আপনি আল্লাহর নির্ধারিত ২.৫০% দেন তাহলেই হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরগুলোয় উপস্থিত হচ্ছ।’ (সূরা তাকাসুর : ১-২)।

অতএব, সবাইকে আহ্বান করব, যারা উল্টাপাল্টা লাইফস্টাইল ফলো করে আখেরাতকে ধ্বংস করছেন। তাওবা করুন, ফিরে আসুন দ্বীনের পথে। সন্তান ও সম্পদের মোহে নিজেকে বিভোর রাখবেন না, যাতে আপনার আখিরাত অনিশ্চয়তার দিকে চলে যায়। আল্লাহতায়ালা হেফাজত করুন সবাইকে।

১৬ আগস্ট ২০২৪ টঙ্গীর আন-নুর জামে

মসজিদে কৃত জুমার আলোচনা থেকে

অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ