মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ধ্বংসাত্মক সাত মহাপাপ থেকে সাবধান

প্রকাশনার সময়: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১৬:২৪ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১৬:২৮

রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিখ্যাত হাদিস, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি মূলনীতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে মানুষ যত ধরনের পাপ করে, অন্যায় ও গর্হিত কাজ করে তার মধ্যে নির্দিষ্ট সাতটি কবিরা গুনাহ যা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এগুলো অন্য সব কবিরা গুনাহ থেকেও বড় বিধ্বংসী মহাপাপ। প্রত্যেকটি কবিরা গুনাহই ভয়াবহ কিন্তু কেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সাতটি গুনাহকে আলাদাভাবে উল্লেখ করলেন? তা আমরা বুঝি এ হাদিস থেকে, আবু হুরায়রা এবং আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে সম্বোধন করে তিনবার বললেন, ‘ওই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ।’ তিনবার বলার পর তিনি উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন।

আমাদের প্রত্যেকেই উপুড় হয়ে পড়ে গিয়ে ক্রন্দন করতে লাগল। আমরা বুঝতেই পারলাম না যে, তিনি কোন কথার ওপর শপথ করলেন। অতঃপর তিনি স্বীয় মস্তক উত্তোলন করলেন। তাঁর চেহারায় তখন আনন্দের বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল, যা আমাদের কাছে সব রকমের নিয়ামত অপেক্ষা অধিক প্রিয় ছিল। অতঃপর তিনি বললেন— ‘যে বান্দা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজান মাসে সাওম পালন করে, জাকাত প্রদান করে এবং সাতটি কবিরা গুনাহ পরিত্যাগ করে থাকে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে যে, তুমি প্রশান্ত চিত্তে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (নাসায়ী)

প্রাসঙ্গিকভাবে মা-বোনদের জন্য একটি হাদিস উল্লেখ করছি। এমন চারটি কাজ যা করলে একজন নারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, মুসনাদে আহমদ)

সেই ধ্বংসকারী সাতটি ভয়াবহ গুনাহের কথা বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাতটি ধ্বংসকারী কাজ থেকে দূরে থাকো।’ সাহাবিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কাজগুলো কী কী?’ তিনি বললেন— (১) আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, (২) জাদু, (৩) আল্লাহ তায়ালা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা, (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেয়া।’

সুতরাং নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য জান্নাতের সবগুলো দরজা প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে হাদিস দু’টি অনুযায়ী আমল করলে। এবার চলুন এই সাতটি পাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

(১) আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা

যত প্রকার ইবাদত আছে সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে। ইবাদতের মধ্যে কোনোভাবে গায়রুল্লাহকে শামিল করলেই সেটা শিরক হয়ে যাবে। আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, হেদায়েত চাই। অথচ অনেককেই দেখবেন অন্যের সাহায্য চায়। কোনো ভারি বস্তু উত্তোলনের সময় গায়ে জোর দিয়ে বলে ‘ইয়া আলী’। এটা একটা প্রচলিত ও অসতর্ক শিরক। এগুলো শিয়াদের বিশ্বাস ও কালচার। আবার অনেকের সন্তান হয় না, মানত করে, চলে যায় ভারতের আজমীরে। চলে যায় মঈনুদ্দিন চিশতীর (রহ.) মাজারে। কতভাবে যে মানুষ শিরক করছে আল্লাহ মালুম। ওইদিকে চট্টগ্রামের বায়জীদ বোস্তামির (রহ.) মাজারের কচ্ছপকে খাওয়ায় মনোবাসনা পূরণ হওয়ার আশায়। আফসোস, এমনকি ঈমান ও তাওহীদের সর্বোচ্চ অনুশীলনের আমল হজ-ওমরায় যায় মানুষ। ওখান থেকেও গাইরুল্লাহর ভক্তি নিয়ে আসে! মদিনা থেকে আনে মরিয়ম ফুল। ওই ফুল খেলে নাকি বাচ্চা হয়। নাউজুবিল্লাহ।

কোরআন-হাদিসে যার নাম পেলাম না। আল্লাহ কতবার মক্কা-মদিনায় নিলেন, কোনোদিন স্থানীয় কোনো শায়খ বা আলেমের মুখে এ সম্বন্ধে কিছু শুনলাম না। অথচ আমাদের উপমহাদেশে এটার খুবই প্রচলন। শিরক সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই আমাদের দেশে ভণ্ডদের ব্যবসার সয়লাব। তারা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দেদার বিনা পুঁজির ব্যবসা করে যাচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের ঈমান।

ওই চাঁদপুরে যায় নেংটা পীরের কাছে। বলুন তো কোনো সুস্থ বোধসম্পন্ন মুসলমান ওই জায়গায় যেতে পারে? জাহিলি যুগে মুশরিকরা নেংটা হয়ে কাবাঘর (মসজিদুল হারাম) তাওয়াফ করত। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তা রহিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওহে বিশ্বাসীগণ! মুশরিকরা হলো অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন মাসজিদে হারামের নিকট না আসে।’ (সুরা তাওবা: ২৮)

মুশরিকদের কর্মরহিত হলেও দুঃখজনক সত্য যে তাদের কালচার রয়ে গেছে অনেক মুসলমানের মধ্যে। নেংটা নোংরা পীরের পেছনে দৌড়াচ্ছে মনোবাঞ্ছা পূরণের অলীক আশায়।

রাস্তায় চলছে আর বলছে বাবার নেক নজর আছে। অথচ ওই বাবার কবর খুঁড়লে একটা হাড্ডিও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি তার প্রতি নজর দেবেন কোত্থেকে! মোদ্দাকথা, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে দোয়া করা, দূর থেকে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা বা কোরবানি করা— এসবই শিরক ও জঘন্য কুসংস্কার। এসব থেকে বাঁচতে হবে।

(২) জাদু করা এবং জাদুতে বিশ্বাস করা

ইসলামে সব রকমের জাদু নিষিদ্ধ। ঈমান বিধ্বংসী হারাম ও কবিরা গুনাহ। জাদু দু’ধরনের।

এক. কাল্পনিক জাদু, যা জুয়েল আইচ দেখাত। কিছুক্ষণের জন্য মানুষের দৃষ্টি বিভ্রম করে কোনো উপকরণকে ভিন্নরূপে দেখানো।

দুই. স্থূল বা বস্তুগত জাদু। এ জাতীয় জাদু ভয়ঙ্কর। জিন বা শয়তানের সাহায্য নিয়ে ভালো বা মন্দ নিরূপণ করা, কাউকে কালো জাদু বা বান মারা ইত্যাদি। এ ধরনের জাদু স্পষ্ট শিরক। যারা এটা করে তাদেরকে বলে জাদু কর, তারা তাদের কাজের মাধ্যমে সরাসরি শিরকে লিপ্ত। তাদের ব্যাপারে কোরআনের মেসেজ, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করবেন না এবং তদ্ব্যতীত যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে সে মহাপাপে আবদ্ধ হলো।’ (সুরা নিসা: ৪৮)

তারা মূলত জিন ও শয়তানের কাছে সাহায্য নিয়ে এ কাজগুলো করে থাকে। অথচ নামাজে বলছে, ‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা ফাতিহা: ৪)

ঢাকার টাউন সার্ভিস আজমেরী, বলাকাসহ বিভিন্ন বাসে দেখবেন, স্বামী-স্ত্রীর অমিল দূর করা, মনের মানুষকে পাওয়ার জন্য কিংবা হারানো জিনিস খুঁজে পেতে এবং এমন নানা ধরনের তদবিরের বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। এসব কাজই শিরক। যারা এ ধরনের কাজ করে তারা মুসলিম হয়েও মুশরিকদের শামিল হচ্ছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে এসব হারাম কাজ, কবিরা গুনাহ ও শিরক। জাদু দিয়ে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা অনেক বড় গুনাহ। যার কারণে কিয়ামতের মাঠে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। ইসলামি রাষ্ট্রে জাদু মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। ওমর (রা.)-এর সময় তার গভর্নরদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘কোথাও জাদুকর কোনো নারী-পুরুষ পেলে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।’ জাদুকরদের কথা বিশ্বাস করাও শিরক। এদের মধ্যে আছে গণক, হস্তরেখাবিদ ইত্যাদি। তাদের কাছে যেতেও ইসলামে নিষেধাজ্ঞা আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে গিয়ে কোনো (ভূত কিংবা ভবিষ্যৎ ভালো-মন্দ বা অদৃশ্য) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তবে ওই ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল হয় না।’ (মুসলিম)

(৩) শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা

পৃথিবীর দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশে দেশে সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। যার কারণে হাজার হাজার মানুষ হত্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি এই হত্যার মিছিলে নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। মানুষের জীবনের যেন নিরাপত্তা কোনো জায়গাতেই নেই। বাসাবাড়ির বেলকুনি বা ছাদে পর্যন্ত শিশুদের গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার শিকার হতে দেখা যায়। অথচ ওমর (রা.)-এর সময় এক শিশু হত্যার অপরাধে এক নারী ও তিন জন পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তারপর তিনি বলেছিলেন— এ হত্যায় যদি (ইয়ামানের) সানআর সব অধিবাসী জড়িত থাকত। আমি তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিতাম। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত নয়, কোরআন থেকেই তিনি এটা নিয়েছেন। যে কারণে তৎকালীন সাহাবিরা এ বিচার নিয়ে কোনো দ্বিমত করেননি।

একজন মানুষকে হত্যা করা তো পুরো মানব জাতিকে হত্যা করার সমান অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময় অথবা ভূপৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির হেতু ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করল সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা করল সে যেন সব মানুষকেই রক্ষা করল।’ (সুরা আল-মায়িদা: ৩২)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীর সকলে মিলেও কোনো মুমিন হত্যায় অংশগ্রহণ করে তবুও আল্লাহ তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (তিরমিজি: ১৩৯৮) অপর হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহর নিকট পুরো বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ একজন মুসলিম হত্যা অপেক্ষা।’ (তিরমিজি: ১৩৯৫)

মানব প্রাণ-বধকারীর ঠিকানা জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দেবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি।’ (সুরা নিসা: ৯৩)

সুরা বাকারা, মায়িদা, আলে ইমরানসহ অনেক সুরায় খেয়াল করলে আপনি পাবেন যে একজন মানুষের জীবনের দাম কত! সুরা আল-ফুরকানে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন, ‘... এবং আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না।’ (আয়াত: ৬৯) এদের পুরস্কার হলো, ‘তাদেরকে প্রতিদান স্বরূপ দেয়া হবে জান্নাতে কক্ষ...।’ (আয়াত: ৭৫) এ সংক্রান্ত হাদিসও অনেক। নানাভাবে মানুষের জীবনের মূল্য এবং মানব জীবন হরণকারীর শাস্তি সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

একটি প্রাণ হত্যা করা এমন ধ্বংসকর ও শাস্তিযোগ্য গুনাহ, যেটা সম্বন্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের (হত্যার)।’ (বুখারি, মুসলিম)

(৪) সুদ খাওয়া

সুদ খাওয়া হারাম। এমনকি মদ, মলমূত্র, গোবর খাওয়ার চাইতেও খারাপ সুদ খাওয়া। সুদ খাওয়া মানে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধের শামিল।

সুদ সম্পর্কে আল্লাহর বানী, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯)

এই আয়াতকে কিভাবে জীবনে বাস্তবায়ন করতে হয় তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সা.)। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘জাহেলি যুগের যত সুদ আছে তা আজ আমার পায়ের নিচে ফেললাম।’ সুদখোর যারা আছো আমার কাছে আসো, আমি তোমাদের আসল টাকা দিয়ে দেব কিন্তু সুদ পাবা না।

আজ নানা সমিতি ও এনজিওর সুবাদে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে এই জঘন্য সুদ। সুদের কিস্তিতে লাখ লাখ মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে। আর শহরের মহল্লায় মহল্লায় সুদখোর মহাজন। মনে রাখবেন, যারা সুদ খায় তারা সমাজের নিকৃষ্ট কীট। এরা জীবনে সুখী হতে পারে না। এরা প্রাচুর্যের মধ্যে ডুবে থাকলেও দেখবেন নানা অশান্তির মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। এদের পরিণতি দুনিয়াতে সবার জন্য উদাহরণ হতে থাকে।

সুতরাং মায়ের সঙ্গে কুকর্ম করার চেয়েও এ নিকৃষ্ট পাপ থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। সুদখোর কেউ যেন মসজিদে কখনো দান না করে। তারা যেন কখনো আলেমদের দাওয়াত না করে। তাদের নাপাক অর্থের অভিশাপ যেন আমাদের স্পর্শ করতে না পারে।

(৫) এতিমের সম্পদ গ্রাস করা

পিতা মারা যাওয়া নাবালগ সন্তানরা শরিয়তের পরিভাষায় এতিম। কোনো এতিম সন্তানের সম্পদ অবৈধভাবে ভক্ষণ করা ভয়াবহ গুনাহের একটি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা জুলুম করে এতিমের মাল খায় তারা আসলে নিজেদের পেট আগুন দিয়ে ভর্তি করে এবং তাদের নিশ্চয় জ্বলন্ত আগুনে ফেলা হবে।’ (সুরা নিসা: ১০)

অপরদিকে এতিমদের প্রতিপালনকারীদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্যাঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন। এবং এ দু’টির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)।’ (বুখারি)

আফসোস, যেখানে সবার উচিত সর্বাত্মকভাবে এতিমদের পাশে দাঁড়ানো, সেখানে এতিমদের আপন চাচা-জেঠারা পর্যন্ত তাদের সম্পত্তি মেরে খায়। হাজী-গাজী কেউ যেন এ নিকৃষ্ট পাপ থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না।

(৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণের ভয়ে পলায়ন করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ। যুদ্ধ শুরু হয়েছে এমন সময় অনেকে ময়দান থেকে পালিয়ে যায়। এই ভীরু কাপুরুষের জন্য আল্লাহর সতর্কবার্তা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে বিশাল বাহিনী নিয়ে, তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না। আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাহলে সে আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণের জন্য হলে ভিন্ন কথা এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর সেটি কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা আনফাল: ১৫-১৬)

(৭) সতী-সাধ্বী মুমিন নারীকে অপবাদ দেয়া

কোনো সতী নারীর প্রতি অপবাদ রটানো নিকৃষ্ট খারাপ কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিল, অথচ চার জন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তাহলে তোমরা ওদের ৮০ বেত্রাঘাত করো, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নুর: ৪-৫)

এখানে সতী নারীর কথা বলে হয়েছে সাধারণত নারীদের চরিত্রেই কলঙ্ক লাগায় কুচক্রীরা। অন্যথায় এ আয়াতে নারী-পুরুষ উভয়ের চরিত্রেই কলঙ্ক লেপন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। বরং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি ৮০টি বেত্রাঘাত।

অথচ আফসোস, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উৎকর্ষের যুগে মানুষের ভিতর থেকে আল্লাহর ভয় উঠে যাওয়ায় একে অপরের চরিত্রে কী অবলীলায় কালিমা লেপনের প্রতিযোগিতা চলছে!

আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ভয়ঙ্কর সাতটি পাপ কাজ করা থেকে হেফাজত করুন।

২ আগস্ট ২০২৪ টঙ্গীর আন-নুর জামে মসজিদে প্রদত্ত জুমার আলোচনা থেকে অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ