মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

সব কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহর হাতে

প্রকাশনার সময়: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৭

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর এবং ভয় কর সে দিনকে, যখন কোনো পিতা তার সন্তানের পক্ষ থেকে কিছু আদায় করবে না, অনুরূপ কোনো সন্তানও তার পিতার পক্ষ থেকে আদায়কারী হবে না। নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সে প্রবঞ্চক যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর কাছেই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা মাতৃগর্ভে আছে। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ (সুরা লোকমান: ৩৩-৩৪)

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধায়ক। আসমানসমূহ ও জমিনের চাবিসমূহ তাঁরই কাছে। আর যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা আয-যুমার: ৬২-৬৩)

সুতরাং আল্লাহর সব সৃষ্টিই তাঁরই আদেশে হয়েছে, তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের অধীনে এবং তাঁর জ্ঞান ও পরিমাপ অনুযায়ী। অতএব তিনি ব্যতীত কোনো উপকরণ বা উপসর্গ কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, কোনো পেশা জীবিকা দেয় না, কোনো রোগ সংক্রমণ করে না, কোনো বিপদ ধ্বংস করে না, কোনো খাদ্য পুষ্টি দেয় না, কোনো ডাক্তার আরোগ্য দেয় না এবং কোনো উপার্জনকারী যথেষ্ট হয় না।

কাজেই শুভ-অশুভ কেবল আল্লাহর হাতেই, যাবতীয় কল্যাণ তাঁরই নিকট থেকে আসে এবং তিনি ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই। তিনিই স্বীয় সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহস্বরূপ কারণ বা উপাদানসমূহ নির্ধারণ করেছেন এবং তাঁর হিকমত ও প্রজ্ঞার নিয়ম অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালিত করেছেন। কারণসমূহের প্রভাব এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন, সৃষ্টি জগতে এর রহস্য প্রকাশ করেছেন, সৃষ্টিকুলের মাঝে এর জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদেরকে এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অধিকারী করেছেন। তাই যে ব্যক্তি কল্যাণের উপাদানসমূহ গ্রহণ করে সে কল্যাণের অধিকারী হয়, আর যে মন্দের কারণ গ্রহণ করে সে মন্দের অধিকারী হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অথচ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরি করো তাও।’ (সুরা আস-সাফফাত: ৯৬)

বিশুদ্ধ সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই, অশুভ লক্ষণ বলতে কিছুই নেই এবং পেঁচার ডাকে কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই, নক্ষত্রের প্রভাব নেই এবং সফর মাস অমঙ্গলের মাস নয়।’ সুতরাং সংস্পর্শ রোগ সৃষ্টি করে না, পাখির উড়াউড়ি অকল্যাণ বা কল্যাণ বয়ে আনে না, পেঁচা ও কাক ধ্বংস নিয়ে আসে না, নক্ষত্র ও তারকারাজি বৃষ্টি নামায় না এবং সফর মাসের আগমন কোনো অশুভ প্রভাব সৃষ্টি করে না।

ক্ষতি ও ধ্বংসের কারণগুলো এড়িয়ে চলার বিষয়ে নবী (সা.) থেকে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন কুষ্ঠরোগীর কাছাকাছি না যাওয়া, মহামারিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ না করা। কারণ, এক তাকদীর থেকে আরেক তাকদীরের দিকে পলায়ন করা এবং অমুখাপেক্ষী ও কল্যাণময় আল্লাহর ওপর ভরসা করা উচিত।

যে ব্যক্তি তার আগ্রহের বিষয় থেকে দূরে থেকেছে কোনো পরিস্থিতি অবলোকন বা কোনো কথা শ্রবণের কারণে; সে যেন তা থেকে বিরত না থাকে। বরং সে যেন তার মাওলার ওপর ভরসা রাখে এবং ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ পাঠ করে; কেননা এটা তাওয়াক্কুলের চাবিকাঠি এবং জান্নাতে বান্দার গুপ্তধন। আর সে যেন এ দোয়াও পাঠ করে; (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোনো মঙ্গল নেই। তোমার অকল্যাণ ছাড়া কোনো অকল্যাণ নেই। আর তুমি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই।’

আর যদি আপনি বসে থাকেন এবং কিছু না করেন, তাহলে আপনার হূদয় শিরকের স্বাদ আস্বাদন করবে। মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনাদেরকে তাঁর ওহীতে বরকত দান করুন, তাঁর শরিয়তের সঠিক বুঝ দান করুন, তাঁর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা দান করুন এবং তাঁর ওপর সত্যিকার ভরসা করার শক্তি দিন। তিনি বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই কাছে তওবা করো; আমার রব তো পরম দয়ালু, অতি স্নেহময়।’ (সুরা হুদ: ৯০)

দ্বিতীয় খুতবা

জেনে রাখুন! যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করবে এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করবে, তিনি তাকে হেদায়াত দেবেন এবং তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করবেন। আর যে ব্যক্তি অন্তর থেকে উপকরণের ওপর নির্ভর করবে আল্লাহ তাকে সেদিকে ন্যস্ত করবেন ও তার আশা-প্রত্যাশার বিষয়ে লাঞ্ছিত করবেন। যদিও সে দুনিয়ার কিয়দংশ পায় কিন্তু পরকালে সে হতাশ হবে।

বস্তুত জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বিপদ ও কষ্টসমূহকে কেবলমাত্র পাপের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদের হাত যা অর্জন করেছে তার কারণে এবং অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ-শুরা: ৩০)

সুতরাং এ থেকে মুক্তি নেই বিশুদ্ধ তওবা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন ছাড়া। মহাশক্তিধর আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে এমন উপকরণ সংঘটিত করার পাশাপাশি ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা গ্রহণ কোনো উপকারে আসে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারপর যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম এবং তাদের সকলকে নিমজ্জিত করে দিলাম।’ (সুরা আয-যুখরুফ: ৫৫)

জেনে রাখুন! একটি শরিয়তসম্মত পন্থা হলো, মানুষ যেসব ঘর, স্ত্রী, প্রাণী, ব্যবসা বা অবস্থায় কল্যাণ পায় না বা সেগুলোতে বরকত অনুভব করে না, কিংবা বাহ্যিকভাবে উপকরণ ঠিক থাকার পরও তাতে ত্রুটি, ধ্বংস বা ক্ষতি পায়; সে তা পরিবর্তন করবে।

হে আল্লাহর বান্দা! আপনি জেনে রাখুন, আল্লাহর আনুগত্যে যে সময় আপনি ব্যয় করবেন তা বরকতময়, অচিরেই আপনি এর নুর পাবেন। আর আল্লাহর অবাধ্যতায় যে সময় আপনি ব্যয় করবেন তা অমঙ্গলজনক, আপনি এর তিক্ততা আস্বাদন করবেন। আপনি পাপাচার ও হারামের স্থানগুলো থেকে সেভাবে পলায়ন করুন যেভাবে আপনি রোগের অনিষ্টতা থেকে পলায়ন করেন।

একদিকে যেমন সতর্কতা তাকদীর পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অপর দিকে আল্লাহ তায়ালা দোয়ার কারণে যা ইচ্ছা পরিবর্তন করে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না।’ (সুনানে তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

৯ আগস্ট ২০২৪ মদিনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার অনুবাদ

হারুনুর রশীদ ত্রিশালী

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ