মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

স্ত্রীদের সঙ্গে মহানবীর অভিমান

প্রকাশনার সময়: ২৮ জুলাই ২০২৪, ২০:৫০

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সাধাসিধে। তিনি স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যতা বরণ করেছিলেন। তাঁর পুণ্যবতী স্ত্রীরাও তা হাসিমুখে বরণ করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চম হিজরিতে আহযাব যুদ্ধের পর বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার বিজয় এবং গনীমতের বিপুল মালামাল প্রাপ্তির ফলে মুসলমানদের মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে আসে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীরা তাঁর কাছে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও অন্যান্য খরচাদি বৃদ্ধির আবেদন জানান। সাধারণ মুসলমানদের প্রাচুর্য দেখে মানুষ হিসেবে তাঁদের এ ধরনের আবেদন অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু নবী করীম (সা.) এতে মর্মাহত হন এবং তাঁদেরকে তালাক গ্রহণের অধিকার প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তাখয়ীরের আয়াত (আহযাব ৩৩/২৮-২৯) নাজিল হয়।

ওমর (রা.) পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মদিনার অদূরে বনু উমাইয়া ইবনু যায়েদের মহল্লায় বাস করতাম। আমরা দু’জন পালাক্রমে নবী করীম (সা.)-এর নিকট হাজির হতাম। একদিন তিনি যেতেন, আরেকদিন আমি যেতাম। আমি যেদিন যেতাম সেদিনের ওহী ও অন্যান্য খবর তাঁকে অবহিত করতাম। আর তিনি যেদিন যেতেন তিনিও অনুরূপ করতেন। আমরা কুরাইশ গোত্রের লোক মহিলাদের ওপর কর্তৃত্ব করতাম। কিন্তু আমরা যখন মদিনায় আনসারদের কাছে আসলাম, তখন দেখলাম মহিলারা তাদের ওপর কর্তৃত্ব করছে। ধীরে ধীরে আমাদের মহিলারাও আনসারী মহিলাদের রীতিনীতি গ্রহণ করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীকে ধমক দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সে প্রত্যুত্তর করল। তার এ প্রত্যুত্তর আমি অপছন্দ করলাম। সে বলল, আমার প্রত্যুত্তরে আপনি অসন্তুষ্ট হন কেন? আল্লাহর কসম! নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রীরাও তো তাঁর কথার প্রত্যুত্তর করে থাকেন এবং তাঁর কোন কোন স্ত্রী রাত পর্যন্ত পুরো দিন তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকেন।

একথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং বললাম, যিনি এরূপ করেছেন তিনি বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপর আমি জামা-কাপড় পরে (আমার মেয়ে) হাফছা (রা.)-এর নিকট গিয়ে বললাম, হে হাফছা! তোমাদের কেউ কেউ নাকি রাত পর্যন্ত পুরো দিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অসন্তুষ্ট রাখো? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তোমার কি ভয় হয় না যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন? ফলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর সঙ্গে বাড়াবাড়ি করো না, তাঁর কথার প্রত্যুত্তর করো না এবং তাঁর থেকে পৃথক থেকো না। তোমার কোনো কিছুর দরকার হলে তা আমাকে বলবে। তোমার প্রতিবেশিনী তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অধিক প্রিয় এটা যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন আয়েশা (রা.)-কে। সে সময় আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল যে, গাসসানের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ঘোড়াগুলোকে প্রস্তুত করছে।

একদিন আমার সাথী তার পালার দিন নবী করীম (সা.)-এর কাছে গেলেন এবং এশার সময় এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করে বললেন, তিনি (ওমর রা.) কি ঘুমিয়ে গেছেন? তখন আমি ঘাবড়িয়ে গিয়ে তাঁর কাছে এলাম। তিনি বললেন, বড় এক ঘটনা ঘটেছে? আমি বললাম, সেটা কী? গাসসানের লোকেরা কি এসে গেছে? তিনি বললেন, না, বরং তার চেয়েও বড় ঘটনা ও বিরাট ব্যাপার। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়েছেন। ওমর (রা.) বলেন, তাহলে তো হাফছার সর্বনাশ হয়েছে এবং সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার তো ধারণা ছিল যে, এমন কিছু ঘটতে পারে।

আমি কাপড় পরে বেরিয়ে এসে নবী করীম (সা.)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে নবী করীম (সা.) তাঁর কোঠায় প্রবেশ করলেন এবং একাকী বসে থাকলেন। তখন আমি হাফছা (রা.)-এর কাছে গিয়ে দেখি সে কাঁদছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে আগেই সতর্ক করে দেইনি? রাসুলুল্লাহ (সা.) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, জানি না। তিনি তাঁর ওই কোঠায় আছেন। আমি বের হয়ে মিম্বরের কাছে আসলাম, দেখি যে, লোকজন মিম্বরের চারপাশে বসে আছে এবং কেউ কেউ কাঁদছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বসলাম। তারপর আমার আগ্রহ প্রবল হলো এবং তিনি যে কোঠায় ছিলেন আমি তার কাছে আসলাম। আমি তাঁর এক কালো গোলামকে বললাম, ওমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। সে প্রবেশ করে নবী করীম (সা.)-এর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসে বলল, আমি আপনার কথা তাঁর কাছে উল্লেখ করেছি, কিন্তু তিনি নীরব রইলেন। তাই আমি ফিরে এসে মিম্বরের পাশে বসা লোকদের কাছে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর আমার উদ্বেগ প্রবল হলে আমি এসে গোলামটিকে বললাম, ওমরের জন্য অনুমতি গ্রহণ কর। এবারো সে আগের মতোই বলল। তারপর যখন আমি ফিরে আসছিলাম, তখন বালকটি আমাকে ডেকে বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে প্রবেশ করে দেখি তিনি খেজুরের পাতায় তৈরি ছোবড়া ভর্তি একটা চামড়ার বালিশে হেলান দিয়ে খালি চাটাইয়ের ওপর কাত হয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর ও চাটাইয়ের মাঝখানে কোনো বিছানা ছিল না। ফলে তাঁর শরীরের পার্শ্ব দেশে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং দাঁড়িয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আপনার স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়েছেন? তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, না।

এরপর আমি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমরা কুরাইশ গোত্রের লোকেরা নারীদের ওপর কর্তৃত্ব করতাম। যখন আমরা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে আসলাম, যাদের ওপর তাদের নারীরা কর্তৃত্ব করছে। এতে নবী (সা.) মুচকি হাসলেন। আমি বললাম, আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমি হাফছার ঘরে গিয়েছি এবং তাকে বলেছি, তোমাকে একথা যেন ধোঁকায় না ফেলে যে, তোমার প্রতিবেশিনী (সতীন) তোমার চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় ও নবী করীম (সা.)-এর অধিক প্রিয়। এ কথা দ্বারা তিনি আয়েশা (রা.)-কে বুঝিয়েছেন। নবী করীম (সা.) আবার মুচকি হাসলেন। তাঁকে মুচকি হাসতে দেখে আমি বসলাম এবং তাঁর ঘরের ভিতর এদিকে সেদিকে দৃষ্টি করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তার ঘরে তিনটি কাঁচা চামড়া ব্যতীত দৃষ্টিপাত করার মতো আমি আর কিছুই দেখতে পেলাম না। তখন আমি বললাম, আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, তিনি যেন আপনার উম্মতকে পার্থিব সচ্ছলতা দান করেন। কেননা পারস্য ও রোমবাসীদেরকে সচ্ছলতা দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে পার্থিব প্রাচুর্য দেয়া হয়েছে, অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তিনি তখন হেলান দিয়েছিলেন, বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব! তোমার কি সন্দেহ আছে যে, তারা এমন এক জাতি, যাদেরকে তাদের ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়ার জীবনেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমার ক্ষমার জন্য দোয়া করুন।

হাফছা (রা.) একথা আয়েশা (রা.)-এর কাছে প্রকাশ করলেই নবী করীম (সা.) স্ত্রীদের কাছ থেকে আলাদা হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি এক মাস তাদের কাছে যাব না। তাঁদের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভীষণ রাগের কারণে তা হয়েছিল। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। যখন ২৯ দিন কেটে গেল তিনি সর্বপ্রথম আয়েশা (রা.)-এর কাছে এলেন।

আয়েশা (রা.) তাঁকে বললেন, আপনি কসম করেছেন, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না। এ পর্যন্ত আমরা ২৯ রাত অতিবাহিত করেছি। যা আমি ঠিক ঠিক গণনা করেছি। তখন নবী করীম (সা.) বললেন, মাস ২৯ দিনেও হয়। আর এ মাসটি মূলত ২৯ দিনেরই ছিল।

আয়েশা (রা.) বলেন, যখন ইখতিয়ারের আয়াত নাজিল হলো তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমার কাছে এসে বললেন, আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই, তবে তুমি তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে এর জবাবে তাড়াহুড়ো করবে না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি ভালোভাবেই জানি, আমার পিতা-মাতা আপনার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার পরামর্শ কখনো আমাকে দেবেন না। তারপর নবী করীম (সা.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে সদ্ভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালীন সাফল্য কামনা কর তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সৎকর্মশীলদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব: ৩৩/২৮-২৯)

(আয়েশা (রা.) বলেন) আমি বললাম, এ ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কী পরামর্শ নেব? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য পেতে চাই। তারপর তিনি তাঁর অন্যান্য স্ত্রীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে একই জবাব দিল, যা আয়েশা (রা.) দিয়েছিলেন। (বুখারি: ২৪৬৮)

অপর বর্ণনায় রয়েছে- জাবির (রা.) বলেন, আবুবকর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছার জন্য অনুমতি নিতে আসলেন। দেখলেন বহু লোক তাঁর দরজায় বসে আছে, তাদের কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। রাবী বলেন, কিন্তু আবু বকরের জন্য অনুমতি দিলে তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর ওমর (রা.) আসলেন এবং অনুমতি চাইলেন। তাঁকেও অনুমতি দেয়া হলো। তিনি প্রবেশ করে নবী করীম (সা.)কে বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকতে দেখলেন। তখন তাঁর স্ত্রীরা তাঁর চারিদিকে বসা। ওমর (রা.) বলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, আমি এমন কথা বলব, যা নবী করীম (সা.)কে হাসিয়ে ছাড়বে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আপনি দেখতেন (আমার স্ত্রী) বিনতে খারেজা আমার কাছে এরূপ খরচ চাচ্ছে, তাহলে আমি উঠে তার ঘাড়ে কিছু লাগিয়ে দিতাম (প্রহার করতাম)। এতে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসলেন এবং বললেন, এই যে আপনি দেখছেন, তারা আমার চারপাশে ঘিরে আমার কাছে তাদের খরচাদি চাচ্ছে। অতঃপর আবু বকর (রা.) উঠে গিয়ে (তাঁর কন্যা) আয়েশার ঘাড়ে প্রহার করতে লাগলেন। ওমর (রা.) উঠে গিয়ে (কন্যা) হাফছার ঘাড়ে প্রহার করতে লাগলেন। তাঁরা উভয়ে বলতে লাগলেন, তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমন জিনিস চাচ্ছ যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এমন জিনিস চাইব না, যা তাঁর নিকট নেই। অতঃপর তিনি (পূর্ব প্রতিজ্ঞা অনুসারে) তাদের নিকট থেকে এক মাস বা ২৯ দিন পৃথক থাকলেন। তখন এ আয়াত নাজিল হলো— ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও ভোগবিলাস চাও তবে আস, আমি তোমাদেরকে কিছু দিয়ে ভালোভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাতকে চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব: ৩৩/২৮-২৯)

রাবী বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশাকে ধরে কথা বলতে আরম্ভ করে বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার কাছে একটি কথা বলতে চাই। আশা করি তুমি তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে ওই ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। আয়েশা (রা.) বললেন, তা কী হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কাছে আয়াতটি পাঠ করে শোনালেন। আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ব্যাপারেও কি আমি আমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ করব? বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাতকেই গ্রহণ করলাম। তবে আমি চাই যে, আমি যা বলেছি তা আপনি আপনার অন্য স্ত্রীদেরকে বলবেন না (দেখি তারা কী বলে?) তিনি বললেন, তা হবে না। তাদের মধ্যে যে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করবে (আয়েশা কী বলেছেন?) আমি তাকে তা বলব। কেননা কাউকে কষ্টে ফেলতে বা কারো পদস্খলন কামনা করতে আল্লাহ আমাকে পাঠাননি। বরং আমাকে শিক্ষা দিতে ও সহজ করতে পাঠিয়েছেন। (মুসলিম: ৩২৪৯)

উপরোক্ত ঘটনায় সতী-সাধ্বী স্ত্রীদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা সুখে-দুঃখে প্রাচুর্যে-অভাবে সর্বাবস্থায় পুণ্যবান স্বামীর একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে থাকেন। পার্থিব ক্ষুদ্র ও ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের জন্য তারা কখনোই পরকালীন চিরস্থায়ী সুখ বিকিয়ে দিতে পারেন না।

এ ছাড়া আরো প্রতীয়মান হয়, আল্লাহর রাসুল (সা.) মানুষ ছিলেন। বিধায় তাঁর মানবীয় গুণ, রাগ-অভিমান ও দুঃখ-বেদনা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক এসবের মাধ্যমে মাঝে মধ্যে ঝালাই হয়ে আরো প্রগাঢ়, দৃঢ়তর ও মধুর হয়। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও উম্মাহাতুল মুমিনীন-এর মধ্যকার এ ধরনের ঘটনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেন ভবিষ্যতে কোনো মুমিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এরূপ কোনো ঘটনা ঘটলে তারা যেন আলোচ্য হাদিসের অনুসরণে সংসার ভেঙে না দিয়ে আরো দৃঢ় করেন।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ