ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তাকওয়ার পোশাক কী?

প্রকাশনার সময়: ২৬ জুলাই ২০২৪, ২১:৫২

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বস্ত্র ও পোশাকের নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন, ‘হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্থান আবৃত করে এবং তা (তোমাদের জন্য) শোভাস্বরূপ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোৎকৃষ্ট। এগুলো আল্লাহর নিয়ামতরাজির অন্যতম। যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আ’রাফ (০৭): ২৬)

উপরোক্ত আয়াতে কারীমায় লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালা বাহ্যিক পোশাকের বাইরে আরেকটি পোশাকের কথা উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে, ‘লিবাসুত তাকওয়া’ বা তাকওয়ার পোশাক। সঙ্গে এ কথাও বলে দিয়েছেন যে, বাহ্যিক পোশাকের চেয়ে লিবাসুত তাকওয়াই অধিক উৎকৃষ্ট। কারণ বাহ্যিক পোশাক তো কেবল গরম বা ঠান্ডার তীব্রতা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। পক্ষান্তরে লিবাসুত তাকওয়া মুমিনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। তাছাড়া দুনিয়াবি পোশাক সর্বোচ্চ দুনিয়ায় অল্প কিছুদিনের জন্য কাজে আসবে। অথচ লিবাসুত তাকওয়া এমন পোশাক, যেটা দুনিয়াতেও মুমিনদেরকে সব অনিষ্ট থেকে হেফাজত করবে, আবার পরকালেও সেটা কাজে দেবে।

তবে ‘লিবাসুত তাকওয়া’ কী, কীভাবে আমরা তা অর্জন করব— কোরআনের আয়াতের ‘লিবাসুত তাকওয়া’ শব্দবন্ধের ব্যাখ্যায় সালাফে সালেহীন বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। তাকওয়ার লিবাস ধারণ করতে চাইলে আমাদেরকে এসব বিষয়ই হাসিল করতে হবে। সংক্ষেপে আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরছি—

১. ঈমান ও ইসলাম: যেহেতু মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয় হচ্ছে কুফর। আর দ্বীন ও ঈমান মানুষকে এ ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। তাই অনেকেই লিবাসুত তাকওয়ার ব্যাখ্যায় ঈমান ও ইসলামের কথা উল্লেখ করেছেন।

২. সৎ কাজ: জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে সৎ কাজের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ‘লিবাসুত তাকওয়া’ হিসেবে কোনো কোনো মনীষী সৎ কাজের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

৩. উত্তম পথ: যে কোনো বিষয়ে সফলতা লাভের জন্য সঠিক পথ ও পন্থা অবলম্বন করা প্রথম কর্তব্য। পরকালীন কাজের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। সেই বিবেচনায় লিবাসুত তাকওয়া ধারণ করতে হলে উত্তম পথে নিজেকে চালিত করা অনেক বেশি জরুরি।

৪. আল্লাহর ভয়: তাকওয়ার মৌলিক কথাই হচ্ছে, সব কাজে-কর্মে একমাত্র আল্লাহর হুকুম মেনে চলা এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়কে ভয় করে চলা। তাই লিবাসুত তাকওয়া গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই অন্তরে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে হবে।

৫. লজ্জাশীলতা: এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে সব ধরনের বিবস্ত্রতা ও বেহায়াপনা থেকে রক্ষা করে। সে মানুষের সামনে যেমন লজ্জাজনক কাজ থেকে বিরত থাকে, তেমনি আপন রবের অপছন্দনীয় কাজ করতেও লজ্জাবোধ করে। যার দরুন লজ্জাশীল ব্যক্তি খুব সহজেই লিবাসুত তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হন।

৬. বাহ্যিক পোশাক: উপরোক্ত গুণাবলির পাশাপাশি আমাদের বাহ্যিক পোশাক এবং চালচলনও এমন হওয়া উচিত, যা তাকওয়ার পরিচায়ক। (দ্র. তাফসীরে তবারী ১২/৩৬৬-৩৬৮)

লিবাসুত তাকওয়া এমন কোনো পোশাক নয়, যেটা মার্কেট থেকে কিনে এনে গায়ে জড়ানো যাবে। বরং এর জন্য চাই নিরলস চেষ্টা ও মুজাহাদা। পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া-মোনাজাত এবং রোনাজারিও কাম্য।

বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রায়ই তাঁর দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদেরকে লিবাসুত তাকওয়া দান করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৩০১৪৮)

এমনিভাবে প্রখ্যাত দুই জন তাবেয়ী সাঈদ ইবনে আবিল হাসান (রহ.) ও মালেক ইবনে দীনার (রহ.) এভাবে দোয়া করতেন— ‘হে আল্লাহ, আমাদেরকে ঈমানের ভূষণে সজ্জিত করুন এবং তাকওয়ার আচ্ছাদনে আবৃত করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৩০৫০৬)

লিবাসুত তাকওয়া হাসিলের আরেকটি উপায় হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াবি যেই পোশাক দান করেছেন, তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। এ কৃতজ্ঞতা যেমন জবানে উচ্চারণের মাধ্যমে, তেমনি পোশাকের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমেও। উদাহরণস্বরূপ উল্লিখিত সুরা আ’রাফের (২৬ নম্বর) আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট লক্ষ করা যায়। আয়াতটি নাজিল হয়েছিল কাফেরদের একটি মন্দ প্রথার অপনোদনে। তারা হজের সময় বিবস্ত্র হয়ে কা’বার তাওয়াফ করত এবং বলত, যেই কাপড় পরে আল্লাহর নাফরমানি করি, সেই কাপড় পরেই আবার আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করব! আল্লাহ তায়ালা শয়তানের এ ধোঁকার ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করার জন্য উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রথমত পোশাকের নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এরপর ইরশাদ করেছেন, ‘হে আদম সন্তান, শয়তান যেন তোমাদের কোনোভাবেই প্রতারিত করতে না পারে। যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল, তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য তাদের পোশাক সরিয়ে ফেলেছিল। সে ও তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে লক্ষ করে যে, তোমরা তাদের দেখতে পাও না। নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাদের সহযোগী করেছি।’ (সুরা আ’রাফ (০৭): ২৭)

অতএব, পোশাকের যথাযথ ব্যবহারে আমাদের যত্নবান হতে হবে। পাশাপাশি এর যেন কোনো অপব্যবহার না হয় এবং তা সংগ্রহে আমরা যেন কোনো অপব্যয়ের শিকার না হই, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ