মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

ছেলেমেয়ে ও নাতী-নাতনীদের সঙ্গে মহানবী (সা.)

প্রকাশনার সময়: ১০ জুলাই ২০২৪, ২৩:৪১

নবী (সা.) এর সিরাত বা জীবনচরিত পুরোটাই আলো। পুরোটাই হেদায়াত। দাওতয়া ও শিক্ষায়। রাজনীতিতে ও সমর নীতিতে। ইবাদতে ও আখলাকে। যেভাবেই থেকে সিঞ্চন করুন, হেদায়াত পাবেন। যেখানেই উপনীত হোন, পরিতৃপ্ত হবেন। এখানে আমরা ছেলেমেয়ে ও নাতী-নাতনীদের সঙ্গে শেষ নবীর সিরাত আলোচনা করব। পানি সিঞ্চনের এ উৎস আমাদের সামনে তাঁর মনুষত্ব ও পিতৃত্ব এবং স্নেহ ও কোমলতা ফুটিয়ে তুলবে। এতে সন্তানহারা পিতা সান্ত্বনা পাবেন। কারণ তার থেকে শ্রেষ্ঠ ও কোমলপ্রাণ ব্যক্তিও এর ভুক্তভোগী হয়েছেন। প্রত্যেকেই এতে পাবে নানা বিধান, শিক্ষার উপাদান ও বিধি নিষেধ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এক কুরাইশ যুবা। সমবয়সীদের মধ্যে তিনি সততা ও চারিত্রিক শুচিতায় ছিলেন স্বনামখ্যাত। তারা তাঁকে ‘আল-আমীন’ তথা বিশ্বস্ত হিসেবে ডাকতেন। তাদের মাঝে তাঁর জীবন-প্রকৃতি পরিভ্রমণ করেছে চাঁদ-সূর্যের ভ্রমণের মতো। খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রা.) তাঁকে শামগামী নিজের বাণিজ্য-কাফেলার তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন করেন। তাঁর সঙ্গে ভৃত্য মায়সারাকেও পাঠিয়ে দেন। তারপর এ সফরে বিস্ময়কর অনেক কিছুই হলো। খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.) এর প্রতি মুগ্ধ হলেন। ২৫ বছর বয়সে নবী (সা.) তাঁকে বিয়ে করলেন। খাদিজা ছিলেন নবীজির চেয়ে বয়সে ঢের বড়। নবীজির প্রথম ঘর (সংসার) প্রতিষ্ঠা হলো। যেখানে সৌভাগ্যের পতাকা পতপত করে উড়তে লাগল। চারপাশ থেকে ঈমানের উদ্ভাস বিকিরিত হতে লাগল। নবী (সা.) খাদিজাকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। পরবর্তীতে অন্য স্ত্রীরা এ নিয়ে ঈর্ষা করতেন। তিনি বলতেন, ‘আমাকে খাদিজার ভালোবাসা দান করা হয়েছে।’ খাদিজার সঙ্গে তিনি ২৫ বছর দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন। তিনি মারা যাওয়া পর্যন্ত নবী (সা.) আর কাউকে বিয়ে করেননি।

খাদিজার ঔরসে নবী (সা.) ছয় সন্তান জন্মলাভ করে। দুই ছেলে কাসেম ও আবদুল্লাহ। চার মেয়ে জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। কাসেম হলেন নবীজির প্রথম সন্তান। তার নামে তাঁকে আবুল কাসেম উপনামে ডাকা হতো। নবুয়্যত প্রাপ্তির আগে কাসেম শৈশবেই মারা যান। কাসেমের পর জন্মগ্রহণ করেন মেয়ে জয়নব। নবী (সা.) তাকে আবুল আস বিন রবির সঙ্গে বিয়ে দেন। তিনি স্বামীর আগে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হিজরত করেন। আবুল আস মক্কা-বিজয়ের প্রাক্কালে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর নবী (সা.) মেয়েকে তার কাছে ফেরত দেন। বদরযুদ্ধে আরো অনেকের সঙ্গে আবুল আসও মুসলিমদের হাতে বন্দী হন। মক্কাবাসীরা নিজ নিজ বন্দীকে ছাড়িয়ে নিতে মুক্তিপণ পাঠাল। জয়নবও স্বামীকে মুক্ত করতে কিছু অর্থ ও একটি হার পাঠালেন। হারটি ছিল বিয়ের দিন মেয়েকে দেয়া খাদিজার উপহার। হারটি চোখে পড়তেই রাসুল (সা.) অতি বেশী দ্রবীভূত হলেন। হারানো দিনগুলো স্মৃতিতে ভেসে উঠল। হূদয়ে কান্নার বাঁধ ভাঙা ঢেউ উঠল। ধরা গলায় তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি জয়নবের বন্দীকে মুক্ত করে দিয়ে তার হার ফেরত দিতে সম্মতি দাও, তবে তা করো।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)।

জয়নবের ঘরে জন্ম নেয় উমামা। মেয়েটির প্রতি রাসুল (সা.) ছিলেন অতি দুর্বল। উমামা বিনতে জয়নবকে কাঁধে নিয়ে তিনি নামাজ পড়তেন। নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় তাকে বহন করতেন আর সিজদায় গেলে নামিয়ে দিতেন। জয়নব (রা.) অষ্টম হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। মহিলারা তাকে গোসল করায়। নবী (সা.)-এর জামায় তাকে দাফন করা হয়।

জয়নবের পর নবী (সা.) এর আরেক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম দেন তিনি রুকাইয়া। তাঁকে বিয়ে দেন উসমান বিন আফফান (রা.)-এর সঙ্গে। বদর যুদ্ধের দিন তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হন। স্ত্রীর পাশে থাকায় উসমান (রা.) বদর যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। এ অসুস্থতায় তিনি মারা যান। রুকইয়ার মৃত্যুর পর নবী (সা.) উসমানের সঙ্গে আরেক মেয়ে উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেন। নবীজির দুই মেয়ে-জামাই হওয়ার সৌভাগ্যের কারণে উসমানের উপাধি ছিল জুন্নুরাইন বা দুই নূরের অধিকারী। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) একদা মসজিদের দরজায় উসমানকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে উসমান, জিবরিল এসে আমাকে জানিয়ে গেলেন যে আল্লাহ তোমার সঙ্গে রুকাইয়ার মোহরানাতেই উম্মে কুলসুমের বিয়ে দিয়েছেন।’ (ইবনে মাজা)

নবী (সা.) এর কনিষ্ঠা কন্যা ছিলেন ফাতিমা (রা.)। (তাঁর পরিচয় নতুন করে কী দেব?) তিনি কার মেয়ে? কার স্ত্রী? কার মা? কে আছে গর্বের উচ্চতায় তাঁর সমকক্ষ? নবী (সা.) ফাতিমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন পিতৃব্যপুত্র আলী বিন আবু তালেবের সঙ্গে। হিজরতের অষ্টম বছরে। ফাতিমা জান্নাতের দুই সর্দার হাসান ও হুসাইনকে জন্ম দেন। নবী (সা.) এ নাতীদ্বয়কেও অপরিমেয় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, ‘দুনিয়াতে এরা দু’জন আমার শস্যফুল।’

রাসুল (সা.) এক দিন খুতবা প্রদান করছেন। এমতাবস্থায় সেখানে হাসান-হুসাইন এলেন। লাল জামা পরা। তারা মাটিতে পড়ছেন আবার উঠছেন। নবী (সা.) মিম্বর থেকে নেমে তাদের তুলে নিলেন। তাদের মিম্বরে তুলে বসালেন। তারপর বললেন, আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের সম্পদ ও সন্তানরা তোমাদের জন্য পরীক্ষার বস্তু।’ (সুরা তাগাবুন: ১৫) আমি এদের দেখে আর ধৈর্য ধরতে পারলাম না।’ (সুনানের পাঁচ গ্রন্থ)

নবী (সা.) একবার সাহাবীদের নিয়ে নামাজ পড়ছেন। তিনি সিজদা অতিরিক্ত দীর্ঘ করলেন। পরে সাহাবীরা এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, ‘আমার ছেলে (নাতী) আমার পিঠে চড়েছিল। তাই আমি তাড়াতাড়ি করতে পছন্দ করিনি। যাতে সে তার প্রয়োজন (খেলা) সম্পন্ন করতে পারে।’ (আহমাদ ও নাসায়ি)

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ