ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

হজ পূর্ণ হওয়ায় হাজিদের অভিনন্দন

প্রকাশনার সময়: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭

হেমুমিন নর-নারীগণ! আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিয়ামতের জলাধর থেকে যা বর্ষণ করেছেন, তাঁর অগাধ অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন সেজন্য আপনাদেরকে ও আমাদেরকে অভিনন্দন। তাঁর নিয়ামতের ফল্গুধারা প্রবাহমান রয়েছে ও তাঁর অনুগ্রহের লক্ষণ উন্মোচিত হয়েছে।

অভিনন্দন বায়তুল্লাহতে হজ আদায়কারী ও তাঁর অনুরাগীদেরকে হজ সম্পন্ন করার নিয়ামত লাভের জন্য। অভিনন্দন এ দেশের শাসকদেরকে— হারামাইনের সেবা ও হাজীদের তত্ত্বাবধানের জন্য। সুতরাং আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা তাঁর অপার ও সীমাহীন অনুগ্রহের কারণে; এমন প্রশংসা যা দ্বারা তাঁর প্রকৃত হক আদায়ে আমাদের অপারগতা স্বীকার করছি এবং এর দাতা ও হকদারের অনুগ্রহের স্বীকারোক্তি প্রকাশ করছি।

হে মুমিন ভ্রাতৃবৃন্দ! পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদীনা ওহীর অবতরণস্থল ও রিসালাতের সূর্যোদয়ের স্থান। নিশ্চয় তা বরকতময় অঞ্চল ও পবিত্র ভূমি যেখানে আল্লাহর ওহী অবতরণ হয়েছে এবং রিসালাতের আগমন ঘটেছে ও তার পথচলা শুরু হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, তার অন্তরকে এর দিকে অনুগামী করা এবং এর পানে হূদয়কে আন্দোলিত করা। বস্তুত এ পবিত্র ভূমিতে অশ্রুধারা বর্ষিত হয় ও অনুভূতির কথামালা লেখা হয়।

সুতরাং এ স্থানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করুন এবং এর পবিত্রতাকে জানুন। আপনাদের নিকট মর্যাদাপূর্ণ স্থান, মর্যাদাপূর্ণ সময় ও মর্যাদাপূর্ণ লক্ষ্যের সমন্বয় ঘটেছে। আর নিঃসন্দেহে মর্যাদাপূর্ণ সময় ও শ্রেষ্ঠ স্থানে সৎ আমলের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে বান্দা কর্তৃক স্থান ও কালের মর্যাদাহানির দুঃসাহস দেখানোর কারণে শাস্তিও বিশাল হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে সেখানে অন্যায়ভাবে ইলহাদ তথা দ্বীনবিরোধী পাপ কাজের ইচ্ছে করে, তাকে আমি আস্বাদন করাব যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আল-হজ: ২৫)

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা পোষণের সঙ্গে শাস্তিকে সম্পৃক্ত করেছেন, তাহলে তা বাস্তবে পরিণত করলে তার শাস্তি কিরূপ হবে?! নবী (সা.) বলেছেন, ‘মদীনা হলো হারাম। এখানে যদি কেউ বিদআত করে কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তবে তার ওপর আল্লাহ, সব ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ। তার কোনো ফরজ বা নফল ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের ও আপনাদের সৎ আমলগুলো কবুল করুন এবং আমাদের ও আপনাদের মহৎ ইচ্ছাগুলো পূরণ করুন। আমাদের ও আপনাদেরকে কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে বরকত দান করুন এবং তাঁর তাকওয়াকে আমাদের জন্য উত্তম পাথেয় ও ঢাল হিসেবে নির্ধারণ করুন।

দ্বিতীয় খুতবা

আল্লাহর তাকওয়াই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ পাথেয়, উপযুক্ত পথ এবং সর্বোচ্চ স্তম্ভ; যে ব্যক্তি এর পোষাক পরিধান করে তার জন্য এটা শোভা, আর যে এর দ্বারা আত্মরক্ষা করে তার জন্য তা বর্ম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয় সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সুরা আল-বাকারা: ১৯৭)

হে মুমিন নর-নারীগণ, আমরা যখন হজের মৌসুমকে বিদায় জানাই, তখন আমরা একটি হিজরী সালকেও বিদায় দিই এবং আরেকটিকে স্বাগত জানাই। এগুলো হলো সেসব দিন যা একটি গুটিয়ে নেয়া হলে অন্যটি প্রকাশিত হয়; এগুলো পৃথিবীতে চিন্তাভাবনার দিগন্তকে উন্মুক্ত করতে এবং জমানার অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানায়। এ দিনগুলো বিভিন্ন পর্যায় ও বাহনের ন্যায়; যা আবর্তন করে ও প্রস্থান করে, এমন যুগ যা অতিক্রান্ত হয়, এমন যৌবন যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কাজেই এখানে স্থায়ী সুখ বা দীর্ঘস্থায়ী দুঃখের কিছু নেই। বস্তুত একজন মুমিন ব্যক্তি নতুন বছরকে সুধারণা ও শুভ কামনার সঙ্গে স্বাগত জানায় এবং অতীতের দিনগুলোকে তাতে কৃত সৎ উদ্দেশ্য, কথা ও কাজের সঙ্গে বিদায় জানায়।

২৮ জুন ২০২৪ মদীনার মসজিদে নববীতে প্রদত্ত জুমার খুতবার অনুবাদ হারুনুর রশীদ ত্রিশালী

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ