ঢাকা, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

নবজাতকের কানে আজান ইকামত দেয়ার গুরুত্ব

প্রকাশনার সময়: ০১ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৬

কোনো মুসলিম পরিবারে নবজাতক সন্তানের জন্ম হওয়ার পরপরই তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়াটা আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। শিশুর জন্ম হওয়ার পরপরই পরিবারের কেউ অথবা কোনো সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিকে ডেকে এনে আজান-ইকামত দেয়াটা আমাদের সমাজের প্রাচীন রেওয়াজ। এটা শুধু ঐহিত্য সংস্কৃতি বা রেওয়াজের ব্যাপার নয়, নবীজি (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ এবং ইসলামী শেয়ার। কিন্তু আধুনিক কালের হাওয়ায় আমরা এখন এসব ভুলতে বসেছি। অবশ্য পরিবেশ পরিস্থিতিও এখন ভিন্ন। সন্তান প্রসবের পদ্ধতি ও স্থানেও আগের থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে সাধারণত ঘরেই শিশুর জন্ম হতো, নিজস্ব পরিবেশে সুন্নাহ পালন করা তথা আজান-ইকামত দেয়া সহজ ছিল। আর এখন তো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম হয় হাসপাতালে, যে জায়গাটা আমাদের নিজস্ব না, পরিচিত না। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ পালনও কঠিন হয়ে যাচ্ছে আমাদের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আগ্রহও হারিয়ে ফেলছি। এটা মোটেই উচিৎ নয়। নবজাতকের কানে আজান-ইকামত দেয়াটা যেমন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, নবীজি (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ; সঙ্গে সঙ্গে শিশুর জীবনে এটার প্রভাব এবং উপকারিতাও অনেক বেশী।

উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি (রা.) বলেন, ফাতিমা (রা.) যখন হাসানকে প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কানে নামাজের আজানের ন্যায় আজান দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ: ৫১০৫)

শুআবুল ঈমানের বর্ণনায় আরেকটু কথা সংযুক্ত আছে। সেখানে ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। (শুআবুল ইমান: ৮৬২০) একই গ্রন্থের আরেক বর্ণনায় এসেছে, হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়।’ (শুআবুল ইমান: ৮৬১৯)

হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী (রহ.) নবজাতক শিশুর কানে আজান ও ইকামতের তিনটি উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন—

এক. পৃথিবীর আলো বাতাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগেই যেন শিশুটি আল্লাহর নামের মহান আহ্বানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে, আজান-ইকামতের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা হয়।

দুই. নবজাতক সন্তানকে শয়তানের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নাম সশব্দে উচ্চারণ করা হয়। এ আজান-ইকামতের মাধ্যমে শিশু শয়তানের সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। হাদীসে এসেছে, আজানের ধ্বনি শুনলে শয়তান বেহাল অবস্থায় পলায়ন করে।

তিন. জন্মের সঙ্গে সঙ্গে দেয়া আজানের মাধ্যমে শিশুর মনে জাগ্রত করে দেয়া যে, ‘শোনো হে নবজাতক! তুমি যে আজান শুনছ, এ আজানের পর তোমাকে এখনই নামাজে অংশগ্রহণ করতে হবে না। তবে অদূর ভবিষ্যতে তোমার জন্য একটা নামাজ অপেক্ষা করছে। সে নামাজের নাম জানাজার নামাজ। তাতে আজান দেয়া হবে না। আজানটা আজই দিয়ে রাখা হলো।

আজান শোনার পর মুসল্লীরা যেমন কাজকর্ম দ্রুত গুছিয়ে নামাজে শামিল হওয়ার জন্য ছুটে, ঠিক তেমনি তোমাকেও জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে শেষ নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। গাফেল হয়ে দুনিয়ার মধ্যে ডুবে গেলে চলবে না। (তরবিয়তে আওলাদ, হযরত থানবী (রহ.) একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ও দাঈ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) বলেন— আজান ও ইকামত শুধু নামাজের জন্য। নামাজের জন্যই নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত। আর এগুলো এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়, যারা এগুলো বুঝতে পারে।

তাহলে নবজাতকের কানে কেন এগুলো দেয়া হয়? এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? সম্ভবত এই যে, কোনো কিছু পৌঁছানোর আগেই শিশুর কানে সর্বপ্রথম আল্লাহর নামাজ ও তাঁর ইবাদতের ডাক যেন পৌঁছে যায়। এটা তো দুই জন শীর্ষ আলেমের বক্তব্য। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ এটি শেয়ার ও সুন্নাহর উপকারিতা উল্লেখ করেছেন। এগুলো উল্লেখ ছাড়াই তো আমলটা আমাদের কাছে মহান। আমাদের মহানবী (সা.) নিজে এ আমল করেছেন এবং অন্যদের করতে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক, পরিবেশ যেমনই হোক; আমাদের মুসলিম পরিবারের প্রতিটি সন্তান জন্ম নেয়ার পরপরই সে যেন আজান ও ইকামতের আওয়াজ শুনতে পায়। এই শুনিয়ে দেয়াটা আমাদের দায়িত্ব। সন্তানের হক। আমরা যেন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, সন্তান যেন তার হক থেকে বঞ্চিত না হয়; আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষক, মাদ্রাসাতুল হেরা, ঢাকা, মিরপুর-২, ঢাকা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ