মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

যেভাবে ছুটি কাটানোও হতে পারে ইবাদত

প্রকাশনার সময়: ২৮ জুন ২০২৪, ০৯:২২

জিলহজ মাসের মোবারক সময় ঈদ-উল আজহার ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে সুস্থ শরীরে আল্লাহ তায়ালা আবারো আমাদেরকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন জুমায় উপস্থিত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

আমরা জানি, রমজানের পবিত্র সময় চলে যাওয়ার পর এসেছে হজের মাস জিলহজ। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ-কোরবানী, তাও শেষ হলো। তবে ইসলামে বিশেষ সম্মানিত চার মাসের একটি জিলহজ এখনো বিদ্যমান। সামনে আসছে আরো একটি সম্মানিত মাস মহররম। আল্লাহ তায়ালা প্রবাহমান সময়ের পরিক্রমায় মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটান। কিন্তু এতে করে এক জন মুমিনের জীবনের লক্ষ্যের কোনো তারতম্য ঘটে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তুমি তোমার রবের ইবাদত কর মৃত্যু উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা আল-হিজর: ৯৯)

রমজান আসবে যাবে, জিলকদ, জিলহজ, মহররম আসবে যাবে। ইবাদতের সওয়াব কখনো বাড়বে বা কখনো স্বাভাবিক থাকবে। ইবাদতের সুযোগ কখনো কম থাকবে, কখনো বেশী থাকবে। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর কাছে ঈমান নিয়ে হাজির হওয়া। আখিরাতের দীর্ঘ সফর যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই, সেখানে কামিয়াব হওয়ার এ Mission & Vision থেকে আমরা কখনো পিছপা হবো না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ের পরিবর্তন ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন, আমাদের আগ্রহ বাড়ে না কমে। কখনো সওয়াব বাড়িয়ে বা স্বাভাবিক রেখে আল্লাহ দেখেন আমাদের আগ্রহ কেমন। আমাদের অনেকেই রমজানি, যাদের ইবাদত রমজানকেন্দ্রিক, আবার অনেককে শুধু জুমাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ চান আমরা যে অবস্থায় থাকি না কেন, তাঁর আনুগত্য যেন বজায় রাখি। আমাদের মূল লক্ষ্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর জান্নাত প্রাপ্তি এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টি।

আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মাখলুক মানুষ বানিয়েছেন। আল্লাহ চাইলে আমাদের গরু বা ছাগল বানাতে পারতেন যা গত কয়েক দিন আগে কোরবানী হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি আমাদেরকে তাঁর শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত করে পাঠিয়েছেন। তাই আমাদের টার্গেট হওয়া উচিৎ, কীভাবে আমাদের এ সুযোগ ও সময়গুলোকে ভালো কাজে ব্যয় করতে পারি।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘একটি বছর একটি বড় গাছ। আর ১২টি মাস গাছের বড় বড় ডাল। ১২টি মাসের সপ্তাহগুলো ডালের ছোট ছোট শাখা। তেমনি ঘণ্টা বা মিনিট হচ্ছে অসংখ্য প্রশাখা ও পাতা। আর আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে সময়গুলো অতিবাহিত করছি তা হচ্ছে গাছের ফল।’ আমরা সময়গুলো ভালো কাজে ব্যয় করলে তা হবে মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল আর অবহেলায় নষ্ট বা খারাপ কাজে ব্যয় করলে তা হবে এমন ফল যা আমরা গিলতে পারব না।

আমাদের যাপিত জীবনের সব কিছুই বিচার দিবসে আল্লাহ আমাদের সামনে হাজির করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর সেদিন উপস্থিত করা হবে ‘আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতঙ্কগ্রস্ত এবং তারা বলবে, হায়! দুর্ভোগ আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! ওটা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; তোমার রব কারো প্রতি জুলুম করেন না।’ (সুরা কাহাফ: ৪৯)

এ অবস্থা দেখে মানুষ যখন তার স্বভাবসুলভ বিভিন্ন অজুহাত দেয়া শুরু করবে তখন আল্লাহ তার মুখে তালা লাগিয়ে দেবেন। আল্লাহর বাণী— ‘আজ আমি এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেব। এদের হাত কথা বলবে আমার সঙ্গে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের।’ (সুরা ইয়াসিন: ৬৫)

আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে করা গুনাহগুলো সেদিন আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সেদিন আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। হায় আফসোস! মানুষ একটু ছুটি পেলেই ছুটে যায় পাশের দেশসহ নানা শহরে আমোদ-প্রমোদে, যেখানে হারাম পানীয় পান করা এবং নারী নিয়ে পাপের মধ্যে হাবুডুবু খায়। শেষে এমন মৃত্যু হয় অনেকের, শেষ চিহ্ন লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সন্তানও পরিচয় দিতে চায় না। (এমন নিকৃষ্ট মৃত্যু থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।)

আমার ভাইয়েরা, যদি উত্তম মৃত্যু ও সুন্দর পরিণতি চান তাহলে আপনার জীবনের প্রত্যেকটা সুযোগকে, প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহর পছন্দ ও নির্দেশনা মাফিক কাটাতে হবে। ঈদের ছুটি হয়েছে অফিসভেদে ৩/৫/৭/১০ দিন পর্যন্ত। আর কেউ তো আজীবনের জন্য ছুটি পেয়েছেন মানে, অবসর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা দেখবেন আপনি/আমি এ ছুটিগুলো কোথায় কাজে লাগাচ্ছি। এ অবসর ও সুযোগ কিভাবে কাটিয়ে দিচ্ছি। ছুটি তো আল্লাহ দিয়েছেন সুযোগ হিসেবে। এমন লোক আছে যারা এক দিনও ছুটি পাননি। পরিবারের ভরণপোষণ করার জন্য ঈদের দিনও তাকে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়েছে। অথচ আপনি সাত দিন অবসর পেয়েছেন। অথচ—

আপনি ছুটি কিভাবে কাটাচ্ছেন?

প্রথমেই নামাজ নাই! আমাদের অবস্থা তো এমন যে ছুটি বা আনন্দের দিনগুলোতে যেন নামাজ নাই। তা না হলে ছুটিতে মসজিদগুলো কেন মুসল্লীশূন্য? মনে হচ্ছে যেন ঈদের ছুটির সঙ্গে নামাজেরও ছুটি। অথচ বাস্তবতা হলো— সফর বলেন, ছুটি বলেন কিংবা অসুস্থ, মাজুর কোনো অবস্থাতেই নামাজের ছুটি নাই। যত কঠিন অবস্থা হোক নামাজ আপনাকে পড়তেই হবে।

এক জন ঈমানদার তার ছুটির দিনগুলোকে আনন্দের পাশাপাশি করে তুলতে হবে ইবাদতময়। অনেকে অবাক হবেন শুনলে যে ইসলামে আনন্দটাও ইবাদত। হ্যাঁ, আনন্দও ইবাদত যদি সেটা হয় আল্লাহর পছন্দমাফিক।

সুতরাং আমাদের এ ছুটির সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। ইবাদতে Convert করতে হবে। অথচ মানুষ এ ছুটির মতো নিয়ামতের ব্যাপারে উদাসীন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুুল (সা.) বলেছেন, ‘দু’টি নিয়ামত এমন আছে, যার ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত— সুস্থতা ও অবসর।’ (বুখারি: ৬৪১২)

অপর এক হাদিসে, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করো। তা হলো, ১. যৌবনকে মূল্যায়ন করো বার্ধক্যের আগে; ২. সুস্থতাকে মূল্যায়ন করো অসুস্থতা আসার আগে; ৩. সচ্ছলতাকে মূল্যায়ন করো দারিদ্র্য আসার আগে; ৪. অবসরকে মূল্যায়ন করো ব্যস্ততা আসার আগে এবং ৫. জীবনকে মূল্যায়ন করো মৃত্যু আসার আগে।’ (হাকেম: ৭৮৪৬; বায়হাকি: ১০২৪৮; সহিহুল জামে: ১০৭৭)

ঈদের ছুটি চলছে, এ ছুটির সময়গুলোকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাটালে আমাদের আনন্দও হবে পাশাপাশি অর্জিত হবে আখিরাতের পুঁজিও। এটা কিভাবে সম্ভব? সেটিই আজকের মূল আলোচ্য। জনৈক ফার্সি কবি বলেছেন, ‘আমি বলছি না তুমি ঘর-সংসার ছেড়ে মসজিদে এসে পড়ে থেকে ইবাদত কর। তুমি তোমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক স্বাভাবিক সব কর্ম কর, কোনো সমস্যা নেই। তবে যে কাজটাই কর তা আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী কর।’

এক জন মুমিনের প্রতিটা মুহূর্তই ইবাদত হবে যদি তা হয় আল্লাহর রেজামন্দি অনুযায়ী। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী। আপনি টয়লেটে আপনার প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করলেও তা ইবাদত, যদি তা সুন্নাহ মেনে করেন। এমনকি স্ত্রী সহবাসও ইবাদত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি দীর্ঘ হাদীসে বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সদকা।’ সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনি বললেন, ‘যদি যৌনক্ষুধা হারাম পন্থায় পুরো করো তাহলে কি গুনাহ হতো না? অনুরূপ যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তার পুণ্য হবে।’ (মুসলিম: ১০০৬)

শুধু কি তাই? স্ত্রীর জন্য আপনি কোনো কিছু কেনাকাটা করবেন এবং ভরণপোষণের জন্য যাবতীয় খরচ করবেন তাও ইবাদত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমার স্ত্রীর মুখে লোকমা তুলে দেয়াও সদকা।’ (বুখারি: ২৫৯১)

আসুন জানি ছুটির দিনকে কিভাবে আমরা ইবাদতময় করব—

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া

ছুটির দিনগুলোতে অনেকেই আমরা আত্মীয়দের বাড়িতে বা বিনোদনের উদ্দেশে বেড়াতে যাই। তো যেখানেই যান, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ছোট্ট দোয়াটি পড়ে বের হন।

আনাস ইবনু মালিক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে— ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছ, রক্ষা পেয়েছ ও নিরাপত্তা লাভ করেছ। সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ওই ব্যক্তিকে কী করতে পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে।” (আবু দাউদ: ৫০৯৫)

নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া

ছুটির সময় কিংবা আনন্দের দিনগুলোতে অনেকেই নামাজের প্রতি অবহেলা করেন। অলসতাবশত ফরজ নামাজ বা জামাত মিস করেন। এর চেয়ে ক্ষতির আর কিছু হতে পারে না। তেমনি ছুটিতে সফরে গেলে নামাজের প্রতি খেয়াল করে সময় নির্ধারণ করে বের হোন। যাতে যাত্রা বিরতিতে অথবা গন্তব্যে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন অথবা দুই ওয়াক্ত নামাজ একসঙ্গে পড়া যায় সেই নিয়মে যাতে পড়তে পারেন।

আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়া

আত্মীয়দের সঙ্গে আল্লাহর হুকুম পালনার্থে যোগাযোগ ও মোলাকাত করা একটি অবহেলিত অথচ বিশাল ইবাদত। আত্মীয়ের বাড়ি যেতে তাদের জন্য হাদিয়া নিয়ে নেন সামর্থ্য অনুযায়ী। যাতায়াত, হাদিয়া সংক্রান্ত সব খরচ আপনার নিয়তের কারণে ইবাদতে পরিণত হবে।

মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ

সবার আগে বাবা-মায়ের দেখা করুন। তাদের মুখে হাসি ফোটান। তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে তাদের কাছের মানুষদের খোঁজখবর নিন। তাদের কবর জিয়ারত করুন। তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। এসবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

শ্বশুরবাড়ি যাওয়া

সুযোগ থাকলে শ্বশুরবাড়ি যান। এতে আপনার স্ত্রীও খুশী হবেন, আত্মীয়ের হকও আদায় হবে। আর তা হবে ইবাদত। নিয়ত ঠিক করে তাদের জন্যও প্রয়োজনীয় খরচ করুন, সওয়াব পাবেন।

বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ

বাড়ি গিয়ে আপনার বাল্যকালের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও দেখা করুন। তাদের সঙ্গে খোশগল্প করুন। তাদের স্বাস্থ্য ও স্ত্রী-সন্তানদের কুশল জিজ্ঞেস করুন। তাদেরকে নামাজের দাওয়াত দিন। আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। আপনার প্রতিটা কদমে কদমে সওয়াব হবে।

এভাবে আমরা সুন্নাহ মেনে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা এবং তাদের খোঁজখবর নেয়া। তাদের প্রতি মনোযোগী হয়ে কোমল ভাষায় কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে এ কাজটাকেও ইবাদতময় করতে পারি। রাসুল (সা.) কারো সঙ্গে কথা বলতে বা শুনতে পুরো শরীর ঘুরিয়ে তার দিকে মুখ করে মনোযোগী হতেন। কোনো আত্মীয়, মুরব্বী, বন্ধুমহলে কথা বলতে গিয়ে পরিপূর্ণ মনোযোগী থেকে আমরা স্মার্টফোন পকেটে রাখব।

বৈধ খেলাধূলা ও চিত্তবিনোদন

ছুটির অবসরে হালাল বিনোদন ও শরীর চর্চামূলক খেলাধূলার আয়োজন করা যায়। ঘোড়দৌড়, তীর চালনা, বর্শা নিক্ষেপ, সাঁতার, কুস্তিসহ এমন যুদ্ধবিদ্যা ও শরীর চর্চামূলক খেলার প্রতি রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদীসে উৎসাহিত করেছেন। হাদীস ও কিফহের কিতাবে এসব বিষয়ে অনেক উদ্ধৃতি পাবেন। উকবা ইবনে আমের আল-জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা তীরন্দাজী করো এবং ঘোড়দৌড় শিক্ষা করো।’ (দারেমি: ২৪৪৪)

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তির সব ক্রীড়া-কৌতুকই বৃথা। তবে তার ধনুক দ্বারা তীর নিক্ষেপ, তার ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দান এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে তার ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। কারণ এগুলো উপকারী ও বিধিসম্মত।’ (প্রাগুক্ত)

অথচ আমাদের সমাজে তৈরী হচ্ছে একটা অলস ও অসুস্থ প্রজন্ম। এর প্রধান কারণ স্মার্টফোন আসক্তি। ছোট বাচ্চা, কিশোর-যুবক, সব বয়সের লোকই বিনোদন খুঁজি স্মার্টফোনে। অথচ এক সময় বিনোদন ছিল শরীর চর্চামূলক খেলাধূলা। গ্রামাঞ্চলে ঈদে বিবাহিত-অবিবাহিত জমজমাট ফুটবল খেলা হতো। এজন্য ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) বারবার বলতেন, ‘এ প্রজন্মকে বাঁচাতে আমাদের এখন শরীর চর্চামূলক খেলাধূলা ও বিনোদনকে সমাজে Promote করতে হবে।’

বই পড়া ও পাঠাগারে যাওয়া

ছুটির দিনে আমরা জীবন ঘনিষ্ঠ ও প্রয়োজনীয় এবং বিশুদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক বই পড়তে পারি এবং অন্যকে উৎসাহিত করতে পারি। কারণ জ্ঞান অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দেশের অধিকাংশ থানা ও ইউনিয়নে পাঠাগার আছে, সেখানে গিয়ে সময় কাটাতে পারি।

প্রবীণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ

আপনার এলাকার বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ লোক, যারা বিছানায় অসুখী সময় কাটাচ্ছেন, তাদের দেখতে যান। তাদের সঙ্গে একটু খোশগল্প করুন। এতে তারাও কিছু সময় প্রশান্তিতে থাকবেন, আপনিও তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে কিছু আহরণ করতে পারবেন। এটিও একটি বড় ইবাদত।

এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, সামাজিক ও মানব সেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে আমাদের ছুটি বা অবসরের দিনগুলোকেও ইবাদতময় করে তুলতে পারি। এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার পর ছাত্রছাত্রীদের লম্বা ছুটি ছুটি থাকে, এ সময়টাতেও তারা এমন সামাজিক কাজে অংশ নিতে পারে এবং উপরের আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে পারে।

২১ জুন/২৪ টঙ্গীর আন-নূর মসজিদে প্রদত্ত জুমাপূর্ব বয়ান

থেকে অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ