ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

পুণ্যবান পূর্বসূরিদের হজ

প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৪, ০৯:১৬

হাজিদের খেদমত

১. এলাকার সব হাজির খরচ বহন

আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি যখন হজের সফরের ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর এলাকা ‘মার্ভ’-এর বাসিন্দাদের একত্রিত করে বলতেন, তোমাদের কে কে এবার হজে যাবে?

যারা হজে যাওয়ার কথা জানাত তাদের থেকে তাদের হজের খরচাদি বাবদ জমা অর্থ নিজের কাছে নিয়ে নিতেন। সেগুলো একটি সিন্দুকে রেখে সিন্দুক তালা দিয়ে দিতেন। অতঃপর নিজ খরচে এলাকার সব হজযাত্রীকে নিয়ে হজের উদ্দেশে বের হতেন। সফরে মুক্তহস্তে উদারচিত্তে তাদের পেছনে খরচ করতেন। উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। মক্কা থেকে বিভিন্ন হাদিয়া-তোহফা কিনে দিতেন। এলাকায় ফিরে একটি দাওয়াতের আয়োজন করতেন। এরপর সিন্দুক খুলে প্রত্যেকের জমানো টাকা যার যার কাছে ফিরিয়ে দিতেন।

(তারীখে বাগদাদ ১/১৫৮; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৭/৩৬৯; লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ৫১৭)

২. নিজ সাগরিদের খেদমত

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, আমি (হজ ও অন্যান্য) সফরে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সঙ্গী হতাম এ উদ্দেশ্যে যে, তাঁর একটু খেদমত করার সুযোগ হবে। কিন্তু দেখা যেত উল্টো তিনি আমার খেদমত করছেন।

-কিতাবুল জিহাদ, ইবনুল মুবারক ১/১৫৯; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩/১৪৮

৩. তিন শত উট হাজীদের খেদমতে

সুলাইমান ইবনে রাবী বলেন, আমি বসরার এক কাফেলার সঙ্গে হজের সফরে ছিলাম। হজের পরে আমরা আব্দুল্লাহ ইবেন আমর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। হঠাৎ আমরা উটের এক বিশাল বহর দেখতে পেলাম। একশত উট যাত্রীবাহী ও দুই শত উট মালবাহী। আমরা লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম এ বহরটি কার?

তারা বলল, এটি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর বহর।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, পুরোটিই কি তিনি নিয়ে এসেছেন।

তারা বলল হাঁ, পুরোটাই তাঁর।

আমরা প্রশ্ন করলাম, একজন বিনয়ী ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী ব্যক্তি হয়েও তিনি কীভাবে এ বিলাসী বহর নিয়ে এলেন?

তারা বলল আপত্তি কেন করছেন? যাত্রীবাহী উটগুলো তিনি তাঁর ভাই-বেরাদার ও পাড়া-প্রতিবেশী হাজীদের যাতায়াতের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। আর মালবাহী উটগুলো দূর-দূরান্ত থেকে আগত হজযাত্রী ও মেহমানদের আহার ও আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনার জন্য রেখেছেন।

বিষয়টি শুনে আমরা খুবই বিস্মিত হলাম। তারা বলল, আশ্চর্যের কিছু নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ধনী ও সম্পদশালী লোক। তিনি তো মনে করেন, তাঁর কাছে আগত সব হাজীর মেহমানদারী করা তাঁর দায়িত্ব।

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কোথায় আছেন?

তারা বলল, মসজিদে হারামে অবস্থান করছেন।

আমরা তাঁকে খুঁজতে বের হয়ে দেখি, তিনি বাইতুল্লাহ পেছনে পাগড়ি ও দুটি চাদর পরে সাধারণ মানুষের মতো বসে আছেন। গায়ে কোনো জামা পর্যন্ত নেই। বাম দিকে জুতাটি ঝুলিয়ে রেখেছেন। তাঁর এ অবস্থা দেখে আমাদের আরও ভুল ভাঙল। -মুসতাদরাকে হাকেম ৪/৫৭৭; হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/২৯১

মক্কা ও হারাম এলাকার প্রতি সম্মান

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর দুটি তাঁবু ছিল। একটি হারাম এলাকায়, অপরটি হিলে। হারাম এলাকায় অবস্থিত তাঁবুতে নামাজ পড়তেন। আর হিলে অবস্থিত তাঁবুতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজন সারতেন। কেউ তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন- ভাই, এটি মক্কা, এটি মক্কা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৩/২৬৮)

তাল্ক ইবনে হাবীব বলেন, উমর (রা.) বলেন, আমার কাছে মক্কার বাইরে দশটি পাপ করার চেয়ে মক্কার ভেতর একটি পাপ করা গুরুতর মনে হয়। (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী ৫/৪৬৪)

হজের সফরে ইবাদত-বন্দেগি

১. মাসরূক (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- মাসরূক (রহ.) হজের দিনগুলোতে ঘুমাতেন না; তবে সিজদারত অবস্থায় ছাড়া। (অর্থাৎ সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন; কখনো সিজদায় গিয়ে ঘুম এসে যেত। ওইটুকুই ছিল তার ঘুম।) -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৭/১৪৭

২. যামরা ইবনে রবীআ ইমাম আওযায়ী (রহ.) সম্পর্কে বলেন- আমি ইমাম আওযায়ী (রহ.)-এর সঙ্গে হজ করেছি। দিনে বা রাতে কখনোই তাঁকে ঘুমাতে দেখা যায়নি। সারাক্ষণ নামায পড়তেন। -তারীখে দিমাশক ৩৫/১৯৫; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৭/১১৯

৩. মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন- মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, আব্দুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ হজের সফরে আমাদের কাছে এলেন। তাঁর একটি পায়ে অসুখ ছিল। এতদসত্ত্বেও তিনি এক পায়ে ভর করে ফজর পর্যন্ত নামায পড়লেন। এবং এশার ওযু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। -তারিখে দিমাশক ৩৪/২৩১; তাহযীবুত তাহযীব ৬/১৪০; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৫/১২

এই ঘটনাগুলো থেকে হজের সফরে ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায়। তবে সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখাও জরুরি। কারণ হজের সফরে অন্যান্য ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি হজই মূল আমল। আর তার জন্য সুস্থতা অপরিহার্য।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ