ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
জুমার বয়ান থেকে

দোয়া ইবাদতের মগজ

প্রকাশনার সময়: ১৭ মে ২০২৪, ১১:০০ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১১:০২

আমরা ইতোমধ্যে হজের মাস জিলকদে প্রবেশ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা জানি, আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাসকে হারাম বা নিষিদ্ধ এবং বিশেষভাবে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে তিনটি মাস আসে পরপর জিলকদ, জিলহজ, মহররম আর একটি হলো রমজানের আগে রজব মাস। জাহেলি যুগে কাফির-মুশরিকরাও এই মাসগুলোর সম্মানে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ রাখত।

এ চারটি মাসে গুনাহ করলে যেমন বেশি গুনাহ, আবার সওয়াবের কাজ করলেও অন্য আটটি মাসের চেয়ে বেশি সওয়াব। জিলকদ প্রথমত হজের মাস, দ্বিতীয়ত সম্মানিত মাস। তাই এই মাসে আমাদের ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেব এবং যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বিরত থাকব।

প্রতি বছরের মতো এবছরও জিলকদ মাসের প্রথম দিন থেকেই যথারীতি আমাদের উপমহাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মানিত হাজিগণ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলতে বলতে মক্কায় প্রবেশ শুরু করেছেন।

হজের একটি বিশেষ আমল যার সুযোগ সারা বছর মুমিনের অবারিত থাকে তা হলো দোয়া। হজের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ দোয়া। হজের সময় বেশি বেশি দোয়া করা বিশেষ কাঙ্ক্ষিত আমল। কাবা ঘর তাওয়াফ করা— এটা হজের ফরজ, গুরুত্বপূর্ণ ও রিপিটেড দামি আমল। তাওয়াফ একমাত্র আমল যেটা মক্কাতেই সম্ভব, অন্য কোথাও নয়। এমনকি মদিনাতেও নয়। যেহেতু সুযোগটা সব স্থানে থাকে না, তাই তাওয়াফের সময় দোয়া করার সুযোগটা হাত ছাড়া করা উচিত নয়। অথচ অনেক মানুষ সেখানে গিয়ে সেলফি তুলে অযথা সময় নষ্ট করে। দুঃখজনক হলেও সত্য অনেক শিক্ষিত মানুষও এই বাজে ব্যাপারটিতে জড়িয়ে যায়।

তো তাওয়াফের পুরোটাই দোয়া করার সময়। এরপরের কাজটা হলো সাফা-মারওয়া সাঈ করা। অর্থাৎ সাফা-মারওয়ায় সাঈ তথা দ্রুত হাঁটা ও দৌড়ানো। এ সময়ও বেশি বেশি দোয়ার আমল। এরপর হাজি সাহেবরা মিনায় যাবেন। সেখান থেকে আরাফায়, সেখান থেকে মুজদালিফায় , তারপর জামারাতে যাবেন। সেখানে আল্লাহকে খুশি করার জন্য এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)কে অনুসরণ করে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এই যে কাবাঘর থেকে জামারাতের দীর্ঘ সফর— এর পুরোটাজুড়ে সাধারণ একটি আমল যা বেশি বেশি করতে হয় তা হলো দোয়া। তাহলে হজের প্রধান কাজই হলো দোয়া।

আমরা জানি, হজের ঠিক আগের মৌসুম হলো রমজানের মৌসুম। আর এই রমজান মাসের বিধিবিধান আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারায় দিয়েছেন। রমজানের বিধানের দীর্ঘ আলোচনার অব্যবহিত পরের আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও, নিশ্চয়ই আমি সন্নিকটবর্তী। কোনো আহ্বানকারী যখনই আমাকে আহ্বান করে তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে— তাহলেই তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পারবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৬)

এখানে আল্লাহ বলছেন, আমি দূরে নয়, আমি খুবই কাছে। অতএব তোমাদের প্রয়োজনে যে কেউ যেখান থেকেই আমাকে ডাকবে, আমি সেই ডাকে সাড়া দেব। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের মাধ্যমের দরকার নেই। অর্থাৎ সরাসরি তোমরা ডাকো, সরাসরি আমি সাড়া দেব।

এ আয়াতের তাফসিরে, ইবনে সাদি (রহ.)সহ মৌলিক ব্যাখ্যাদাতারা, সাহাবিরা (রা.) ও তাবেয়িরা (রহ.) বলেছেন, রমজান প্রসঙ্গে আলোচনার পরই এ আয়াতের দ্বারা আল্লাহ বোঝাচ্ছেন রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুষজ্ঞ দোয়া করা। পুরো রমজানজুড়ে আমল— দোয়া করা। হজের অনুষঙ্গও দোয়া। শুধু তাই নয়, মুমিনের সারা জীবনের বিশেষ আমলও দোয়া।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের রব বললেন, তোমরা আমাকেই ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা অহংকারে আমার ইবাদাতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা গাফির: ৬০)

প্রতিটি নামাজের প্রতি রাকাতে আমরা সুরা ফাতিহায় বলি, ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ কিন্তু আমাদের দেশে কিছু পীর ও মাজারপন্থি গ্রুপ আছে। তারা তাদের বক্তব্যে মৃত পীর এবং অলি-আউলিয়ার নামে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। তারা আবার গান গায়, আল্লাহর ধন নবীরে দিয়া আল্লাহ গেছেন গায়েব হইয়া। নাউজুুবিল্লাহ।

আল্লাহর কাছে চাইতে কোনো ধরনের মাধ্যমের দরকার নেই। কোনো পীর যদি বলে, ‘আল্লাহর গোলামিই আমাদের কাজ। আমরা কেবল আপনাদের সেই গোলামি ও বন্দেগি শিখিয়ে দিই। আমরা কোনো ক্ষমতার মালিক নই। আমার কাছে কিছু নাই।’ তাহলে ঠিক আছে। আর যদি বলে জাহাজে বা প্লেনে উঠে আল্লাহর কাছে যেতে হবে, সেটা আছে আমার কাছে। জান্নাতের টিকিট আছে আমার কাছে। তাহলে বুঝবেন ডাল মে কুচ কালা হ্যায়...। সে ভণ্ড পীর।

বেশ কিছু দিন আগে আমাদের দেশের সুফি নামের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজমীরে পীরের মাজারে গিয়ে হাত পা টান করে চিত হয়ে শুয়ে পীরের কাছে সাহায্য চায়। নাউজুবিল্লাহ। কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাবরী মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির উদ্বোধনকালে ঠিক যেভাবে মূর্তির পায়ের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন ঠিক সেভাবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অচিরেই পুর্ববর্তীদের এমনভাবে অন্ধ অনুসরণ করবে, যে তারা গুইসাপের গর্তে ঢুকলে তোমরাও ঢুকবে।’

আমরা অলি-আওলিয়াবিরোধী না। তাদের ইলম অনুযায়ী তারা জাতির খেদমত করে গেছেন। আমরা তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করি। তাদের অন্ধ ভক্তরা তাদের নিয়ে অতি ভক্তি আর বাড়াবাড়িতে ব্যস্ত। আমরা সেটার বিরোধিতা করি। এই দেশে বিনা পুঁজির এক সফল ব্যবসা মাজার ব্যবসা। যে ব্যবসায় ক্ষতি নাই। মসজিদে দান বা মাদ্রাসার ছাত্রদের কিতাব কেনার জন্য টাকা চাইলে এক টাকাও বের হয় না। অথচ তারা মাজারে গিয়ে হাজার হাজার টাকা দিয়ে আসে। বিশ্বাস না হলে মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও পুরান ঢাকায় গিয়ে একটু ঘুরে আসুন।

যদি আমি কালকে মসজিদের সামনে একটি ডেকচি রেখে লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে বলি- আমি স্বপ্নে দেখেছি এখানে টাকা দিলে মনের আশা পূর্ণ হয়। দেখবেন টাকায় ডেকচি ভরে গেছে। হুজুগে বাঙালি, আল্লাহ হেদায়েত দান করুন।

অথচ আল্লাহ তায়ালা বললেন— বান্দা তোর কিসের অভাব? সন্তান, সম্পদ, সুস্থতা...? যা কিছু দরকার আমার কাছে সরাসরি চা, আমি তোকে সরাসরি দিয়ে দেব। তো আমাদের উচিত প্রয়োজনগুলো আল্লাহর থেকে চেয়ে নেয়া। তাহলে দোয়া শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর যে লোক মারা গেছে, কবরে চলে গেছে তার কাছে কোনো কিছু চাইলে শিরক হবে। সুতরাং কবরে বা মাজারে চাওয়া যাবে না। দোয়া একমাত্র আল্লাহরই হক।

কিন্তু আফসোস দেশে কোটি কোটি মুরিদ আছে এমন, যারা কোনো কিছুর প্রয়োজন হলেই চলে যায় বাবার কাছে। চলে যায় মাজারে। তাদের ধারণা, আমরা গুনাহগার তাই আমাদের কথা আল্লাহ শুনবেন না। তারা নেককার বান্দা, তাই তাদের মাধ্যম দিয়ে চায়। নাউজুবিল্লাহ। এটাই তো মুশরিকদের যুক্তি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কে? তবে অবশ্যই তারা বলবে- আল্লাহ্।’ (সুরা যুখরুখ: ৮৭) পৃথিবীর কোনো কাফের-মুশরিকের এখানে কোনো দ্বিমত নেই যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আপত্তি তো একমাত্র ইলাহ মানতে। ইবাদের পাওয়ার একমাত্র হকদার আল্লাহ, এটা মানার ব্যাপারে। আফসোস একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ এই ধোঁকা ও গোমরাহির মধ্যে পড়ে আছে। প্রতিদিন কোরআন-হাদিসের আলোকে বুঝানোর পরেও মানুষ বুঝ নিচ্ছে না।

দোয়ার মূল প্রসঙ্গে আবার আসি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে যে দোয়াগুলো করি তা দুই প্রকার—

১) প্রয়োজন পূরণের দোয়া

উপরে উল্লিখিত সুরা গাফিরের প্রথম দিকে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকলে আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দেব— এটা চাওয়ার দোয়া। যেমন ধরুন চিকিৎসা নিচ্ছেন, কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ সময় আল্লাহর কাছে চান। আল্লাহকে আপনার প্রয়োজনগুলো খুলে বলুন। সন্তান হয় না, আল্লাহর কাছে চান। সন্তান কথা শোনে না, আল্লাহকে বলুন। পারিবারিক সমস্যা? আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। আমাদের জীবনে দুনিয়া ও আখিরাতের সব প্রয়োজন আল্লাহর কাছে জানাব। এটা হলো চাওয়ার দোয়া।

২) ইবাদতের দোয়া

উক্ত আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ বলছেন, ‘যারা ইবাদতের দোয়া করে না (অর্থাৎ ইবাদত করে না) অহংকার বা উদাসীনতায় যারা ইবাদত ছেড়ে দেয়, তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাসহ জাহান্নামের আগুন।’

আমরা অনেকেই মনে করি আমার তো বয়সই হয়নি, এখনো বিয়েই করি নাই, গাড়ি-বাড়িই করি নাই। এখনই ভালো হওয়া লাগবে? এখনই হুজুর হওয়া লাগবে? পীর সাহেব হওয়া লাগবে? বুজুর্গ হওয়া লাগবে? এগুলো বলা যাবে না ভাই। রবের দিকে ফিরে আসতে হবে।

দিনে পাঁচবার কল্যাণের জন্য ডাকার পরও অহংকারবশত অনেকেই নামাজে আসে না। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, তাদেরকে আমি জাহান্নামের মধ্যে জড়ো করব, প্যাকেট করব। নামাজ একটা ইবাদত। এই নামাজের মাধ্যমে আমরা দোয়া করি। সুরা ফাতিহা, কুনুত, দরুদ, মাসুরার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে চাই। এটা ইবাদতের দোয়া।

রাসুল (সা.) সব সময় দোয়ায় লিপ্ত থাকতেন, তাঁর মুখে লেগেই থাকত— আল্লাহু আকবার, সুবহানআল্লাহু, আউজুবিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, ইত্যাকার কোনো না কোনো জিকির-দোয়া। ওমর (রা.) বলেন, ‘আমরা এক মজলিশে গণনা করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০০ বার ইস্তিগফার করতেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি।’ (বুখারি)

সেখানে আমার/আপনার কী অবস্থা? সপ্তাহ, মাস, বছর যায় আমার/আপনার আমলনামায় কোনো ইস্তিগফার নাই। তাহলে দেখেন আমাদের দোয়ার পরিমাণ কত কমে গেছে!

ঈমানের পর গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বারবার নামাজের কথা বলেছেন, দোয়ার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমাকে স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।’ (সুরা ত্বহা: ২০) নামাজ পুরোটাই দোয়া। নামাজ হচ্ছে আনুষ্ঠানিক দোয়া।

আল্লাহ হলেন মালিক, আমরা তাঁর গোলাম। আল্লাহ ধনী, আমরা গরিব। তিনি জ্ঞানী, আমরা অজ্ঞ। তিনি সব ক্ষমতার অধিকারী আর আমরা হলাম ক্ষমতাহীন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে লোকসকল! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্রিত হলেও; এবং মাছি যদি তাদের নিকট হতে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওটাও তারা ওর নিকট হতে উদ্ধার করতে পারবে না। পূজারি ও পূজিত কতই না দুর্বল!’ (সুরা হজ: ৭৩) আমরা আল্লাহর গোলাম বা দাস। আর বান্দার দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাঁর কাছে চাওয়া বা দোয়ার মাধ্যমে। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুশি হন। মানুষের কাছে কোনো কিছু একবার, দুইবার চাইলে মানুষ বেজার হয়। আল্লাহ আমাদের এমন রব, তিনি না চাইলেই বরঞ্চ অখুশি হন। তাই আমাদের সব কিছু আমরা আল্লাহর কাছেই চাইব।

নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। আমাদের মসজিদে নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত হয় না। আমরা সম্মিলিত মোনাজাত করি না, মোনাজাত নাই এজন্য? না! আমরা সম্মিলিত মোনাজাত করি না বরং দোয়া করার উত্তম পন্থায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য। ফরজ নামাজের পরমুহূর্ত দোয়া কবুলের সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। তাই শ্রেষ্ঠ উপায়েই মোনাজাত করা উচিত। আর রাসুল (সা.) এ সময় যেভাবে দোয়া করেছেন সেটাই শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। আমরা সেটাই আপনাকে শেখানোর চেষ্টা করছি। শ্রেষ্ঠ উপায়ে মোনাজাতের সুযোগ দিচ্ছি। এ সুযোগটা হাটহাজারী মাদ্রাসায় পাবেন, কাকরাইল মসজিদে পাবেন, টঙ্গী ইজতেমার মাঠে পাবেন। সেখানে ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত মোনাজাত হয় না। এভাবে বরং রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

আল্লাহ ক্ষমাশীল, তাঁর দয়ার শেষ নাই। যত পাপী বান্দাই হোক আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে মাফ করে দেন। সুতরাং ফরজ নামাজের পর মাসনুন জিকির করে সময় নিয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে মোনাজাত করুন। কোরআন তিলাওয়াতের পর, রোজা রেখে ইফতারি সামনে নিয়ে, আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে, শেষ রাতে কয়েক রাকাত নামাজ পরে— এভাবে প্রত্যেকটা নেক আমলের পর হাত তুলে মন খুলে আল্লাহর কাছে চান। সফরের সময়, বৃষ্টির সময় আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। ওমর (রা.) বলতেন, ‘দোয়া কবুলের দায়িত্ব আমার নয়। ওটা তো স্বয়ং আল্লাহর হাতে। আমার দায়িত্ব দোয়ার জন্য হাত উঠানো। দোয়া করার ইচ্ছে আমার মনে যদি উদয় হয়, তার মানে আল্লাহ কবুল করবেন এমন ইশারা সেখান থেকেই এসেছে, যিনি কবুল করবেন।’ জনৈক সালাফ বলেন, ‘পৃথিবীতে আমরা যত ভালো কাজ দেখি সবগুলোর পেছনে আছে তাওফিক। তাওফিক মানে ভালো কাজ করার সুযোগ আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া। তিনি তাওফিক দিলে হবে, না হলে হবে না। তাহলে আমাদের করণীয় কী? তিনি বলেন, তাওফিক নামের তালার চাবি হলো দোয়া। তাই আমাদের কাজ বেশি বেশি দোয়া করা। সব ভালো কাজের জন্য আল্লাহর কাছে তাওফিক প্রার্থনা করা।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট বান্দার দোয়ার চেয়ে অধিক প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ জিনিস আর নেই।’ (তিরমিজি) রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘সব ইবাদতের মগজ হচ্ছে দোয়া।’ (তিরমিজি) অর্থাৎ এমন কোনো আমল নাই যার শুরু বা শেষে দোয়া নাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার কাছে বেশি বেশি দোয়া করা এবং তার ইবাদতকারী বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।

১০ মে ২০২৪ টঙ্গীর আন-নূর জামে

মসজিদে কৃত জুমার বয়ানের

অনুলিখন— মুহা. আব্দুল খালেক আশিক

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ