আল্লাহতায়ালার অসীম অনুগ্রহ যে তিনি রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনা শেষে ফিতরার মতো এক মহৎ বিধান দিয়েছেন। প্রথমত, ফিতরার মাধ্যমে দরিদ্রদের প্রতি সদয়তা দেখানো হয়, যেন ঈদের মতো আনন্দের দিনে হাত না পাততে হয়।
আর ধনীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। এতে করে ঈদ হয় সর্বজনীন। দ্বিতীয়ত, রোজাদারের রোজায় যে ত্রুটি ও গোনাহ হয়েছে, এর মাধ্যমে তা থেকে পবিত্র করা যায়। তৃতীয়ত, ফিতরার মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। কারণ, তিনি নিজ দয়ায় বান্দাকে পূর্ণ এক মাস রোজা, তারাবিহ, কোরআন খতম, দান-সদকাসহ নানাবিধ সৎকাজের সুযোগ দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জাকাতুল ফিতর তথা ফিতরা আবশ্যক করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তায় সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে, তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের খাদ্য জোগাতে। ঈদের সালাতের আগে আদায় করলে তা জাকাতুল ফিতর হিসেবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্য সাধারণ দানের মতো একটি দান হবে।’ (আবু দাউদ: ১৬০৯)।
ফিতরা মুসলিম নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার পক্ষে আদায় করতে হয়। ইবন উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজান মাসে স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সব মুসলিমের ওপর এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন।’ (বোখারি: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৪)।
গর্ভস্থ বাচ্চার পক্ষ থেকে জাকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়। কিন্তু কেউ যদি আদায় করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। উসমান (রা.) গর্ভস্থ বাচ্চার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতেন। ফিতরা নিজের ও স্ত্রী-সন্তানসহ নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকে আদায় করা আবশ্যক। তারা সামর্থবান হলে নিজেদের ফিতরা নিজেরা আদায় করা উত্তম। সংশ্লিষ্ট দিনে জাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীর জন্য ফিতরা ওয়াজিব। ঈদের দিন ও রাতের খরচ সম্পাদনের পর অতিরিক্ত ফিতরাযোগ্য সম্পদ থাকলে তার জন্য সুন্নত।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আমরা জাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা’ খাদ্য দ্বারা। তখন আমাদের খাদ্য ছিল বার্লি, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বোখারি: ১৫০৮; মুসলিম: ৯৮৫) অন্য বর্ণনায় খেজুর ও আটার কথা এসেছে।
ইরাকি মাপে এক সা’ সাড়ে তিন কেজি আর হিজাযি মাপে আড়াই কেজি। সুতরাং এসব খাদ্যের যে কোনো একটির এক সা’ পরিমাণ খাদ্য বা তার মূল্য ফিতরা দিতে হবে। কেবল গমের ক্ষেত্রে অর্ধ সা’ গমের অবকাশ রয়েছে। সবাই সর্বনিম্ন অর্ধ সা’ আটার মূল্যে ফিতরা না দিয়ে উল্লিখিত খাদ্যগুলোর মধ্যে নিজ নিজ আর্থিক সংগতি অনুসারে ফিতরা প্রদান কাম্য।
ঈদের চাঁদ ওঠা বা ৩০ রোজা পূরণ হওয়ার পর থেকে ঈদের নামাজের আগ পর্যন্ত ফিতরা দেয়ার ফজিলতপূর্ণ সময়। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মানুষকে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে ফিতরা দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।’ (বোখারি: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৬)।
ঈদের এক-দুই দিন আগেও ফিতরা আদায়ের অনুমতি রয়েছে। নাফে (রহ.) বর্ণনা করেন, ইবনে উমর (রা.) ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে জাকাতুল ফিতর দিতেন। (বোখারি : ১৫১১)। ফকির-মিসকিনসহ যে আট শ্রেণিকে জাকাত দিতে কোরআনে বলা হয়েছে, তাদের ফিতরা দিতে হবে। কাছের বা দূরের যে কোনো হকদারকে ফিতরা দেয়া যাবে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ