বিশ্বাসী মানুষমাত্রেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি চান, প্রার্থনা করেন জান্নাতপ্রাপ্তির। রমজানে জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়, খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজা। হাদিস শরিফে উদ্ধৃত করা হয়েছে, রমজানে জান্নাতপ্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতে। এ সংক্রান্ত একটি চমৎকার দোয়াও রয়েছে। আমরা সেটি মুখস্থ করব এবং রমজানের দোয়া কবুলের সময় বেশি বেশি পড়ব। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিন গাদাবিকা ওয়ান নারি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা করছি এবং আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’
আল্লাহ কোরআন মাজিদে জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে ভয় দেখিয়েছেন এবং আমাদের বিভিন্ন প্রকার আজাবের খবর দিয়েছেন, যা শুনলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে; জান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। তিনি করুণাময় বলেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখিয়ে সতর্ক করেছেন; যাতে আমরা ভালোভাবে সাবধান ও ভীত হতে পারি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্বীয় রবের অভিমুখী হও এবং তার আজ্ঞাবহ ও অনুগত হও তোমাদের কাছে আজাব আসার আগে। এর পর তোমাদের সাহায্য করা হবে না।’ (সূরা যুমার: ৫৪)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা ওই আগুনকে ভয় কর, যা কাফেরদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (সূরা আল ইমরান: ৩১)।
আল্লাহ শয়তানকে লক্ষ্য করে বলছেন, ‘নিশ্চয় আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা নেই, তবে পথভ্রষ্টরা ছাড়া যারা তোমাকে অনুসরণ করেছে। আর নিশ্চয় জাহান্নাম তাদের সবার প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজার জন্য রয়েছে তাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট একটি শ্রেণি।’ (সূরা আল-হিজর: ৪১-৪৪)।
আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জাহান্নামের বাস্তবতা সম্পর্কে জানত, সে তা থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার করতে করতে তার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যেত এবং এমনভাবে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকত যাতে তার মেরুদণ্ড ভেঙে যেত।’ (ইবনুল মুবারক, যাওয়াইদুয-যুহদ: ১০০৭)।
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের ময়দানে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ধনাঢ্য ও সুখী ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে অল্প সময় ঢুকিয়ে এনে জিজ্ঞাসা করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো দুনিয়াতে সুখ-শান্তিতে ছিলে? তুমি কি কখনো দুনিয়ার নিয়ামত পেয়েছিলে? সে বলবে, না-আল্লাহর কসম! হে আমার রব! আমি কখনো দুনিয়াতে শান্তি পাইনি। ঠিক তদরূপ দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সর্বাধিক কষ্টকর ও অশান্তিতে ছিল, তাকে অল্প সময়ের জন্য জান্নাতে ঢুকিয়ে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো অভাব অনটনে ছিলে? সে আল্লাহর কসম করে বলবে, না, আমি কখনো কোনো অভাব-অনটনে বা কষ্টে ছিলাম না।’ (মুসলিম: ২৮০৭)।
অর্থাৎ জাহান্নামি ব্যক্তি দুনিয়ার সব শান্তি ও নেয়ামতের কথা ভুলে যাবে। আর জান্নাতি ব্যক্তি দুনিয়ার সব কষ্ট-ক্লেশের কথা ভুলে যাবে। অন্য হাদিসে রয়েছে, আনাস ইবন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের ময়দানে এক জাহান্নামি ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক হলে কি তা প্রাণের ফিদয়াস্বরূপ খরচ করতে? সে বলবে, হে আমার রব! আমি তা করতাম। তখন আল্লাহ বলবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমাকে তার চেয়েও সহজ হুকুম দিয়েছিলাম, যখন আমি তোমাকে আদম (আ.) এর পিঠ থেকে বের করেছিলাম। তখন বলেছিলাম তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। কিন্তু তুমি আমার কথা অমান্য করে আমার সঙ্গে অন্যকে শরিক করেছিলে।’ (বুখারি: ৩৩৩৪)।
এই জাহান্নামের ভয়ে কেঁদেছেন পৃথিবীর সব যুগের আল্লাহভীরু মহামানব। খুবই বিস্ময়কর বোকামি হলো এই জাহান্নামের আগুন থেকে নির্ভয় জীবনযাপন করা। রমজানের এ ভরা রহমতের মৌসুমই উত্তম উপলক্ষ্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি অর্জনের। আসুন সবাই সে চেষ্টা করি। বেশি বেশি পড়ি: আল্লহুম্মা আজির না মিনান-নার। (হে আল্লাহ, আপনি আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন)।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচান। আমাদের চিরস্থায়ী অপমান ও ধ্বংস হতে বাঁচান।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ