ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রমজানে রাতের নামাজ

প্রকাশনার সময়: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১১:২৩ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১১:২৬

রমজানুল মুবারক। ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মাস। জীবনকে আলোকিত করার মৌসুম। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজতম সুযোগ। খায়ের ও বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের বসন্ত। সাধারণ আমলের পাশাপাশি এ মাসের বেশ কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। অন্য সময়ের সাধারণ আমলগুলোরও এ মাসে গুরুত্ব বেড়ে যায়। তাহাজ্জুদ এ ধরনেরই একটি আমল।

সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও আকাবিরে দেওবন্দ রমজানুল মুবারকে তাহাজ্জুদের প্রতি সীমাহীন যত্নবান ও মনোযোগী ছিলেন। বস্তুত মাহে রমজান এলে তারা অত্যধিক আনন্দিত হতেন। এই মাসকে রোজার পাশাপাশি সর্বোচ্চ পরিমাণে নামাজ, তিলাওয়াত, দোয়া-জিকির, তওবা-ইস্তিগফারে কাটাতেন। রাতের বেশির ভাগ সময় নামাজ-তিলাওয়াতে বিভোর থাকতেন। দীর্ঘসময় জুড়ে তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাতে প্রচুর তিলাওয়াত করতেন। তাদের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাক—

হিশাম ইবনে হাসসান (রাহ.) বলেন, ‘মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন (রাহ.) রমজানে পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন।’ -আযযুহদ, ইমাম আহমদ, পৃ. ২৪৮

ইবরাহীম নাখায়ী (রাহ.) বলেন, ‘আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ রাহ. রমজানে প্রতি দুই রাতে কোরআন খতম করতেন। মাগরিব ও এশার মাঝামাঝি সময়ে বিশ্রাম করতেন। আর রমজানের বাইরে প্রতি ছয় রাতে কোরআন খতম করতেন।’ -হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১০২-৩

মুজাহিদ (রাহ.) বলেন, ‘আলী আলআযদী (রাহ.) রমজানে প্রতি রাতে কোরআন খতম করতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮৬৮৪

রমজানুল মুবারক কেন্দ্রিক তাদের এই অত্যধিক কোরআন তিলাওয়াতের বড় একটা অংশ কাটত তাহাজ্জুদে। রাতের বেলায় নামাজ আর কোরআন তিলাওয়াতের যুগপৎ মোহে তারা অন্য ভুবনে হারিয়ে যেতেন।

হজরত মাওলানা যাকারিয়া কান্ধলভী (রাহ.) গাঙ্গুহী (রাহ.) সম্পর্কে লিখেছেন, তার মুজাহাদার অবস্থা এমন ছিল যে, তা দেখে অন্যদের করুণা ও ভয় হতো। যখন তার বয়স সত্তরের বেশি, তখনো অবস্থা এই ছিল, দিনে রোজা রাখতেন, মাগরিবের পরে বিশ রাকাত আওয়াবীন পড়তেন। তাতে যতটুকু তিলাওয়াত করতেন, তা আনুমানিক দুই পারার কম হবে না। রুকু-সিজদা এত দীর্ঘ হতো যে, অন্যদের মনে হতো তিনি (রুকু বা সিজদা থেকে ওঠার কথা) ভুলে গেছেন। আওয়াবীন শেষ করে ঘরে যাওয়া ও খাওয়ার জন্য অবস্থানকালে কয়েক পারা তিলাওয়াত করতেন। কিছুক্ষণ পরে এশা ও তারাবি পড়তেন, তাতে এক ঘণ্টা সোয়া এক ঘণ্টা সময় ব্যয় হতো। তারাবি শেষে সাড়ে ১০টা ১১টার দিকে বিশ্রাম করতেন এবং ২টা আড়াইটা বাজে অবশ্যই উঠে যেতেন। কখনো খাদেম তাকে একটার সময়ও অজু করতে দেখেছেন। আড়াই-তিন ঘণ্টার মতো তাহাজ্জুদে মশগুল থাকতেন। কখনো খাদেম ৫টার সময় গিয়েও তাকে তাহাজ্জুদে পেয়েছেন। -আকাবির কা রমজান, পৃ. ১৮

তাহাজ্জুদের কী স্বাদ অনুভব করেছিলেন তারা; যার ফলে সত্তরোর্ধ্ব বয়সে শীতের রাতেও তা ছাড়েননি! তাবেয়ী বুজুুর্গ মি’যাদ ইবনে ইয়াযীদ (রাহ.) যথার্থ বলেছেন- ‘যদি উত্তপ্ত দুপুরের (রোজাজনিত) তৃষ্ণা, শীতের দীর্ঘ রাত এবং তাহাজ্জুদে কোরআন তিলাওয়াতের স্বাদ না থাকত, তাহলে আমি মৌমাছি হয়ে যেতে পরোয়া করতাম না।’ -আযযুহদ ওয়ার রাকাইক, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, বর্ণনা ২৭৮

আল্লাহ আমাদেরকে তাহাজ্জুদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। বিশেষত রমজানুল মুবারকের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ