ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঈমানদার রোজা ত্যাগ করেন না

প্রকাশনার সময়: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৬

অফুরন্ত কল্যাণের এই রমজান মাসে সবচেয়ে বড় অভাগা ওই ব্যক্তি, যার ওপর রমজানের রোজা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও সে রোজা করে না। যে শরিয়তসম্মত ওজর ছাড়া রোজা রাখে না বা রাখার পর তা ভেঙে ফেলে। কারণ, কেউ যদি জীবনভর নফল রোজা করে কিংবা ফরজের কাজা রোজা করে, তাও সেটি মহাপবিত্র রমজানের একটি ফরজ রোজার সমান হতে পারবে না। ইমাম ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, কবরবাসীকে যদি জাগ্রত করে পৃথিবীর কোনো নেয়ামত চাইতে বলা হয়, তাহলে নিশ্চিত সে রমজানের একটি রাত পেতে চাইবে।’ সুতরাং রমজানের মতো এমন পবিত্র মৌসুম এবং পুণ্যময় সুযোগ পেয়েও যে হেলায় তা হাতছাড়া করে তারচেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে!

রমজান মাসজুড়ে এই সিয়াম সাধনা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, এটি ইসলামের অপরিহার্য পাঁচ স্তম্ভের একটি। যা অস্বীকার করলে কেউ আর মুসলিম থাকে না। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১. আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল— এ কথার সাক্ষ্য দান; ২. সালাত কায়েম করা; ৩. জাকাত দেওয়া; ৪. হজ করা এবং ৫. রমজান মাসের রোজা পালন করা।’ (বুখারি : ৮)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর।’ (সূরা বাকারা: ১৮৩)। একই জায়গায় একটু পরে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে।’ (সূরা বাকারা: ১৮৫)।

জনৈক গ্রাম্য লোক নবী (সা.)কে বলল, আমাকে বলুন— আল্লাহ আমার ওপর রোজা থেকে কী ফরজ করেছেন? উত্তরে নবী (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে তুমি এর চেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতে পার।’ (বুখারি: ১৮৯১)।

ইমাম জাহাবি (রহ.) তদীয় বিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল কাবায়িরে (পৃ. ৬৪) লিখেন: ‘সকল মুমিনের সর্বসম্মত মত, যে ব্যক্তি অসুস্থতা বা বিশেষ ওজর ছাড়া রমজানের রোজা ভঙ্গ করবে, সে ব্যভিচারী, চোর, ডাকাত ও মদ পানকারী থেকেও নিকৃষ্ট; বরং তারা তার ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন এবং তার যিন্দিক ও ধর্মত্যাগী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন।’

দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা পাড়া-মহল্লার অনেক চা-বিড়ির দোকান দেখি, দিনের বেলা পর্দা টানিয়ে ভেতরে তুমুল খাওয়া-দাওয়া চলছে। সুস্থ তাগড়া মানুষগুলো কোনো কারণ ছাড়াই ফরজ রোজা না রেখে নির্বিকারভাবে পানাহার করছে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন। তারা কি জানেন একটি ফরজ রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করার শাস্তি কত কঠিন?! আবু উমামা আল-বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন— ‘একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুজন লোক এসে আমার দুই বাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলল, পাহাড়ে উঠুন।’ আমি বললাম— ‘আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। ‘তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠে গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম— ‘এটা কিসের শব্দ?’ তারা বলল: ‘এটা জাহান্নামি লোকদের চিৎকার।’ এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে এল যাদের পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নভিন্ন, সেখান থেকে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম— ‘এরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণের আগে ইফতার করত।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমাহ: ১৯৮৬; ইবনে হিব্বান ৭৪৯১)।

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদিস শাস্ত্রবিদ শায়খ আলবানি (রহ.) ‘সহিহ মাওয়ারিদ আজ-যামআন’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করে এর টীকায় লিখেন, ‘আমি বলি— এ শাস্তি তো তার জন্য যে রোজা রেখেছে; কিন্তু ইফতারের সময় হওয়ার আগে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করে ফেলেছে। সুতরাং যে একেবারে রোজা রাখেইনি তার অবস্থা কী হতে পারে?!’

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ