ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬

নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাস

প্রকাশনার সময়: ২৫ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৬

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঈদের গানে বলেছেন, ‘তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ। রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।’— প্রকৃতপক্ষে রমজান আত্মত্যাগ ও নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাস। অনাহারির জঠরজ্বালা কেমন, এ জ্বালা না সয়ে কখনও সম্যক উপলব্ধি সম্ভব নয়।

রোজায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত অবধি বাধ্যতামূলক পানাহার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অভুক্তদের সে যাতনার যথার্থ উপলব্ধি করানো হয়। যাতে করে সচ্ছল লোকেরা অভাবী-দুর্গতদের দুর্দশা উপলব্ধি করে তাদের পাশে দাঁড়ায়। এ লক্ষ্যেই রমজানের শেষ দিন ঈদুল ফিতরের সূচনায় সামর্থ্যবানদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে।

রমজানজুড়ে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে দানের সওয়াব। হাদিসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে অন্যকে ইফতার করাতে এবং অভুক্তকে আহার জোগাতে। জায়েদ বিন খালেদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ইফতার করাবে সে ওই ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে। অথচ রোজাদার ব্যক্তির নেকি থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭)।

অপরকে আহার করানোর বিষয়েও বর্ণিত হয়েছে চমৎকার হাদিস। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ রোজা অবস্থায় প্রত্যুষে উপনীত হয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাজার নামাজে শরিক হয়ে জানাজার পিছু চলেছ? আবু বকর (রা.) উত্তরে বললেন, আমি। রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ একজন মিসকিনকে খাইয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। রাসুল (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ একজন রোগীর সেবা করেছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তির মধ্যে এসব আমল সন্নিবেশিত হয়েছে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।’ (মুসলিম : ১০২৮)।

মহানবী (সা.) কেবল উদ্বুদ্ধ করেননি, নিজে আগে আমল করে উম্মতকে শিখিয়েছেন রমজানে কীভাবে দানের হাত প্রসারিত করতে হবে। রমজান মাসে নবীজির অবস্থা তার সাহাবির বক্তব্যে স্পষ্ট হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তিনি আরও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন; যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাইল রমজানের প্রতি রাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরস্পরে কোরআন পড়তেন, তখন তিনি প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও অধিক হারে দান করতেন।’ (বোখারি: ৬; মুসলিম: ৫০)।

মাহে রমজানে নবীজির এ আদর্শের প্রতিফলন আমরা দেখি চারদিকে। রমজানে দান-সদকা আর অপরকে আহার করানো বাঙালি মুসলমানের আবহমান সংস্কৃতি ও গর্বের ঐতিহ্য। তাই রমজানের নতুন চিকন চাঁদ হাসি ফিরিয়ে আনে ধনী-নির্ধন সবার মুখে। পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই রমজান মানে ইবাদতের পাশাপাশি নিজেকে বিলানোর উৎসব। আরব দেশগুলোতে ঘরে-বাইরে বিছানো হয় উদার আপ্যায়নের উন্মুক্ত দস্তরখান। মক্কা-মদিনায় মেহমানদারির বান ডেকে যায়।

প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে কতজন অতিথিকে আপ্যায়ন করাতে পারে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে উন্মুক্ত ইফতারিতে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জাতীয় মসজিদেও হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে উন্মুক্ত ইফতারে শরিক হন।

এসবই আপনাকে বিলিয়ে দেয়ার উৎসব। সবারই কর্তব্য হবে— রমজানে সাধ্য অনুযায়ী বেশির চেয়ে বেশি মেহমানদারি করা এবং মসজিদ-মাদরাসাসহ দীনি কাজে অধিক হারে দান-সদকা করা। দানে দৌলত বাড়ে বৈ কমে না। দানে বিপদ কেটে যায়। দানে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ