মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র মাহে রমজান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পরম উপহার। উভয়ের ওপরই রমজান মাসের রোজা ফরজ। সিয়াম পালনকারী নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই পুরস্কার ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছেন, ‘মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ও সত্যনিষ্ঠ নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনারী নারী, যৌনাঙ্গের সুরক্ষাকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গের সুরক্ষাকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী- আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ (সুরা আহযাব: ৩৫)।
তবে সিয়াম সাধনার ক্ষেত্রে আমাদের মা-বোনদের কিছু বিধানগত পার্থক্য রয়েছে। যে বিধানগুলো না জানায় আমাদের মা-বোনরা অনেক ক্ষেত্রে বড় নেকি ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হন। তাই নারীদের কর্তব্য হবে রোজায় তাদের বিশেষ বিধানগুলো জেনে নেয়া।
রোজা ফরজের বিখ্যাত আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর— যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের (রমজান মাসের) জন্য (এ রোজা ফরজ)। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে কিংবা সফরে থাকবে, তাকে অন্য সময় সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩-১৮৪)। এখানে আয়াতে অসুস্থতা শব্দটি ব্যাপক। নারীর মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী সময়ও এর অন্তর্ভুক্ত। সফরে থাকলে রোজা ঐচ্ছিক হলেও নারীর বিশেষ সময়ে রোজা নিষিদ্ধ। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঋতু অবস্থায় নারীকে নামাজ আদায় ও রোজা পালন করতে হয় না, এমন নয় কি?’ তারা বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটিই তাদের দ্বীন বিষয়ে অসম্পূর্ণতা।’ (বোখারি: ৪০৩; মুসলিম: ১৩২)।
ঋতুকালীন রোজা : রোজা পালনকারী নারীর যদি সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগেও পিরিয়ড (ঋতু) দেখা দেয়, তাহলে তার ওই দিনের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। পরে রোজাটি কাজা করতে হবে। যদি রমজানে দিনের মধ্যভাগে পিরিয়ড থেকে পবিত্র হওয়া যায়, তবে দিনের শুরুতে রোজা পালনের প্রতিবন্ধকতা থাকায় ওই দিনের বাকি অংশেও রোজা পালন সহিহ হবে না। যদি রমজানের রাতে সুবহে সাদিক উদয়ের সামান্য আগেও কোনো নারী পিরিয়ড থেকে পবিত্র হন, তবে তার ওপর রোজা পালন আবশ্যক। কারণ তিনি রোজা পালনে সক্ষমদের অন্তর্ভুক্ত। তার রোজা পালনে এখন কোনো অন্তরায় না থাকায় রোজা পালন ওয়াজিব। এক্ষেত্রে তিনি পবিত্র হওয়ার গোসল সুবহে সাদিকের পর করলেও রোজা শুদ্ধ হবে। যেমন, গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর গোসল করলে তার রোজা শুদ্ধ হয়। কারণ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নদোষ ছাড়া সহবাসজনিত নাপাক অবস্থায় সুবহে সাদিকের পর পবিত্রতা অর্জন করতেন এবং রমজানের রোজা পালন করতেন।’ (বোখারি : ১৯৩১; মুসলিম : ১১০৯)।
পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা : আধুনিক যুগে ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা যায়। কোনো নারী যদি ওষুধ খেয়ে রোজা রাখতে চান, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। তবে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যত্যয় ঘটানো অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। তাই আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী চলা এবং ওষুধ গ্রহণ না করাই শ্রেয়।
প্রসব-পরবর্তী সময়ে রোজা : নিফাস তথা সন্তান প্রসবকারী নারীর বিধান পূর্বোক্ত হায়েজ বা মাসিকগ্রস্ত নারীর বিধানের মতোই। তিনিও পবিত্র হওয়া পর্যন্ত রোজা করবেন না।
স্তন্যদানকারী বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রোজা: যে স্তন্যদানকারী কিংবা অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজার কারণে নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তিনি রোজা ত্যাগ করতে পারবেন। আনাস বিন মালেক আল কাবি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরদের সালাত অর্ধেক করেছেন। আর গর্ভবতী, স্তন্যদানকারিণী ও মুসাফির থেকে রোজা শিথিল করেছেন।’ (আবু দাউদ : ২৪০৮)।
বাদ পড়া রোজার কাজা : হায়েজ ও নিফাসহেতু যে কয়দিন রোজা বাদ পড়বে, সে দিনগুলোর কাজা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহতায়ালা রোজা সম্পর্কিত দীর্ঘ আলোচনায় রমজানে সঙ্গত কারণে বাদ পড়া রোজা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তবে অন্য দিনে এগুলো গণনা (কাজা) করে নেবে।’ (সুরা আল বাকারা: ১৮৪)।
তেমনি রাসুলপত্নী আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ঋতুবতীর কী হলো যে সে রোজা কাজা করে অথচ নামাজ কাজা করে না? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি কি হারুরি তথা খারেজি সম্প্রদায়ভুক্ত? সে বলল, আমি হারুরি নই, বরং জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘আমাদেরও এ অবস্থা হয়েছিল। তখন আমরা রোজা কাজা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি; নামাজের জন্য নয়।’ (বোখারি : ৩২১; মুসলিম : ৩৩৫)। স্তন্যদান কিংবা অন্তঃসত্ত্বাজনিত কারণে বাদ পড়া রোজাগুলোও স্বাভাবিক সময়ে এসবের কাজা করে নিতে হবে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ