ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাহরি ও ইফতারির বহুমুখী কল্যাণ

প্রকাশনার সময়: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৫

মাহে রমজানের আবহমান সংস্কৃতির অন্যতম সৌন্দর্য সাহরি ও ইফতারির আয়োজন। অন্যদিকে রোজার গুরুত্বপূর্ণ আমল সাহরি ও ইফতার গ্রহণ। রোজায় নেকি অর্জনের অসংখ্য সুযোগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো এই সাহরি ও ইফতারি।

রোজার সূচনা হয় সাহরি গ্রহণের মাধ্যমে আর সমাপ্তি ঘটে ইফতারের মধ্য দিয়ে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আহার ও পান (সাহরি) করতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা হতে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায় (সুবহে সাদিক হয়)। অতঃপর রাতের আগমন (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)।

আরবি সাহর শব্দের অর্থ প্রত্যুষ। প্রত্যুষের পূর্বলগ্নে খাওয়া হয় বলে একে সাহরি বলে। সাহরি খাওয়া এবং ইফতার করা স্বতন্ত্র সুন্নত। সাহরি বিলম্বে খাওয়া এবং ইফতার তাড়াতাড়ি করা সুন্নতের মধ্যে আরেক স্বতন্ত্র সুন্নত। সুন্নত মানেই প্রিয়তম নবীর (সা.) আনুকরণ। সুন্নত মানেই ইবাদত। সুন্নতমাত্রই কল্যাণ।

দয়াময় আল্লাহর দয়ার নমুনা এই সাহরি-ইফতারি। আপনি খেয়াল করুন, তিনি কী চান? তিনি চান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খেয়ে বান্দা শারীরিক শক্তি বজায় রেখে রোজা পালন করুক। তেমনি বিলম্ব না করে ইফতারি গ্রহণ করে না খাওয়ার কষ্ট দ্রুত লাঘব করুক।

সাহরি না খেয়ে রোজা রাখলেও তা শুদ্ধ হবে, কিন্তু সুন্নত পালন না করায় তার অঙ্গহানি ঘটবে এবং সওয়াব হ্রাস পাবে। সাহরি খাওয়া শুধু সুন্নতই নয়, এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য। রাসূল (সা.) বলেন: ‘আমাদের ও আহলে কিতাবদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।’ (মুসলিম: ১০৯৬)।

সাহরিতে বহুবিধ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘সাহরি সম্পূর্ণটাই বরকতপূর্ণ। সুতরাং সাহরি পরিত্যাগ করো না, যদিও এক ঢোক পানি পান করে হয়। কারণ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সাহরি ভক্ষণকারীর ওপর বরকত বর্ষণ করে থাকেন।’ (সহিহ তারগিব-তারহিব: ১৬০২)। আপনি দেখবেন, প্রতিটি ঘরে সাহরির সময় খাবার বেঁচে যায়। সাহরিতে কখনো খাবার কম পড়ে না।

একটি হাদিসে খেজুর দিয়ে সাহরি গ্রহণের প্রশংসা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘মুমিনদের খেজুর দিয়ে সাহরি গ্রহণ কতই না উত্তম।’ (আবু দাউদ: ২৩৪৫)। তাই সাহরিতেও খেজুর খাওয়া একটি সুন্নত আমল। আমরা নিজেদের মতো সাহরি গ্রহণের পর দুয়েকটি খেজুর মুখে দিয়ে সুন্নতটি পালন করে আলাদা নেকি পেতে পারি। আবার স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এটি খুব উপকারী। খেজুরের সমৃদ্ধ পুষ্টি সারা দিন উপবাসে আপনার অনেক কাজে দেবে।

সাহরিতে বিলম্ব করা সিয়াম পালনকারীর জন্য অধিক উপকারী। তেমনি ফজরের নামাজ জামাতে আদায়ে সহায়ক। উল্লেখ্য, সাহরি খাওয়া এবং নিয়ত করার পরও সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার বৈধ।

পক্ষান্তরে ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা। ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করা হয় বলে একে ইফতারি বলা হয়। সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ ঘটে। আল্লাহতায়ালা রোজার বিধান সম্পর্কে তার বাণীতে বলেছেন, ‘অতঃপর রাতের আগমন (সূর্যাস্ত) অব্দি রোজা পূর্ণ কর।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)।

আমাদের দেশে সাধারণত মসজিদে আজানের অপেক্ষা করা হয়। আজান না শুনে কেউ মুখে পানি নিতে চান না। এটি একটি ভুল প্রচলন এবং সুন্নতের পরিপন্থি। কারণ, নবীজির (সা.) নির্দেশনা হলো— ‘মানুষ যতক্ষণ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি: ১৯৫৭)।

তাছাড়া অনেকেই জানেন না, মুয়াজ্জিন সাহেবরা সবাই নিজ মুখে পানি নিয়ে তারপর আজান দেন। কারণ সূর্যাস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা রোজা ভঙ্গ করেন, তারপর মাইকে আজান দেন। তাই আমরাও আধুনিক এই যুগে সূর্য অস্ত যাওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ামাত্র ইফতার করব। আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তেমনি ইফতারের দোয়া পড়া, ইফতারের আগ মুহূর্তে দোয়া করা, খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা এবং অন্যকে ইফতার করানো স্বতন্ত্র সুন্নত এবং সাওয়াবের কাজ। সাহরির সময় এবং সবিশেষ ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়, এ সময় আল্লাহতায়ালা জাহান্নামি বান্দাদের মুক্তি দান করেন। তাই ইফাতের পূর্ব মুহূর্তে এবং সাহরির আগে-পরে বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা করা উচিত।

নয়াশতাব্দী/ডিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ