ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

ঊষার আলো দেখব একসঙ্গে

প্রকাশনার সময়: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৫

ঢাকার বস্তিবাসীর কথা আমরা সবাই জানি। তাদের বিপন্ন জীবনধারা কোমল হূদয়ের মানুষের মনে একটু হলেও দাগ কাটে। বলা চলে তেমনি এক বস্তিপাড়া গড়ে উঠেছে ঢাকার মালিবাগ রেল গেটের পাশ ঘেঁষে খিলগাঁও রোডটিতে। তাদের আশ্রয়স্থল হয়েছে সংকীর্ণ ফুটপাতে পলিথিন পেচিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পাখির বাসা সদৃশ ঘরগুলোতে।

সেই ঘরগুলোর মধ্যেই থাকা-খাওয়া-রান্না করা ইত্যাদি সব কাজ। যেখানে নেই কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহ। যতটুকু গাড়ি চলাচলের আলো এসে পড়ে ততটুকুই তাদের আলোর উৎস। এমন ছোট্ট ছোট্ট ঘর রয়েছে সেখানে ৫২-৫৩টি। পাখির বাসা সদৃশ ঘরগুলোর বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, বৃষ্টি আসলে তাদের রান্না-খাওয়া বন্ধ।

কারণ তাদের রান্না তো হয় ছাউনিবিহীন ফুটপাতে। তাদের মধ্যকার কিছু মহিলার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারা যায়, তাদের অধিকাংশই বাসায় বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত। কিন্তু তাদের অভিমানী অভিযোগ, ধনীরা টাকার তুলনায় কাজ করায় বেশি। এমনকি ভালো ভালো খাবার রান্না হলেও সেই দরিদ্র মানুষগুলো ধনীদের খাবারের ভাগ পায় না।

একজন গৃহকর্মীর ভাষ্যমতে, আমরা মাংস খাই না বলতে গেলে। বাসায় কাজে গেলে তাদের মাংস কাটি, ধুই, মসলা মাখিয়ে রান্না করি; কিন্তু এক টুকরো খেতে পারি না। কারণ আমরা টাকার বিনিময়ে কাজ করি; খাওয়ার ইচ্ছা থাকা পাপ। ঘরগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে ‘শাপলা’ নামের এক মহিলা অভিমানের স্বরে বলেন, ‘ধনীরাই গরিব, আর আমরাই ধনী।’ কথার প্রেক্ষাপট তো বোঝাই গেল।

আবার, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা তো তাদের জীবনকে অনেক বেশি বিষিয়ে দিয়েছে। তাদেরও ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তাদের মাঝেও খাদ্যের প্রতি চাহিদা আছে। কিন্তু তারা তো চাহিদা পূরণ করতে পারেই না; চাহিদা পূরণের ধারে কাছেও যেতে পারে না। তাদের কথা অনুযায়ী বোঝা গেল, তারা মাংস খাওয়া তো দূরের কথা মাছ বা ভালো সবজিও তাদের ভাগ্যে খুব কম জোটে। ‘মাজেদা’ নামের একজনকে প্রশ্ন করা হলো যে, আপনারা মাংস কত দিন পর পর খান? তিনি উত্তরে বললেন, ‘যহন কুরবানি আহে, মানুষ একটু দেয় তহনই জোটে।’

মানুষগুলো কতটা অসহায়! হয়তো তাদের অভিমান-অভিযোগ শোনার কেউই নেই। হয়তো আছে; কিন্তু অনুভূতির জায়গা শূন্য। ফুটপাতের বিপন্ন মানুষদের, একটু ঊষার আলো দেখার অপেক্ষমাণ মানুষদের কথা আমরা না হয় একটু অনুভূতির জায়গাতে স্থান দেই।

কারণ, নবী (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে পেট পুরে খায় আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।’ তিনি অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘মুসলমান এক দেহের মতো।’ তো আমরা খাব, ভালো থাকব আর অভাবীরা অনাহারে না মরে বেঁচে থাকবে, এটা কোনো আদর্শ মুসলিম সমাজের দৃশ্য হতে পারে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ