ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬

রবের কাছে ‘প্রত্যাবর্তন’ যেভাবে

প্রকাশনার সময়: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৫২

‘প্রত্যাবর্তন’ শব্দটার সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Revert’। একটি হলো- মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রত্যাবর্তন। আরেকটি- দুনিয়াতেই নিজেকে আল্লাহর জন্য পরিবর্তন করে আল্লাহ তায়ালার কছে প্রত্যাবর্তন। আমরা কথা বলব, আমাদের দুনিয়ার বাস্তবিক জীবনে রবের সান্নিধ্যে ফিরে আসার প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে।

আমাদের এই ক্ষুদ্র জীবনে বিভিন্ন কারণে জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায়। এ পরিবর্তন বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন সময় আসতে পারে। আমরা আমাদের পরিবারের সঙ্গে বড় হয়েছি। একজন মানুষ ছোটবেলা থেকেই পরিবারে যা শিক্ষা পায় সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলে। আর এটাই স্বাভাবিক। খেয়াল করে দেখবেন, একজন পুলিশের ছেলেকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন যে সে বড় হয়ে কি হতে চায় সে বলবে আমি আমার বাবার মতো পুলিশ হতে চাই। আবার একজন আলেমের ছেলেকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন যে তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও সে বলবে আমিও আলেম হতে চাই। শুধু কিছু ব্যতিক্রম ঘটে বাবা যদি নিচু পেশায় কাজ করে।

একজন শিশু প্রথম কথা বলা শেখে তার মায়ের মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই পিতামাতার স্বভাবের কিছুটা স্বভাব তার সন্তান পেয়ে থাকে। আর এটাই সামাজিকীকরণের প্রভাব। এটাই চিরচায়িত নিয়ম। এভাবে সে ছোটবেলা থেকে বড় হতে হতে একপর্যায়ে বোধগম্য সম্পন্ন যুবকে পরিণত হয়। তখন বয়ঃসন্ধিকালের প্রভাবে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং তখন নিজের বন্ধুবান্ধব ও আশপাশের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ও বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সমবয়সিদের কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়।

কেউ পরিবর্তন হয় অর্থের লোভে, আবার কেউ পরিবর্তন হয় নারীর লোভে, আবার কেউ পরিবর্তন হয় আল্লাহর জন্য। আর যারা আল্লাহর জন্য পরিবর্তন হয় তারাই সফলকাম। মানুষের চিন্তা-চেতনা, কাজ-কর্ম যেদিকে ধাবিত হয় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সেদিকে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। তারা যদি ভালো ও উন্নতির দিকে যায় আল্লাহ তায়ালা তাদের উন্নতির পথ খুলে দেন, আর যদি পাপ ও কুফরি করে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে দেয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের থেকে নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়ে ধ্বংস করে দেন।

আপনি যদি আপনার আল্লাহর নিকট অগ্রসর হন, আল্লাহ তায়ালাও অনুরূপ আপনার হেদায়েতের জন্য অগ্রসর হবেন। আর আপনি যদি একদম নাই অগ্রসর হন তাহলে আল্লাহ তায়ালাও আপনার জন্য অগ্রসর হবেন না। আমরা এক্ষেত্রে একটি হাদিস লক্ষ্য করতে পারি। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশি হন, যে তাঁর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তাঁর দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।’ (বুখারি: ৭৪০৫)

অর্থাৎ যদি আপনার তকদিরে হেদায়েত থাকে এবং আপনি যদি আল্লাহ তায়ালার নিকট অগ্রসর হতে চান, তাঁকে বুঝতে চান তাহলে অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো না কোনো উছিলা দিয়ে আপনাকে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করাবেনই। আপনার আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনের পেছনে থাকতে পারে অনেক কারণ। হতে পারে তা আধ্যাত্মিক বা দুনিয়াবি কোনো আলামতের মাধ্যমে।

বিষয়টা আমি আপনাদের বাস্তবসম্মত উদাহরণ দিয়ে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন পপ-তারকা। তার মিউজিক-ইন্ডাস্ট্রি Vitalsings-এর গান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। তার অ্যালবাম পাকিস্তানের সংগীত চ্যানেল চার্টে শীর্ষস্থানে। ২০০২-এর পর তার মধ্যে পরিবর্তন আসে এবং মিউজিক-এর প্রতিষ্ঠিত জগৎ ছেড়ে তিনি চলে আসেন ইসলামি ভুবনে। সম্পূর্ণ ইসলামি বেশভূষা অবলম্বন করেন এবং উলামা-সুলাহার সাহচর্য গ্রহণ করেন। হামদ-নাত ও ইসলামি নাশিদের ভুবনেও তিনি ব্যাপক সমাদৃত হন। লাভ করেন কোটি মুসলিমের হূদয়-নিংড়ানো ভালোবাসা। আমি যার কথা বলছি এতক্ষণে মনে হয় আপনারা নিশ্চয়ই তা বুঝে গেছেন।

হ্যাঁ, তিনিই জুনায়েদ জামশেদ। যেসব অঙ্গনের লোকজনের ব্যাপারে সাধারণত প্রত্যাবর্তনের চিন্তা করা হয় না, গায়ক, নায়ক, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার, কবি, উপন্যাসিক যাই হোন না কেন আল্লাহর রহমত তাদের জন্যও উন্মুক্ত, যদি তারা তা গ্রহণ করতে চান। পাকিস্তানের জিও টিভির পক্ষ থেকে জুনায়েদ জামশেদের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মিউজিকের ঝলমলে জীবন ছেড়ে এসে বর্তমান লম্বা কোর্তা ও উঁচু পায়জামার দরবেশি জীবনে আপনার কেমন লাগছে? তার জবাব ছিল, ‘আমি আমার লাইফস্টাইল চেঞ্জ করেছি। আমি এতে যে সুখ ও শান্তি পেয়েছি তা অতীত জীবনে পাইনি।’

যে কারণেই আপনি পরিবর্তন হবেন তার পেছনে কিন্তু আল্লাহর বিরাট রহমত রয়েছে। আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ পরিবর্তন হতে পারে না। কেউ যদি মনে করেন ‘আমি এই হুজুরের বক্তব্য শুনে পরিবর্তন হয়েছি। আমি এটার কারণে পরিবর্তন হয়েছি।’ এটা উসিলা হলেও মূলকথা হলো মহান আল্লাহ্ চান যেন আপনি তার দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।

আপনাকে তিনি নাজাত দিতে চান। এজন্যই আপনাকে তিনি বিভিন্ন উসিলার মাধ্যমে পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছেন। আর আপনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই নিজেকে পরিবর্তন করেছেন।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ