ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিষ্কার-পবিত্রতার গুরুত্ব

প্রকাশনার সময়: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১৪

সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে বারংবার এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যারা পূত-পবিত্র থাকবে, তাদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সওয়াবের।

ইসলামি শরিয়তে পরিচ্ছন্নতা বিষয়টি আরও ব্যাপক শব্দ ‘তাহারাত’ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘তাহারাত’ শব্দটি কুফরি ও আল্লাহর নাফরমানিসহ আভ্যন্তরীণ যাবতীয় পাপাচার ও নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ায় যেমন জোর দেয়, তেমনি সব রকমের বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকেও মুক্ত রাখতে গুরুত্ব প্রদান করে। বাহ্যিক পবিত্রতা একজন মুমিনের সালাত শুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত। যেমন ‘হাদছ’ তথা অবস্তুগত অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র হতে হয় অজু বা গোসল দ্বারা, তেমনি ‘খুবুছ’ তথা বস্তুগত অপরিচ্ছন্নতা থেকেও পবিত্র হতে হয় দেহ, বস্ত্র ও স্থান পরিষ্কারের মাধ্যমে।

মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজনের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আত-তাওবা: ১০৮)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা: ২২২)

হাদিসেও বিভিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এমনকি পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম: ২২৩)

ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা— কোনোটাই বাদ যায়নি।

ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুমাবারে গোসলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এমনকি হাদিসে এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব বা অত্যাবশক বলা হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’ (বুখারি: ৪৭৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধৌত করা।’ (বুখারি: ৮৯৭; মুসলিম: ৮৪৯)

কারও ওপর গোসল ফরজ না হলেও শরীরে ঘাম ও ধুলাবালি ইত্যাদি লাগার কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই অন্তত সাত দিনে একবার গোসলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার মানে সাত দিন পর গোসলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা নয়।

তাছাড়া দৈহিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে এমন কিছু বিষয়কে হাদিসে বলা হয়েছে ফিতরত বা ইসলামের স্বভাবজাত বিষয়। এগুলো নবীগণের সুন্নত। ‘দশটি বিষয় ফিতরতের অন্তর্ভুক্ত: ১. গোঁফ ছোট রাখা ২. দাড়ি ছেড়ে দেয়া ৩. মেসওয়াক করা ৪. নাকে পানি দিয়ে ধোয়া ৫. নখ কাটা ৬. আঙুলের গিটগুলো ধুয়ে রাখা ৭. বগলের লোম পরিষ্কার করা, ৮. নাভির নিচের পশম মুণ্ডানো, ৯. প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষে পানি ব্যবহার করা, ১০. কুলি করা।’ (মুসলিম: ২৬১)

আবাস স্থানকেও নোংরা, আবর্জনা ও দৃষ্টিকটু উপাদান থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় এর বিকল্প নেই। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন। আল্লাহ পরিচ্ছন্ন। তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ব পছন্দ করেন, আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে।’ (তিরমিজি: ২৭৯৯)

পরিবেশকেও রাখতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্তকারী) দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, লানতকারী কাজ দুইটি কী? তিনি বললেন, মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (আবু দাউদ: ২৫; মুসনাদ আহমদ: ৮৮৫৩)

সুতরাং আসুন, আমরা পরিচ্ছন্ন থাকি। ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি। ইসলামের সৌন্দর্য নিজেদের জীবনে ফুটিয়ে তুলি।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ