ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাবা-মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে?

প্রকাশনার সময়: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫২

পৃথিবীর কোনো পশুকে দেখেছেন এ পর্যন্ত সন্তানের কাছে কিছু আশা করতে। তাহলে কেন আপনি আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে সন্তানের কাছে কিছু আশা করবেন। সন্তানকে লালন-পালন করবেন তো আপনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন তারা যেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে। মানুষের সৃষ্টি যে উদ্দেশ্যে তারা যেন সেই রবের ইবাদত করে। দ্বীনের সঠিক বিধান শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলবেন। যাতে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পথে নিজেকে সদা অবিচল রাখে। তার কাছে আপনি কখনো আশা করবেন না সে আপনাকে খাওয়াবে।

সন্তানকে এমনভাবে মানুষ করবেন যেন সে কখনো তার রবকে ভুলে না যায়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। সন্তান লালন-পালনের উদ্দেশ্য হতে হবে যে সন্তান যেন আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে। এর থেকে বেশি কিছু তার কাছে প্রত্যাশা করা উচিত না। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যই যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা যারিয়াত: ৫৬)

সন্তানকে লালন করবেন, আপনার মৃত্যুর পর যেন সে আল্লাহ তায়ালার দ্বীন ইসলামের ওপর আপনার মতো সদা অবিচল থাকে। আপনি যেভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করেছেন, ঠিক তেমনি আপনার সন্তানও যেন আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করে। আর মা-বাবাকে লালন-পালন সন্তান করবে কিনা তা আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করে সন্তানদের প্রতি আদেশ করে বলে দিয়েছেন, মা-বাবা যখন বয়োজ্যেষ্ঠ ও বার্ধক্য বয়সে উপনীত হবে তখন তোমরা তাদের লালন-পালন করবে।

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘আর তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটি বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। আর তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩-২৪)

সন্তান কখন পিতা-মাতার জন্য কি করবে তা কোরআনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে সন্তানদের। পিতা-মাতার মৃত্যুর আগে ও পরে কিভাবে তার সঙ্গে আচরণ করবে, কিভাবে পিতা-মাতাকে বার্ধক্যে উপনীত হলে কী করবে আর কী করবে না। মৃত্যুবরণ করলে কী করবে। তাহলে আপনি কেন আপনার সন্তানকে এই উদ্দেশ্যে লালন-পালন করবেন যাতে সে যখন আপনি বৃদ্ধ বা বার্ধক্যে উপনীত হবেন তখন সে আপনাকে দেখাশোনা করবে?

আপনার উদ্দেশ্য ঠিক না হওয়ার কারণে আপনার সন্তান আপনি যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে দিয়ে আসে। আপনি সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তারপর তাকে যে কোনো শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন। দ্বীন যদি সন্তানকে প্রথমে শিক্ষা দেন তাহলে সে কখনই পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে না। প্রথমে যদি আপনি সন্তানকে অন্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে ফেলেন তাহলে সে আর ঠিক হবে না। তার মধ্যে দ্বীন ইসলাম না থাকার ফলে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে দিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক।

কখনো সন্তানের কাছে আশা রাখবেন না সে আপনার শেষ বয়সের লাঠি হবে। তার কাছে আশা রাখবেন সে যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। সন্তান যখন কোরআন পড়বে সে তখনই বুঝে যাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আদেশ করেছেন পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দোয়া করতে হবে। এবং বার্ধক্যে উপনীত হলে সেবা করবে এবং পরিচর্যা করবে। আর যদি না করে, তাহলে তার জান্নাত পাওয়ার আশা অন্ধকার হয়ে যাবে। তার দুনিয়া ও আখিরাত বৃথা।

হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক, আবারও নাক ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কে সেই ক্ষতিগ্রস্ত লোক? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। (মুসলিম: ২৫৫১)

আল্লাহ তায়ালা সকল সন্তান ও পিতা-মাতাদের সঠিক দ্বীনের বুঝ দান করুক। আমিন।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ