ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলামের দৃষ্টিতে ট্রান্সজেন্ডার

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১২

আল্লাহ তায়ালা আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন, সুন্দর অবয়বে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা ত্বিন: ৪)

এ সুন্দর অবয়ব আল্লাহ প্রদত্ত আমানত ও নিয়ামত। এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা কিংবা শরয়ি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে এ স্বাভাবিক অবয়বে কৃত্রিম উপায়ে বিকৃতি সাধন করা শয়তানি ফাঁদ এবং চরম ঘৃণ্য কাজ। শয়তানের এ জঘন্য ফাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আগেই আমাদের সতর্ক করেছেন। এবং আল্লাহর আদেশ মানার পরিবর্তে যে শয়তানি মিশন বাস্তবায়ন করবে, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে মর্মে সাবধান করে দিয়েছেন।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হূদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা নিসা: ১১৮-১১৯)

হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। (তিরমিজি: ২৭৮২)

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার তথা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে স্রষ্টার সৃষ্টিতে বিকৃতি করার বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সরকারের কাছে নানা রকম দাবি উত্থাপন করছে। শুধু কর্মসংস্থানের দাবি নয়, জাতীয় সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চান, এমন দাবিতেও পথে নামছেন এ কমিউনিটির মানুষরা। শোনা যাচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘হিজড়া’ পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবে এরা।

নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার মনোনয়নপত্রে ‘লিঙ্গ’ পরিচয়ে সংশোধন এনে ‘পুরুষ’ ও ‘মহিলা’র পাশাপাশি ‘হিজড়া’ যুক্ত করার মাধ্যমে এ সুযোগ তৈরি হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ক্ষমতাবলে বিধিমালায় এ সংশোধন এনেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। (প্রথম আলো: ৩১ মার্চ ২৩)

ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয়

ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী, সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা। গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় এদের মধ্যে ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যার আশঙ্কা থাকে। আরও নানা ধরনের সমস্যার কথা বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।

ট্রান্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অবস্থান

বিশ্বের বিখ্যাত টেক বিলিনিয়ার ইলন মাস্ক ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে পিতামাতাকে সচেতন রাখেন। এ বিষয়টির ভয়াবহতা অনুধাবন করাতে সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি (what is a woman) শেয়ার করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের ১৭০ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখেছে। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩)

স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার বা এলজিবিটি মতাদর্শ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে গত ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার লাখ লাখ (মিলিয়ন মার্চ) পিতামাতা রাস্তায় নেমে আসেন। (কালবেলা: ১৫ নভেম্বর ২০২৩)

সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে।

সব ধরনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের উচিত, এ ধরনের মতবাদ যারা লালন করে, এ মতবাদ বিস্তারে যারা সক্রিয় ভূমিকায় আছে তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এমন সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যার সমাধান বের করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ফতোয়া গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ