ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রকৃত মুমিনের পরিচয়

প্রকাশনার সময়: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৩

ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস আস্থা প্রভৃতি। আর ঈমান আনয়নকারী ব্যক্তিদের বলা হয় মুমিন। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মুমিন বলা হয়। আর ইসলাম মানে আনুগত্য, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, ইসলাম গ্রহণ করা ইত্যাদি। মুসলিম মানে আনুগত্যশীল বা অনুগত ব্যক্তি যিনি নামাজ, জাকাত, রোজা ও হজ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন।

মুমিন ও মুসলিম জন্মগত ও বংশীয় কোনো পরিচয় নয়। এটি বিশ্বাস ও কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কোরআনে কারিমের বহু স্থানে ও বহু হাদিসে প্রকৃত মুমিনের পরিচয় ও সফল মুমিনের গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

ঈমান, ইয়াকিন, ইখলাস, তাকওয়া, তাজকিয়া ও ইহসান অর্জনের মধ্য দিয়ে ইসলাম বা আত্মসমর্পণ সফল মুমিনের গুণাবলি। আল-কোরআনের শুরুতেই বিবৃত হয়েছে, ‘আলিফ লাম মীম! এই সেই মহাগ্রন্থ, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ। যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দৌলত দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর যারা আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপনার পূর্বে যেসব কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতিও, আর তারা পরকালে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এরা এদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে, আর এরাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা: ১-৫)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ সফল হয়েছে। যারা তাদের নামাজে মনোযোগী। আর যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। আর যারা জাকাত আদায়কারী। আর যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৫)

একই সুরায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও চুক্তিসমূহে দায়িত্বশীল। আর যারা নিজেদের নামাজসমূহের হেফাজতকারী (নিয়মিত নামাজ আদায় করে এবং অন্যকে আদায়ের উপদেশ দেয়)। তারাই উত্তরাধিকারীগণ। যারা ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে, তারা সেখানে চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবে।’ (সুরা মুমিনুন: ৮-১১)

মহান আল্লাহ কোরআন মাজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তো তারাই যারা পৃথিবীতে অতি নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞলোক তাদের সঙ্গে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। আর যারা রাত্রিসমূহ অতিবাহিত করে তাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে।... আর যখন তারা ব্যয় করে তারা অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং তারা (এ দুয়ের মাঝে) মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।

আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। ... আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হয় তখন স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দেয় তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না।...’ (সুরা আল-ফুরকান: ৬৩-৭৬)

তাকওয়া, পবিত্রতা, সততা, সত্যবাদিতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে জীবনযাপনই সফলতার চাবিকাঠি। কোরআন মাজিদের বাণী, ‘সফল হলো তারা যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল, আর ব্যর্থ হলো তারা যারা নিজেকে কলুষিত করল।’ (সুরা শামস: ৯-১০)

তাকওয়া বা পরহেজগারি বলতে বেশি আমল করাকে বোঝায় না, বরং বদ আমল বা মন্দ কাজ পরিহার করে চলাই হলো তাকওয়া। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ, যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি: ৪৮)

ঈমানের বিশুদ্ধতা আমলের বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল আর আমলের বিশুদ্ধতা নিয়ত বা অভিপ্রায়ের বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি: ১)। তিনি আরও বলেন, ‘তুমি তোমার দ্বীনের প্রতি আন্তরিক হও, সামান্য কাজই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (আল রাক্কাক: ৭৯১৪)

ঈমান হলো আন্তরিক বিশ্বাসের প্রতিফলন, আর যিনি কাজে কর্মে এ বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটান তাকে মুমিন বলা হয়। একমাত্র চিত্তের বিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমেই সফলতা তথা ইহজাগতিক শান্তি ও পরজগতে মুক্তিলাভ সম্ভব। এরই জন্য সব ধর্মাচার, অনুশীলন, বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশীলন।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ