ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৎ ব্যবসায়ীর ফজিলত

প্রকাশনার সময়: ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সদস্যরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কোনো ব্যক্তির একার পক্ষে তার প্রয়োজনীয় যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় তথা ব্যবসার মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় ও মুনাফা লাভের বিধান প্রবর্তন করেছেন। খ্যাতনামা ফকীহ ইবনু কুদামা (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সার্বিকভাবে ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুসলমান ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আর প্রজ্ঞার দাবিও তাই।

কেননা মানুষের প্রয়োজন তার সাথীর নিকট যা রয়েছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অথচ তার সাথী বিনিময় ব্যতীত তা প্রদান করবে না। সুতরাং ক্রয়-বিক্রয় বিধিসম্মত ও জায়েজ করে তাদের উভয়েরই উদ্দেশ্যে পৌঁছা ও প্রয়োজন পূরণ করার পথ প্রবর্তন করা হয়েছে’। (আল-মুগনি: ৬/৭)

সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা অবলম্বন করা এবং সর্বপ্রকার ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে সুসংবাদ ও অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য দুঃসংবাদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী (ক্বিয়ামতের দিন) নবী, সিদ্দিক্ব ও শহিদদের সঙ্গে থাকবে’। (তিরমিজি: ১২৫২)

অর্থাৎ যে ব্যবসায়ী পণ্য ক্রয় করে, বিক্রয় করে এবং সত্য কথা বলে সে ক্বিয়ামতের দিন উক্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। এটি বিশাল একটি মর্যাদা। যা এ পেশার শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি নির্দেশ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা পাপিষ্ঠ রূপে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং ব্যবসায় সততা ও সত্যবাদিতা অবলম্বন করে তারা ব্যতীত’। (তিরমিজি: ১২১০)

রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন উপার্জন সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং প্রত্যেক বায়য়ে মাবরূর’। (আহমাদ: ১৭২৬৫) যে ব্যবসায় মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা ও সংশয় থাকে না তাকে ‘বায়য়ে মাবরূর’ বলে।

কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘ব্যবসা আল্লাহর রিজিকের মধ্যে একটি রিজিক এবং আল্লাহর হালালকৃত বস্তুগুলোর মধ্যে একটি হালাল ওই ব্যক্তির জন্য, যে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে ব্যবসা করে।’ (বায়হাকি: ৫/৪৩২)

ইসলাম ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে জাতীয় ও সামষ্টিক স্বার্থকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়েছে। এজন্য যেসব কারবারের ফলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়, আর আপামর জনসাধারণের ওঠে নাভিশ্বাস, সেসব কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অত্যধিক মুনাফা লাভের প্রত্যাশায় মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী মজুত করে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার পদতলে তাদেরকে পিষ্ট করা এবং খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্যে ভেজাল প্রদান করে মুনাফা লুটে নেয়া তেমনি নিষিদ্ধ কারবার।

উপরন্তু এগুলো অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করার শামিল। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন মাজিদে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করার বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষ বাণী উচ্চারণ করে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত। আর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’ (সুরা নিসা: ৪/২৯)

সাইয়িদ কুতুব (রহ.) বলেন, ‘মুমিনদের মধ্যে সম্পদ আবর্তনের প্রত্যেক পদ্ধতি যার অনুমতি আল্লাহ দেননি বা তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তার সবই অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভক্ষণ করার মধ্যে শামিল রয়েছে। যেমন- প্রতারণা, ঘুষ, জুয়া, মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুত করা এবং সকল প্রকার অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়।’ (সাইয়িদ কুতুব, ফি যিলালিল কুরআন: ৫/৬৩৯)

নয়াশতাব্দী/আরেজ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ