ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জুমার বয়ান :জুলুম থেকে পরিত্রাণ কীভাবে

প্রকাশনার সময়: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১০

আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে মুসলিমগণ!) তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নরনারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য সংগ্রাম করবে না? যারা বলছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারী অধিবাসীদের এই নগর থেকে আমাদেরকে বাহির করে অন্যত্র নিয়ে যাও এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হতে কাউকে আমাদের সহায় নিযুক্ত কর।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৭৫)

আয়াতের আলোকে পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা দেখব মনে হয় যেন আয়াতটা ফিলিস্তিনিদের জন্যই নাজিল হয়েছে। আমরা মনে করছি গাজাবাসীরাই বোধহয় জুলুমের শিকার। প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই জুলুমের শিকার। এমনকি জুলুম করছি আমরাও। আমরা হচ্ছি জুলুমের সহকারী কিংবা সমর্থনকারী।

এক কথায় আমরা ভালো নেই। বলবেন, আমি তো ভালো আছি। বন্ধু, ব্যক্তিগতভাবে ভালো থাকা প্রকৃত ভালো থাকা নয়। আমাদের সমষ্টিগত ভালো থাকাই প্রকৃত ভালো থাকা। সুতরাং আমাদের করণীয় হলো:

প্রথমত, আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বুঝতে হবে, সেন্স আনতে হবে যে আমরা ভালো নেই।

দ্বিতীয়ত, আমাদের দোয়া করতে হবে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য। তিনি যেন আমাদের সাহায্য করেন। আমাদের পাপের কারণে আমাদের পাকড়াও না করেন। শাস্তি না দেন।

তৃতীয়ত, এই ঘোর অন্ধকার জুলুমের রাজ্য থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের দরকার একজন নেতা বা ত্রাণকর্তা যার নেতৃত্বে পুরো উম্মাহ ও সমগ্র জাতি জেগে উঠবে। আল্লাহর কাছে সেজন্য দোয়া করতে হবে।

চতুর্থত, আমাদের দরকার একজন সাহায্যকারী। কেমন? যেমন আকসা উদ্ধার করেছিলেন বীর সালাউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.)। তার মতো নেতা, ত্রাতা ও সাহায্যকারী। এমন ঈমান ও বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ছাড়া জুলুমের কবল থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।

আমরা হয়তো হতে পারব না সালাউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.)-এর মতো নেতা, ত্রাণকর্তা সাহায্যকারী হতে। কিন্তু আমরা তৈরি করতে পারব তার মতো নেতা। যার নেতৃত্বে পুরো সমাজ, দেশ ও উম্মাহর জাগরণ ঘটবে। তার বা তাদের নেতৃত্বে এ জুলুমের অন্ধকার থেকে মুক্তি পাবে উম্মত।

এর জন্য আমাদের বৃহত্তর প্রকল্প হাতে নিতে হবে। আমাদের দ্বীনদার জেনারেশন গড়তে হবে। চেতনাবান, সচেতন মুমিন কাফেলা তৈরি করতে হবে। আমাদের সন্তানদের জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষা তথা কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে জ্ঞানী বানাতে হবে। ইসলামের সোনালি ইতিহাস ও ইতিহাসের নায়কদের সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে।

আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) পরিচয় তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহব্বত আপনার-আমার সন্তানের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে। তারা যেন ক্ষণস্থায়ী জীবনের ক্ষুদ্র স্বার্থে কোনো দল-গোষ্ঠী বা মতাদর্শের জন্য নিজের জীবন-যৌবন ব্যয় না করে। বরং তারা যেন শেখে পুরো মানবতার জন্য, বিশ্বমুসলিম ও আখেরি নবীর আদরের উম্মতের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য তাদের শক্তি ও মেধা আত্মনিয়োগ করে।

তাহলেই আমাদের পরের প্রজন্মের মধ্যে হয়তো তৈরি হবে একজন সালাউদ্দীন আয়ুবীর (রহ.) মতো বীরসেনানী নেতা, ত্রাণকর্তা ইনশাআল্লাহ।

সেজন্য সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর বাবা-মা যেমন এমন মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই নিজেদের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করেছেন, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন শুধু মুসলিম উম্মাহর কলঙ্ক ও গ্লানি মোচনের শপথ নিয়ে। এমন সন্তান জন্মদানের শুভ প্রত্যাশায় যিনি উদ্ধার করবেন উম্মাহর হারানো প্রথম কিবলা, নবীজির (সা.) মিরাজের স্মৃতি এবং সব নবীকে নিয়ে ইমামতির গর্ব ও সম্মানের ভূমি আল-আকসা। আমাদেরকেও তেমন সংকল্প নিয়ে সন্তান জন্ম দিতে হবে, তাদের সে চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। ১৭ নভেম্বর (গত জুমায়) টঙ্গীর আন-নুর জামে মসজিদে জুমার বয়ান থেকে অনুলিখন— মু. আব্দুল খালেক আশিক

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ