ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেজুর গাছের সঙ্গে মুমিনের মিল

প্রকাশনার সময়: ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪১

মহান আল্লাহ তায়ালার অনন্য এক সৃষ্টি খেজুর গাছ। খেজুর গাছ বেশ পরিচিত একটি নাম। পাকা তাজা উভয় ধরনের খেজুর নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু একটি ফল। আর শীতকালের খেজুরের শীতল পানি প্রভুর অপূর্ব এক দান। যার স্বাদ ও গুণ ছোট বড় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জানে, সেমতে স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে থাকে। তাছাড়া এটাতে আছে, নানাবিধ রোগের প্রতিষেধকও।

কোরআনে খেজুর গাছ প্রসঙ্গ

পবিত্র কোরআনে বেশ কিছু গাছের আলোচনা আছে। তবে একেবারে বিশদভাবে আলোচনা এসেছে যে গাছটি তা হলো সবার প্রিয় ও পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি আল্লাহ কালিমা তাইয়্যেবা কেমন দৃষ্টান্ত দিয়েছেন? তা এক পবিত্র বৃক্ষের মতো, যার মূল (ভূমিতে) সুদৃঢ়ভাবে স্থিত। আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। তা নিজ প্রতিপালকের নির্দেশে প্রতি মুহূর্তে ফল দেয়। আল্লাহ (এ জাতীয়) দৃষ্টান্ত দেন, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ইবরাহিম: ২৪-২৫)

উপরোক্ত আয়াতে অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে ‘পবিত্র বৃক্ষ’ হলো খেজুর গাছ। আর আয়াতে খেজুর গাছের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে-

১. খেজুর গাছের শিকড় মাটির নিচে অত্যন্ত শক্তভাবে গাড়া থাকে, তীব্র বাতাস বা ঝড়ো হাওয়া তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এভাবেই তাওহীদের কালিমা যখন মানুষের মন-মস্তিষ্কে বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন ঈমানের কারণে তার সামনে যতই কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদাপদ দেখা দিক না কেন, তাতে তার ঈমানে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না।

২. খেজুর গাছের শাখা-প্রশাখা আকাশের দিকে বিস্তৃত থাকে এবং ভূমির মলিনতা থেকে দূরে থাকে। এভাবেই মুমিনের অন্তরে যখন তাওহীদের কালিমা বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন তার সমস্ত শাখা-প্রশাখা অর্থাৎ সৎকর্মসমূহ দুনিয়ার মলিনতা হতে মুক্ত থেকে আসমানের দিকে চলে যায় এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে পৌঁছে তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করে নেয়। অপর এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তা দ্বারাই তিনি তোমাদের জন্য ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙুর ও সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করেন। নিশ্চয়ই যারা চিন্তা করে, তাদের জন্য এসব বিষয়ের মধ্যে নিদর্শন আছে।’ (সুরা নাহল: ১১)

বোঝা গেল, খেজুর, আঙুর ও অন্যান্য ফল দ্বারা এসব জিনিসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা বাড়িতে ভোগ-সৌখিনতায় কাজে আসে।

মারয়াম (আ.)-এর খেজুর গাছের নিকট গমন: মারয়াম (আ.) গর্ভের শিশুর জন্মের সময় হলে তখন তাকে নিয়ে দূরে নিভৃত স্থানে খেজুর গাছের নিচে চলে গেলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারপর প্রসব-বেদনা তাকে একটি খেজুর গাছের কাছে নিয়ে গেল। সে বলতে লাগল, হায়! আমি যদি এর আগেই মারা যেতাম এবং সম্পূর্ণ বিস্তৃত বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!’ (সুরা মারয়াম: ২৩)

সোনালি ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় একজন সতী-সাধি কুমারী, গর্ভবতী নারী যখন প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণে চিন্তাভাবনায় মগ্ন ছিলেন, যখন একটি খেজুর গাছের নিচে চলে এলেন, তখন একটি খেজুর গাছের ডালাকে নিজের দিকে নাড়া দিলেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং খেজুর গাছের ডালাকে নিজের দিকে নাড়া দাও তা থেকে খেজুর তোমার ওপর ঝরে পড়বে।’ (সুরা মারয়াম: ২৫)

হাদিসে খেজুর গাছ প্রসঙ্গ

ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, গাছ-গাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ আছে, যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের মতো। তোমরা আমাকে বলো, সে গাছটি কী? তখন সাহাবায়ে কেরাম বন-জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করতে লাগল, আব্দুল্লাহ বলেন, আমার ধারণা হলো- সেটি খেজুর গাছ। (কিন্তু আমি ছোট থাকার কারণে) তা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের বলে দিন, সেটি কী গাছ। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, তা হলো খেজুর গাছ। (মুসলিম: ২৮১১)

অপর এক হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তিনি বললেন, এদের কবরে আজাব দেয়া হচ্ছে, তবে গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন প্রস্রাবে সতর্ক থাকত না, আর অপরজন চুগলখুরী করত। অতঃপর রাসুলুল্লাহ(সা.) খেজুর গাছের একটি তাজা ডাল এনে, ভেঙে দু’ভাগ করে, দুই কবরে গেড়ে দিলেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এমন কাজ কেন করলেন? তিনি বললেন, আশা করা যায় যে পর্যন্ত ডাল দুটি শুকাবে না, সে সময় পর্যন্ত তাদের আজাব হালকা থাকবে।’ (বুখারি: ২১৮)

আরেকটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, মসজিদে নববীতে এমন একটি খেজুর গাছের খুঁটি ছিল। যার সঙ্গে হেলান দিয়ে নবী (সা.) দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তাঁর জন্য মেম্বার স্থাপন করা হলো- আমরা তখন খুঁটি থেকে ১০ মাসের গর্ভবতী উঠনির মতো কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন নবী (সা.) মেম্বার হতে নেমে ওই খুঁটির ওপর হাত রাখলেন।’ (বুখারি: ৯২৮)

তাই আসুন! পরিবেশবান্ধব ও নানা উপকারে ভরা এই খেজুর গাছ, যে কারণে কোরআনে মুমিনের সঙ্গে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে, সেই সাদৃশ্যতা আমাদের বাস্তবিক জীবনে ফিট করে চিরস্থায়ী জীবনের সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হই। লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ