ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

উদ্দেশ্যহীন জীবন আর কত দিন

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:০১

আমাদের সমাজে কিছু বছর আগেও একাদশ শ্রেণিতে পড়া মেয়েরা পৃথিবীর কিছুই বুঝত না। আমাদের মায়েদের দিকেই দেখো, জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েও এখনো কতটা বোকা বোকা!

কিন্তু আজ! আজকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ছোট্ট মেয়েটির মাঝেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অনুভূতি জেগে ওঠে। বয়ঃসন্ধি যেন একটু আগেই তাদের ছুঁয়ে দেয়। তাই সময়ের কিছুটা আগেই তাদের ভিতরেও জন্ম নেয় প্রয়োজন পূরণের আগ্রহ; যদিও এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পিতামাতা এসব বুঝতে চায় না। তারা জানে, তুমি এখনো শিশুই তো আছ। তোমার ভিতরের সেই অনুভূতিটা কে-বা বুঝতে চায়। তুমি যে বড় হয়েছ, কে-বা আর খুঁজতে যায়!

কিন্তু ভিতরের পরিবর্তনটা তো আর মিথ্যা নয়। তাই যাদের সঙ্গে শৈশব কাটিয়েছ, হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সেই ছেলেগুলোকে হঠাৎ তোমার কাছে আলাদা মনে হতে লাগল। তাদের সংস্পর্শ তোমাকে আলাদা কিছু বলতে চাইল। কিন্তু তোমার ভিতরের অনুভূতির কী নাম, তুমি তো সেটা এখনো জানো না। তোমার ভিতরের এত আবেগের কারণটাও তুমি বোঝো না। তাই নিজের মনকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তুমি সবাইকে নিয়েই জীবনের পথে এগিয়ে চলতে থাকলে।

এভাবেই জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে পুরুষের সঙ্গে তোমার বেড়ে ওঠা। ঘর থেকে তোমাকে কখনো নারী হয়ে ওঠার উপায় বলে দেয়া হয়নি; উল্টো বোঝানো হয়েছে, তুমিও নাকি পুরুষের মতোই। প্রথমবার স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তোমার মন থেকে লজ্জার যে পর্দাকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তা আর কখনই তোমার ভিতরে প্রবেশ করেনি। ফলে সমান সমান একটা নীতিতে তোমার বেড়ে ওঠা। নারী আর পুরুষ— একই তো।

এসব তো তোমার ঘরের অবস্থা। এবার বাইরের চিত্রটা একটু দেখে আসি চলো। একটা ছেলের জন্য তোমার পর্যন্ত পৌঁছানোর সব ব্যবস্থাই করে রেখেছে আধুনিক পৃথিবী। আগেকার দিনে তোমাকে পাওয়া কিন্তু এতটা সহজ ছিল না, তোমাকে নীল-খাম-চিঠি লিখতে গেলেও একটা ছেলেকে ১০ বার ভাবতে হতো, মারধরের আশঙ্কা করতে হতো। আর আজ? আজ তুমি নিজেই পুরুষকে লিখে উত্তরের আহ্বান করছ! নিজেই নিজেকে তুলে দিচ্ছ তার হাতে!

যখন তুমি নিজের নারীত্ব সম্পর্কে নিতান্ত অজ্ঞ অবস্থায় বাইরের দুনিয়ায় গিয়েছ, নানা কৃত্রিম বা বাস্তব চিত্র দেখতে কেবল শুরু করেছ, তখন তোমার সামনে নারীত্ব সম্পর্কে হরেক কিসিমের ধ্যানধারণা তুলে ধরা হলো।

* গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা দিয়ে কেউ বোঝাতে চাইল— তুমি মূলত একটা অনুভূতি, যাকে অনুভব করতে সারা পৃথিবী ছুটে আসে।

* কেউ বলল: না, তুমি অনুভূতি নও; তুমি হলে একটা পাখি, যার ইচ্ছামতো আকাশে উড়ে বেড়ানোর অধিকার আছে।

* কেউ এসে বলল, পাখি হলে হারিয়ে যেতে পারো; তুমি হলে শিকারি। তুমি নিজেই অন্য পাখিদের পোষ মানিয়ে রাখো।

* কেউ বলল, তুমি একটা যন্ত্র, যাকে চালনা করা না হলে সম্পদের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে।

* কেউ তো সরাসরি তোমাকে পণ্যই বলে দিল, প্রয়োজনের সময়ে যাকে ব্যবহার করা হয়।

* অনেকে বলল, তুমিও পুরুষ; তোমারও পুরুষের মতোই সামর্থ্য আছে।

* কিন্তু কেউ আবার বলল, তুমি নারীও নও, পুরুষও নও; তুমি হলে একটা প্রয়োজন মাত্র, ইচ্ছামতো যার স্বাদ নেয়া যায়।

* আবার কেউ তোমাকে নিজের দিকে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে বলল, তুমি ছায়া, যাকে কখনো ধরা যায় না। কেউ বলল, তুমি পাহাড়, যাকে জয় করতে হয়।

* কেউ আবার বলল, তুমি আকাশ, যার মধ্যে মানুষ নিজেকেই হারিয়ে ফেলে।

* কেউ এসে বলল, তুমি পৃথিবী, তোমার ভিতরে হাজারটা উপকারী উপাদান আছে। তাই তুমি সবাইকে সমানভাবে সুখী করতে পারো।

* আবার কেউ বলল, না, তুমি হলে মহাশূন্য, যার রহস্য কেউই বুঝতে পারে না।

এত এত বলাবলির ভিড়ে আর হরেক রকম প্রদর্শনীর রঙিন চিত্র দেখে তুমি যে নিজেকে হারিয়ে বসবে, তা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু তুমি কি জানো, এসব বিভিন্ন মানসিকতার নারীরা আলাদা আলাদা ঢঙে নিজেকে উপস্থাপন করে তোমাকে যা কিছু বলছে, সেগুলো মূলত তাদের ভাষা নয়? কেউ নিজের লাভের জন্য তাদের দিয়ে বলাচ্ছে। তুমি কি জানো, তাদের এভাবে আকাশে উড়তে পারাটা আদৌ কোনো ‘স্বাধীনতা’ই নয়? তারা হলো একদল শিকারির ছেড়ে দেয়া পোষা পায়রা, যারা অন্য পায়রাদের আকৃষ্ট করে শিকারির ফাঁদে টেনে নিয়ে যায়। এভাবেই ঘরের উদাসীনতা আর বাইরের এসব আলোচনা, প্রদর্শনী, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র আর ফাঁদগুলো মিলেমিশে তোমার ভিতরের সত্তাকে কেড়ে নিয়েছে। তুমি নিজেও বুঝতে পারোনি যে, কখন তারা একটু একটু করে তোমার সমস্ত সত্তাকে বন্দি করে ফেলেছে তাদের কথার জালে! তুমি তাদের দেখানো জীবন পেতে গিয়ে নিজেকেই বঞ্চিত করেছ; নারীসত্তাকেই বিকশিত হতে দাওনি। সবমিলিয়েই আজ তুমি অসুখী। নিজেকে হারানোর কারণেই এত যন্ত্রণা।

তুমি আসলে কী? তোমার ভালো আসলে কীসে সেটা সবচেয়ে ভালো তিনিই জানেন, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। এই বসুন্ধরার অফুরন্ত নিয়ামত দিয়ে তোমাকে একটি স্বাধীন সম্ভাবনাময় সত্তা বানিয়েছেন। তুমি তাকে ছেড়ে যেখানেই নিজের ভালো খুঁজবে কেবল প্রতারিত হবে। তাঁর দেখানো পথেই কেবল তোমার সত্যিকার শান্তি ও সমৃদ্ধি। সেটা হলো সিরাতে মুস্তাকিম। চিরশান্তির ঠিকানা ইসলাম।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ