ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আল্লাহ নিজে যখন বান্দার সংশোধনের দায়িত্বে!

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৬

আপনার পরীক্ষার হলে এসে একজন শিক্ষকের আপনাকে কোন কথা বললে আপনার জন্য সহজ হয়, ‘তুমি সংশোধন করে লেখো’ নাকি ‘তোমার লেখা আমি নিজে সংশোধন করে দেব’, কোনটি? নিশ্চয়ই বলবেন, দ্বিতীয়টা বললে সহজ হয়। কারণ নিজে সংশোধন করতে গেলে ভুলটা কোথায় হচ্ছে তা সর্বপ্রথম জানতে হবে।

তারপর জানতে হবে সেই ভুলের সঠিকটা। অর্থাৎ নিজে এ কাজটা করতে গেলে ভুল থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এজন্য এ কাজটা কঠিন। পক্ষান্তরে, সংশোধন করে দেয়া হলে সেটাতে আর নিজের কিছু করতে হবে না। তখন বলটা আর নিজের কোটায় থাকল না, বলটা সংশোধনকারীর কোটায় দিয়ে দেয়া হলো। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সংশোধন করে দেয়ার বিষয়টি নিরাপদ।

দুনিয়ার কোনো শিক্ষক পরীক্ষার হলে কোনো শিক্ষার্থীকে তার ভুল সংশোধন করে দেয়ার অফার দেন না। কিন্তু রাহমানুর রাহিম যিনি সবসময় বান্দাকে মাফ করার সুযোগ খোঁজেন, যিনি চান বান্দা তার দিকে ফিরে আসুক, যিনি চান বান্দা নিজেকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উপযুক্ত করে গড়ে তুলুক সেই তিনি ঠিকই দুনিয়া নামক এ পরীক্ষার হলে বান্দাকে নিজে শুধরে দেয়ার অফার দিয়েছেন। সুবহানআল্লাহ!

কত বড় বিষয়- ভাবা যায়! এখন এ সুবর্ণ সুযোগ কি আপনি নিতে চাইবেন না? যদি চান তবে আপনাকে এর জন্য দুটো কাজ করতে হবে, মাত্র দুটো কাজ। এ দুটো কাজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (সর্বদা) সত্য কথা বলো। (তাহলে) তিনি তোমাদের জীবনের কর্মকাণ্ড শুধরে দেবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন।’ (সুরা আল-আহযাব: ৭০-৭১)

আল্লাহর ভয় মানে কী?

আপনি যখন সময়মতো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছেন, ফরজ হলে জাকাত সঠিকভাবে আদায় করছেন, মানুষের আমানতদারী, ওয়াদা রক্ষা করছেন তথা ঠিকমতো মানুষের হক আদায় করছেন। আবার, সুদ, হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকছেন, হারাম রিলেশনশিপের মতো সব প্রকার জিনা থেকে বেঁচে থাকছেন সর্বোপরি আল্লাহর সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকছেন তখন এগুলোকেই বলা হয় আল্লাহর ভয়। এই যে সকল হারাম থেকে বেঁচে থাকা এগুলো আপনি কখন করতে পারবেন? যখন আপনি আল্লাহকে ভয় করতে পারবেন।

এই কাজটি করলে কি আমার আল্লাহ খুশি হবেন নাকি অখুশি হবেন জীবনের প্রতিটি কাজে— এ চিন্তা করাকেই বলে আল্লাহর ভয়। মনে রাখবেন, কেবল মুখ দিয়ে ‘আল্লাহকে ভয় করি’ বললেই আল্লাহকে ভয় করা হয় না। কাজে-কর্মে সেটার প্রতিফলন থাকতে হয়। আমি মুখ দিয়ে বলছি আল্লাহকে ভয় করি অথচ নামাজই পড়ছি না, সুদই ছাড়ছি না, জিনা ছাড়ছি না, মানুষের হক ঠিকঠাক মতো আদায় করছি না তবে সেটা ভন্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। এমন ভন্ডদের পরিচয় মানুষের কাছে অপ্রকাশিত হলেও আল্লাহর কাছে ঠিকই প্রকাশিত। আমাদের কার্যকলাপ যেন এমন না হয় যা ভন্ডদের কাঁতারে নিয়ে যায়।

সত্য কথা বলা মানে কী?

সত্য কথা বলা মানে হচ্ছে, মিথ্যা কথা না বলা, মিথ্যার ধারে কাছেও না যাওয়া, এমনকি মজা করেও মিথ্যা না বলা। এ ছাড়া, ন্যায়ের কথা বলা, ন্যায়বিচার করা, বাতিল পরিহার করে হকের পক্ষে থাকা এগুলো সবই হচ্ছে সত্য কথা বলার শামিল।

প্রসঙ্গত, সত্য কথা বলতে হলে কিংবা সত্য কথা বলায় নিজেকে অভ্যস্ত করতে হলে সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকার কোনো বিকল্প নেই। এটা অবশ্যম্ভাবী। আর যারা কোরআন হাদিসের কথা বলে, হক কথা বলে, মানুষকে আল্লাহর পথে আনার জন্য কথা বলে, আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক গড়ে দেয়ার কথা বলে এবং নিজেও সে অনুযায়ী আমল করে তারাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে সত্যবাদী। এমন আল্লাহওয়ালাদের তথা সত্যবাদীদের সোহবতে থাকা নিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (সর্বদা) সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা আত-তাওবা: ১১৯)

আল্লাহর ভয় এবং সত্য কথা বলা- এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আমল করলে পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তার বান্দার গুনাহ মাফ করার পাশাপাশি তার ভুল শুধরে দেবেন। এর থেকে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে! এখন ভুল শুধরে দেবেন- এর মানেটা কী?

ধরুন, আপনি এমন নামাজ পড়েন যে নামাজ জান্নাতে যাওয়ার মতো নামাজ হচ্ছে না, এমন রোজা রাখেন যে রোজা জান্নাতে যাওয়ার মতো হচ্ছে না, আপনি এমনভাবে জাকাত আদায় করছেন যে আদায়ে জাকাতের হক আদায় হচ্ছে না। আপনার অজান্তেই এসব আমলে অনেক ত্রুটি থেকে যাচ্ছে।

এ ছাড়া, আপনি এমন জীবনযাপন করছেন যে জীবনযাপন অগোছালো, যে জীবনযাপনের গন্তব্য জাহান্নাম। এখন ওই দুটি আমলের কারণে আল্লাহ তায়ালা আপনার এ ধরনের আরও যত ভুল আছে সব সংশোধন করে দেবেন, সর্বোপরি জাহান্নামের পথ থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতের পথে চলার ব্যবস্থা করে দেবেন।

কীভাবে এগুলো করবেন? এটা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে হতে পারে আপনাকে কোনো বিজ্ঞ আলেমের সোহবতে থেকে কিংবা কোনো ওয়াজ নসীহত শুনে আপনার ভুল সংশোধনের করার তাওফিক দেবেন। সহজ কথায়, কোনো না কোনোভাবে আল্লাহ সংশোধন করে দেবেনই দেবেন। এটাই আল্লাহর পাক্কা ওয়াদা। আপনাকে শুধু ওই দুটি আমল করে যেতে হবে।

আপনি যদি আল্লাহকে ভয় করে চলেন এবং সবসময় সত্যকে নিজের সঙ্গী বানিয়ে রাখেন তবে আপনাকে জানাচ্ছি ধিৎস congratulations! কারণ অচিরেই আল্লাহ নিজে আপনার কর্মকাণ্ড সংশোধন করে দেবেন এমনকি আপনার গুনাহখাতাও মাফ করে দেবেন। আপনি শুধু আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখুন এবং সত্যের সঙ্গে নিজের বসবাস নিশ্চিত করুন। ব্যাস, এতটুকুই!

নয়াশতাব্দী/আরেজ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ