ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শীতকাল ইবাদতের বিশেষ মৌসুম

প্রকাশনার সময়: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৯

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তে মেতে ওঠে প্রকৃতি। প্রকৃতির পালাবদলে নেচে ওঠে গ্রামগঞ্জের সবুজ মাঠ। সবুজ প্রান্তর। ঋতুচক্রে শীত, সত্যিই মহান স্রষ্টার অপার মহিমা। শীত অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ঋতু। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাছে এ মৌসুম আরও প্রিয়। আর শীতকালকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনের জন্য ঋতুরাজ বসন্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো মুমিনের বসন্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ)

খলিফাতুল মুসলিমিন ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে।

শীতকালে আমরা অধিকহারে ঠান্ডা অনুভব করি এবং গ্রীষ্মকালে আমরা প্রচণ্ড গরম অনুভব করি। এ দুই কালে ঠান্ডা ও গরমের প্রচণ্ডতার তাৎপর্য কী তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে অভিযোগ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে) আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো- তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব করো তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।’ (সহিহ বুখারি)

শীতকাল আল্লাহ তায়ালার দেয়া নিয়ামত ও ইবাদতের বিশেষ মৌসুম। এ মৌসুম যেভাবে ফলফলাদির বিশেষ সিজন ঠিক তেমনি আমলের জন্যও বিশেষ সিজন। কাজেই শীতকালের এ মৌসুমকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য মুমিনের জন্য কিছু উত্তম ইবাদত নিম্নে তুলে ধরা হলো:

শীতকালের রোজা রাখা: ঈমানদারের জন্য শীতকাল বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। হাদিসে এসেছে, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি: ৭৯৫)

শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। তাই শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। তাই কারও যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করে নেয়া। তাছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি একদিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০)

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো: প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে শীত ও শৈত্যপ্রবাহ। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড় কাঁপানো শীতে নাকাল হয় দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর: ০৮)

পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় শীতকালে অনেক গরিব মানুষকে কষ্ট করতে হয়। শীতার্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় বস্ত্র দিয়ে জান্নাতের মহা নিয়ামত লাভে ধন্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি: ২৪৪৯)

আমাদের নিকটস্থ অভাবী মানুষটিকে একটি শীতবস্ত্র কিনে দিয়ে আমরাও পেতে পারি জান্নাতের সেই সবুজ রেশমি পোশাক।

তাহাজ্জুদের সুবর্ণ সুযোগ শীতকাল

শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। কেউ চাইলে পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সালাত পড়তে সক্ষম হতে পারে। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৬)

শীতকালের অজু ও গোসলে সচেতন হওয়া

শীতকালে মানুষের শরীর শুষ্ক থাকে। তাই যথাযথভাবে ধৌত না করলে অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় হয় না। আর অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। গ্রীষ্মকালে মানুষ ইবাদত-বন্দেগি স্বাভাবিকভাবে করলেও শীতকালে কিছুটা অলসতাবোধ করে।

কেউ কেউ আবার শীতের তীব্রতার কারণে মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ কাজাও করে ফেলে।

তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে; এমনকি শীতের মৌসুমে গরম পানি দিয়ে অজু করলেও সওয়াবে কমতি হবে না। শীতের সময় প্রচণ্ড ঠান্ডায় যাতে কেউ অজু করতে অবহেলা না করে, সে কারণে অজু ও নামাজের প্রতি যত্নবান হতে এবং বড় পুরস্কার ও ফজিলতের কথা এভাবে ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী, ‘আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না! যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের

গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেবেন (তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন) আর (আল্লাহর কাছে) তোমাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল! নবীজি (সা.) বললেন, (শীত বা অন্য যে কোনো ঠান্ডার) কষ্টকর মুহূর্তে ভালোভাবে অজু করা।’ (মুসলিম: ২৫১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে শীতকালে ইবাদত বন্দেগি করার তৌফিক দান করুন। আমীন। - লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ