ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গুরুত্ব নেই ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতনে!

প্রকাশনার সময়: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:০১

শরিয়তের পরিভাষায় ইমাম-মুয়াজ্জিন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি উপাধি ও কোরআনি পরিভাষা। ইমামতি-মুয়াজ্জিনি নবী-রাসুল, সাহাবি এবং সময়ের শ্রেষ্ঠ, যোগ্য ও নেককার লোকদের কাজ। ইমাম-মুয়াজ্জিন মানুষের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত নামাজ সুন্দর ও সুচারুরূপে আদায়ের গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ইমাম-মুয়াজ্জিন মানে কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকুরিভুক্ত নন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কর্মচারীও নন। তাই ইমাম-মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সম্মানসূচক সুন্দর সভ্য-ভদ্র ব্যবহার করা জরুরি।

ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন

স্থান ও জায়গার এবং মসজিদের কোয়ালিটির ভিন্নতায় নানা মান ও ধরনের বেতন-ভাতা চালু আছে। তবে শহরে ইমাম সাহেবদের সাধারণত বেতন বা সম্মানি আট হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০-৩০ হাজারের মধ্যে। আর মুয়াজ্জিনের সর্বোচ্চ বেতন বা সম্মানি ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে। অপরদিকে গ্রামগঞ্জের মসজিদের বেতন-ভাতা ভদ্র সমাজে উল্লেখ না করলেই ভদ্রতা বজায় থাকে, ব্যাপারটা অনেকটা এ টাইপের।

ইমাম-মুয়াজ্জিন সবার কাজের সহযোগী

ইমাম-মুয়াজ্জিন আমাদের জীবনের ঘনিষ্ঠ নানা বিষয়ের একান্ত হিতাকাঙ্ক্ষী ও চরম-পরম সহযোগী। মুয়াজ্জিন সাহেব তার শত ব্যস্ততার মধ্য দিয়েও দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য নির্ধারিত সময়ে মানুষকে নামাজের কথা স্মরণ করে দিতে আজান দিয়ে থাকেন। আর ইমাম-খতিবগণ, আমাদের জীবনের নানা জরুরি বিষয় নিয়ে (তথা জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু অবধি সব বিষয়ে) মসজিদের মিম্বরে বয়ান ও খুতবার মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অত্যন্ত জোরালোভাবে ও দরদের সঙ্গে দ্বীনের কথা বুঝিয়ে থাকেন। আল্লাহর বান্দাদেরকে সচেতন ও সতর্ক করেন।

মসজিদ কমিটি

স্কুল-কলেজ বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত খরচের চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার খাতটাকে সব থেকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়, আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মসজিদের ক্ষেত্রে একেবারে বিপরীত চিত্র। এখানে মসজিদের উন্নতির নামে লাখ লাখ টাকার টাইলস, লাইটিং ইত্যাদি সব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। ইদানিংকালে তো এয়ার কন্ডিশনের নামে আয়েশি ব্যবস্থাপনারও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়, শুধু গুরুত্ব দেয়া হয় না ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবের বেতন-ভাতার বিষয়ে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে ঘোড়ার কথা কে না জানে, সবাই জানে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিটা জিনিস ও বস্তুর দাম আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। আর চক্রাকারে দিন দিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। যা জনজীবনকে চরমভাবে নাভিশ্বাস করে তুলছে, এহেন পরিস্থিতিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বেতন-ভাতার বিষয় নিয়ে তাদের যথেষ্ট আন্তরিক হওয়া সময়ের অপরিহার্য দাবি ছিল। কিন্তু তারা সেভাবে বিষয়টিকে আমলে নিচ্ছে না বা নেয় না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিকও বটে।

ইমাম-মুয়াজ্জিনের সম্মান

ইমাম-মুয়াজ্জিন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ও নববী পেশা। তাই ইমাম-মুয়াজ্জিনকে যথাযথ সম্মান করা প্রতিটি মুসলমান ও মুসল্লিদের ওপর নৈতিক দায়িত্ব। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ৩৬০)

বোঝা গেল, ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য সময়ের চাহিদা অনুপাতে মানসম্মত বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা তার সম্মানের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যেটাকে আমরা গুরুত্বের নজরে দেখি না।

কাল কিয়ামতে দায়িত্বশীলরা জিজ্ঞাসিত হবে

প্রতিটি মসজিদের কমিটি আছে, তারা ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবের অর্থনৈতিক এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন কিনা কাল কিয়ামতের ময়দানে সে ব্যাপারে তারা জিজ্ঞাসিত হবে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর (পরকালে) নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে।

সুতরাং জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল লোক, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি কোনো গোলাম বা চাকর-চাকরাণীও তার মনিবের ধন-সম্পদের ওপর একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব, সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল আর তোমাদের প্রত্যেককেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।’ (বুখারি: ৭১৩৮)

ইমাম-মুয়াজ্জিন যেহেতু মসজিদ কমিটির আওতায়। অতএব তারা কি ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা ও সার্বিক সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করেছেন কিনা সে ব্যাপারে তারা জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হবেন।

পরিশেষে মসজিদের এই দেশে, প্রতিটি মসজিদ কমিটির কাছে উদাত্ত আহ্বান থাকবে, তারা যেন ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবদের জন্য মানসম্মত বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করে, তাদের অর্থনৈতিক এ দুরবস্থা দূরীকরণে এগিয়ে আসেন। যা অপরিহার্য দায়িত্বও। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শুভবুদ্ধি দান করুন।-লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদ্রাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ