ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গৌরব ও ঐতিহ্যের আল-আকসা

প্রকাশনার সময়: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৫

আকসা আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের হারানো গৌরব। আমাদের সোনালি অতীতের এক সুরম্য প্রাচীরের স্মৃতিচিহ্ন। আমাদের প্রেরণার পুরো অংশজুড়ে রয়েছে এর নানা রক্তিম ও আত্মত্যাগের সরব উপস্থিতি। আমরা ভুলে গেলেও আকসা আমাদের ভুলবে না, কারণ আমরা তার বুকে এঁকেছি স্বপ্নের সৌন্দর্য এবং বিছিয়েছি কৃতিত্বের জায়নামাজ। চুমু দিয়েছি তার পবিত্র গালে।

শুকরিয়া ও সাম্যের গল্প তো আকসা দিয়েই সূচনা। আনন্দ ও বিজয়েরা এখানে এসে যাত্রা শুরু করে। যতদিন আমরা তার পাশে ছিলাম কালেমা খচিত পতাকা হাতে, কাঁধে ঝুলিয়ে তলোয়ার, বুকে কোরআনের অনুপ্রেরণা, ততদিন কোনো নাপাক হাত তাকে লাঞ্ছিত করা তো দূরে থাক ছু্ঁয়ে দেখারও সাহস পর্যন্ত করেনি। আজ আমরা সব ভুলে একটু সুখের জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি, পেয়েছি কতটুকু এর হিসেবে অনেক গাফিলতের গল্প আছে।

আজ কুদসের পবিত্র জায়নামাজে হাজারটা শকুন বসে বসে আবাবিলের আত্মলীনের গল্প লিখে। টকটকে লাল রক্তে অঙ্কন করে চিনেমাটির হলুদ পাহাড়। শিশুর কোমল হাতে তুলে দেয় গ্রেনেডের কমলালেবু। খেলেও মৃত্যু, না খেলেও স্বজন হারানোর শোকগীতি কপালে জুটবেই। যাতে মিশে আছে একটি ঘুমন্ত জাতির অকাতরে প্রাণ বিলানোর জীবন্ত বিলাপ। কে বা কারা হারিয়ে যায় মাটির গহ্বরে, ধ্বংসস্তূপের ভাগাড়ে; তার খোঁজ রাখা তো এক নির্জীব মানুষের পুরোনো আশাই বলা চলে।

সেখানে প্রতিটি মানুষের জন্ম আগুনের ভীষণ উত্তাপের ভিতর। প্রতিটি লাশ যেখানে দিনমান ঘুরে বেড়ায় জাগৃতির মশাল হাতে। বলে যায়— না জানা অনেক মানচিত্রে রেখে আসা ভাইবোনের রক্তাক্ত বিচ্ছিন্ন দেহের টুকরো কাহিনি। কত জামায় এখনো লেগে আছে শতাব্দীর জঘন্য ধৃষ্টতার নাপাক ঘ্রাণ, তা বলে কয়ে শেষ করার মতো নয়।

এই ফিলিস্তিনি, এই আকসা আজও কাঁদে— যেভাবে কাঁদে আকাশ, ঝরনা-নির্ঝরণী। কিন্তু সেই কান্না শুনে খোলে না আয়েশী ঈমানি হূদয়ের বদ্ধ কপাট! এমনকি কোনো বিগলিত কোমল আত্মাও। যাদের হুংকারে কেঁপে উঠত পারস্য ও কিসরার মহাসিংহাসন। খসে পড়ত মনোমুগ্ধকর গম্বুজ-মিনারা; আজ তারা পালিয়ে বেড়ায় বিড়ালের মিউ মিউ ডাকে। শিয়ালের রাতিগানে। কী অসহ্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে মুমিনের সিংহ হূদয়ে। ভাবা যায়? অনুমিত হয় কি তার পরিমাণ কত? কার কার কাছে সাহায্য চাইবে অসহায় এই মজলুম মাুনষগুলো, কার কাছে বেদনাহত মনের আকুতি জানাবে? কবে জেগে উঠবে সালাহউদ্দিনের জাগ্রত চেতনার বাজপাখিরা, কার হাত ধরে ফের কুদসের পাক জমিনের ইজ্জত রক্ষা পাবে? জানা নেই, অন্তত কোনো গাফেল কলিজায় এ নির্মল চিন্তা জাগবে না!

আজ দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি ইহুদি ও হামাসের মধ্যকার বেঁধে যাওয়া রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। থামেনি দালাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা প্রচারণা। পশ্চিমা বিশ্বে যেন যুদ্ধের সরব কারবার, অস্ত্রের ঝনঝনানি। সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ওরা তাদের জাতীয় দায়িত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর আজ। ইসরায়েল হোক আগামী সময়ের বিশ্ব মোড়ল, এটাই হয়তোবা ওদের শেষ চাওয়া বা আখেরি আবদার। সৈন্য, খাদ্য, রসদ, অস্ত্র সর্বস্ব দিয়ে ওরা কুফরের ভীত মজবুত করার কাজে নিয়ত অধ্যবসায় করে যাচ্ছে।

অপরদিকে মুসলিম নামধারী আরব সমাজ মৌখিক কিছু বিবৃতি দিয়েই দায় সারছে। যা কখনো মুসলিম দাবিদার মানুষের কাজ ও আচরণ থেকে পারে না। যদি শক্তির বিবেচনা ও ব্যাপ্তির হিসাব কষা হয়, তাহলে একটা কথা খুব দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায়— আহত মুসলিম বিশ্বে এখনো কাফেরদের কোণঠাসা করে রাখার মতো অনেক প্রাণশক্তি মজুত রয়েছে। কিন্তু উদাসীনতা, অবহেলা এতটাই বেপরোয়া ও নিস্পৃহতার পরিচয় দিচ্ছে, যা আমাদের ঐতিহ্যের দেয়াল ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। আজ যদি মুহাম্মদ আল-ফাতিহ বেঁচে থাকতেন, তবে হতাশার সুর এই পর্যন্ত পৌঁছার আগেই নতুন দিনের সূর্য উদিত হতো ফিলিস্তিনের রক্তিম আকাশে। আহ, দুর্ভাগা মুসলমান, ওরা আজ ভুলে গেছে তামাম গৌরবদীপ্ত ইতিহাস-ঐহিত্য। খুলে ফেলেছে মহিমার গোলাপি চাদর, সাম্য ইনসাফের টুপি। তাই এত দুর্দশা আমাদের এ নির্মল বাতাসে। বিশ্ব মুসলিমের প্রতি ফিলিস্তিনের মানুষের হাজারটা ক্রোধলিপি, অসংখ্য ধিক্কার জমা হয়েছে। যত ধরনের বাজে মন্তব্য হতে পারে সব তাদের কপালে নিক্ষেপ করেছে অসহায় মুমিন মুসলমান। আরও কি ঝিমিয়ে কাটানোর মতো ফুরসত আছে? আছে কি দোটানার সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার সময়? আর এখনই জাগতে হবে, হাজিরা দিতে হবে উষার সতেজ প্রহরে কুদসে, আল আকসার মাটির গালিচায়।

চলুন, ইতিহাস গড়ি নতুন কোনো ইতিহাস। ভেঙে ফেলি পেতে রাখা আত্মঘাতী বোমার ব্যারাক। জ্বালিয়ে দিই ওদের নিদ্রার শেষ আশ্রয়টুকু। নতুবা আরও ভয়াবহ কোনো দুর্বিপাক আমাদের বুকে নেমে আসতে পারে!

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়াতুল উস্তায শহীদুল্লাহ (রহ.), মোহাম্মদপুর, ঢাকা

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ