নেক আমল অর্থ ভালো কাজ। কোরআন ও সুন্নাহর ভাষায় আমলে সালেহ। শরিয়তের বিধান মতো জীবনযাপন ও ইবাদতের নিয়তে করা সব কাজ নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত। মহান আল্লাহ প্রত্যেকটি নেক আমলের প্রতিদান আখিরাতে দেবেন। তবে এমন কিছু নেক আমল আছে যার প্রাথমিক পুরস্কার দুনিয়াতে প্রদান করেন। নির্বাচিত এমন কিছু নেক আমল নিম্নরূপ:
নামাজ আদায়ের পুরস্কার
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইবাদাত। এটা নারী পুরুষ সবার ওপর ফরজ। নিয়মিত নামাজ আদায়ে রিজিকের সংকট দূর হয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন। নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। বরং আমি আপনাকে রিজিক দেই। আর আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকর।’ (সুরা ত্বহা: ১৩২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদত কর, আমি তোমার বক্ষকে ঐশ্বর্যশালী ও অমুখাপেক্ষী করব। আর যদি তুমি এরূপ না কর তাহলে আমি তোমার বক্ষকে ব্যস্ততা দ্বারা পূর্ণ করব এবং অন্যের প্রতি তোমার নির্ভরশীলতাও কখনো বন্ধ করব না।’ (মুসনাদ আহমদ: ২/৩৫৮, তিরমিজি: ৭/১৬৬, ইবনে মাজাহ: ৪১০৭)
শোকর করার পুরস্কার
আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের শোকর করা মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ শোকর করতে উৎসাহিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম: ৭)
শুকরিয়া আদায় করার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সর্বোত্তম জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বোত্তম প্রার্থনা (কৃতজ্ঞতা প্রকাশক বাক্য) আলহামদুলিল্লাহ।’ (জামে তিরমিজি: ৯/৩২৪ সুনানে নাসায়ি: ৬/২০৮ ইবনে মাজাহ: ২/১২৪৯)
তাওবা-ইস্তেগফারের পুরস্কার
দৈনিক তাওবা ইস্তেগফার বেশি বেশি করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। জীবন সংসারে বরকত দান করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমরা যদি ক্ষমা প্রার্থনা করো তিনি তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নূহ: ১০-১২)
এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন। সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (নাসায়ি: ৩৮১৯, আবু দাউদ: ১৫১৮)
ইশরাক নামাজের পুরস্কার
ফজরের পর সূর্যোদয় থেকে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর এই নামাজের সময় শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সময় থাকে। এই নামাজ আদায়কারীর সারা দিনের সমস্ত প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ১০০৯)
হাদিসে আরও এসেছে, আবু দারদা ও আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি দিনের প্রথমাংশে আমার জন্য চার রাকআত নামাজ পড়, আমি দিনের শেষাংশে তোমার জন্য যথেষ্ট হব। (অর্থাৎ দিনের শেষাংশে তোমার নেক মাকসাদ পূর্ণ করব) (আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ)
দান-সাদকার পুরস্কার
পবিত্র কোরআনে দান-সাদকার প্রতি অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটার পুরস্কার পৃথিবীতে নগদ পাওয়া যায়। আগুনে পোড়া, পানিতে পড়া, হঠাৎ এক্সিডেন্ট ইত্যাদি বিপদ আপদ থেকে বাঁচা যায়। প্রকাশ্য-গোপন দান করার বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্য দান সাদকা কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরও অতি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৭১) আনাস থেকে বর্ণিত হাদিস এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সাদকা অপমৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি: ৬৬৪, ইবনে হিব্বান: ৩৩০৯)
একটি সহজ আমলের পুরস্কার
ইমাম বগভী (রহ.)-এর নিজস্ব সনদে বর্ণিত এক হাদিসে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর সুরা ফাতেহা, আয়াতুল কুরসী, সুরা আলে ইমরানের ১৮ নম্বর আয়াত এবং ২৬ ও ২৭ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করে, আমি তার ঠিকানা জান্নাতে করে দেব, আমার সকাশে স্থান দেব, দৈনিক ৭০ বার তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেব, তার ৭০টি প্রয়োজন মিটাব, শত্রুর কবল থেকে আশ্রয় দেব এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাকে জয়ী করব।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন: ১৭১)
উল্লিখিত আমলগুলো বেশি বেশি করে দুনিয়াতে নেক আমলের পুরস্কার অর্জন করা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ