ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জিকিরের ১০ ফায়দা

প্রকাশনার সময়: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৮

কখনও কখনও হূদয় শুষ্ক ভূমির মতো রুক্ষ হয়ে যায়। কখনও হয়ে যায় পাথরের চেয়েও কঠিন। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, ভালো কাজে আর মন বসে না। কারণ হূদয়ের কঠোরতা মানুষের মনকে পরিবর্তন করে দেয়। মানুষের থেকে আত্মিক প্রশান্তি কেড়ে নেয়। মানসিক অস্থিরতা আর ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। সত্য গ্রহণ থেকে মানুষকে বিরত রাখে।

জীবন চলার পথে মানুষ যখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, হূদয়ের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে ইসলাম তখন মানুষকে বেশি বেশি জিকির করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। কারণ মানুষ যত বেশি আল্লাহর জিকির করবে, তত বেশি তার হূদয় বিগলিত হবে এবং তার অশান্ত হূদয়টা শান্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রা’দ: ২৮)

আরও বলা হয়েছে, ‘যারা ঈমানদার তারা এমন যে, যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে।’ (সুরা আনফাল: ২)

জিকিরের নানাবিধ ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নিচে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ফজিলতের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

১. জিকির অন্তরের মলিনতা দূর করে

শয়তান মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। আর পাপের কারণে মানুষের অন্তর মলিন হয়ে যায়। জিকিরের মাধ্যমে হূদয়ের এই মলিনতা দূর হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক বস্তু পরিষ্কার করার উপকরণ আছে। আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হলো আল্লাহর জিকির’। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৩২৭)।

২. জিকিরকারীকে আল্লাহও স্মরণ করেন

রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার সঙ্গে ওইরূপ ব্যবহার করি, যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তার আলোচনা করি।’ (মুসলিম: ২৬৭৫)

৩. জিকিরবিহীন থাকা মৃতের সমতূল্য

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মতো।’ (অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে জীবিত। আর যে স্মরণ করে না সে মৃত) (বুখারি: ৬৪০৭)

৪. জিকিরকারী আরশের নিচে ছায়া পাবে

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ... ওই ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে। (বুখারি: ৬৪৭৯)

৫. জিকিরকারীকে আল্লাহর রহমত ঢেকে নেয়

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং তাদের ওপর ছাকিনা নাজিল হয়, আর আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন।’ (মুসলিম: ৭০০)

৬. জিকির নাজাত দানকারী

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর জিকিরের চেয়ে আজাব থেকে অধিক নাজাত দানকারী আর কোনো আমল নেই।’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ১৬৭৪৫)

৭. ক্ষমার ঘোষক ক্ষমার ঘোষণা করে

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কিছু মানুষ আল্লাহর জিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেয়া হয়েছে এবং তোমাদের গোনাহসমূহ নেকিতে পরিণত হয়েছে।’ (শুআবুল ঈমান: ৫৩৪)

৮. জিকির শ্রেষ্ঠ আমল

আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের কথা বলব না, যা তোমাদের সমস্ত আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদাকে আরও বৃদ্ধিকারী, আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা খরচ করা থেকে এবং জিহাদের ময়দানে শত্রুর প্রাণ নেয়া ও শত্রুর হাতে প্রাণ দেয়া থেকেও উত্তম?’ সাহাবিরা বললেন, ‘অবশ্যই বলুন’। তিনি বললেন, ‘তা হলো আল্লাহর জিকির’। (তিরমিজি: ৩৩৭৫)

৯. জিকিরকারীর সঙ্গে আল্লাহ থাকেন

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার জিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সঙ্গে থাকি। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সঙ্গে থাকে)।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১০৯৬৮)

১০. জিকিরের জন্য আফসোস করবে

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে।’ (শুআবুল ঈমান: ৫১২)

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ