ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাওদা (রা.)-এর সৌভাগ্যময় বিয়ে

প্রকাশনার সময়: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৬
ছবি : সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রা.)-এর মর্যাদা কী পরিমাণ, তা সাহাবিরা ভালো করেই জানতেন। কিন্তু তারপরও তারা এ আশা করতেন যে, যদি আল্লাহতায়ালা রাসুল (সা.)-এর দুঃখ লাঘবকল্পে একটা ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু কেউই বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর নবী (সা.)-কে বলার সাহস পাচ্ছিলেন না।

উসমান ইবনে মাজউন রাখি-এর স্ত্রী খাওলা বিনতে হাকিম একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গেলেন। নানা কথার ফাঁকে এক সময় তিনি বলে ফেললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনি আবার বিয়ে করুন। রাসুল (সা.) প্রশ্ন করেছেন, পাত্রী কে? খাওলা বললেন, বিধবা এবং কুমারী-দুই রকম পাত্রীই আছে। এখন আপনি যাকে পছন্দ করেন তার ব্যাপারে কথা বলা যেতে পারে। তিনি আবার জানতে চাইলেন, পাত্রী কে? খাওলা বললেন, বিধবা পাত্রী সাওদা বিনতে যামআ আর কুমারী পাত্রী আবু বকরের মেয়ে আয়েশা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আপনি গিয়ে তাদের সঙ্গে আমার ব্যাপারে আলাপ করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সম্মতি পেয়ে খাওলা গেলেন সাওদার গৃহে। সাওদার পিতা তখন জীবনের প্রান্তসীমায়। পার্থিব সব কর্মতৎপরতা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিয়েছেন। খাওলা (রা.) সাওদা (রা.)-এর কুশল বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছ, সাওদা? সাওদা (রা.) দুঃখভরা কণ্ঠে বললেন, কেমন আর থাকব বল। খাওলা (রা.) বললেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তোমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠিয়েছেন।

এ কথা শোনামাত্র খুশিতে চমকিত হয়ে ওঠেন সাওদা (রা.)। তার মনোজগতে আনন্দের ঢেউ খেলতে আরম্ভ করে। চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের ছাপ। তবে কি স্বপ্নে দেখা সেই কথা সত্যিই হচ্ছে। আল্লাহ তাকে সত্য স্বপ্নই দেখিয়েছেন! আল্লাহ তাকে এমন অনুপম সম্মানে ভূষিত করবেন। তিনিই হতে যাচ্ছেন উম্মুল মুমিনীন! চেহারাজুড়ে তার আনন্দের ফল্গুধারা। উচ্ছ্বাসভারা চোখে তিনি তাকান খাওলা (রা.)-এর দিকে। তিনি বললেন, আমার আব্বা আসছেন, তাকে এ বিষয়ে বল।

খাওলা তার পিতার নিকট উপস্থিত হয়ে ‘আনঈম সাবাহান’! (সুপ্রভাত) বলে জাহিলি রীতিতে সম্ভাষণ জানান।

বৃদ্ধ প্রশ্ন করেন— কে তুমি? খাওলা উত্তর দেন, আমি খাওলা বিনতে হাকিম। বৃদ্ধ খাওলাকে স্বাগত জানিয়ে কাছে বসান। খাওলা বিয়ের পয়গাম পেশ করেন এভাবে: মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব সাওদাকে বিয়ের প্রস্তাব করেছেন। বৃদ্ধ বলেন, এ-তো অভিজাত কুফু। তোমার বান্ধবী সাওদা কী বলে? খাওলা বলেন, তার মত আছে। বৃদ্ধ সাওদাকে ডাকতে বলেন।

সাওদা উপস্থিত হলে বলেন, আমার মেয়ে, এই মেয়ে (খাওলা) বলছে, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাকে পাঠিয়েছে। অভিজাত পাত্র। আমি তার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিতে চাই, তুমি কি রাজি? সাওদা বলেন, হ্যাঁ রাজি। বৃদ্ধ খাওলাকে বলেন, তুমি যাও, মুহাম্মাদকে ডেকে আন। মহানবী (সা.)-এর পত্নী হওয়ার গৌরব ও মর্যাদা লাভ করতে চলেছেন তার প্রিয় কন্যা। সানন্দে সম্মতি দিয়ে চারশ দিরহাম মোহরানার বিনিময়ে তিনি নিজেই বিয়ে পড়ান।

সাওদার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে যামআ এ বিয়ের সময় পর্যন্ত অমুসলিম ছিলেন। বিয়ের সময় তিনি ছিলেন মক্কার বাইরে। বিয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর জানতে পেরে ক্রোধে উত্তেজনায় ফেটে পড়েন। দুঃখ ও ক্ষোভে মাথা ঠুকতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি একজন আদর্শ মুসলমান হন। তিনি আমরণ তার সেই দিনের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ